জার্মানিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় মূলত চতুর্থ শ্রেণি অবধি৷ সেই শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল সেদিন৷ ক্লাস টিচারের দাবি, অংকে ‘কিছুটা দুর্বল’ সে৷ মাসখানেকের মধ্যে সেই দুর্বলতা কাটাতে না পারলে জার্মানিতে সবচেয়ে মেধাবীদের স্কুল হিসেবে পরিচিত ‘গিমনাজিউমে’ যাওয়া সহজ হবে না তার পক্ষে৷
বিষয়টি নিয়ে খানিকটা দুশ্চিন্তা রয়েছে ছোট্ট শিশুটির মনে৷ তার পরিবারের সদস্যরাও চিন্তিত৷ কিন্তু বাসায় এক পরীক্ষায় দেখা গেল, চতুর্থ শ্রেণির সবচেয়ে কঠিন অংকগুলোও শিশুটি অবলীলায় করে ফেলছে!
কিন্তু শ্রেণীকক্ষে সম্ভবত কোনো এক অজানা কারণে সে কিছুটা ধীর আচরণ করে এবং জানা অংকও কখনো কখনো ভুল করে বসে৷
শিশুটির মানসিক অস্থিরতা আমি বুঝতে পারি৷ সে নিজেই কয়েকবার বলেছে, এত তাড়াতাড়ি কেন আমি কোন মাধ্যমিক স্কুলে যাবো সেটা ঠিক করতে হবে৷ এই ব্যবস্থা ভালো না৷ আরেকটু সময় দিলে কী হয়!
ভবিষ্যত মাধ্যমিক স্কুল নিয়ে দুশ্চিন্তা তার একার নয়৷ কয়েক বছর আগে এক গবেষণায় দেখা গেছে, জার্মানিতে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অনেক শিশুই প্রচণ্ড চাপে থাকে৷ ভবিষ্যতে কোন স্কুলে যেতে পারবে সেই চাপে শিশুদের রাতে ঘুম হয় না ঠিকমতো, মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে৷ অবস্থা এমন যে অনেক শিশুর এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিতে হয়৷
জার্মানির স্কুল ব্যবস্থা অনেকটাই দেশটির ১৬টি রাজ্যের নিজস্ব নিয়মনির্ভর৷ তবে মোটাদাগে তিন ধরনের মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে দেশটিতে৷ এখানে চতুর্থ শ্রেণিতেই নির্ধারিত হয় কোন শিশু কোন স্কুলের জন্য উপযুক্ত৷
সবচেয়ে মেধাবীদের স্কুল হিসেবে পরিচিত ‘গিমনাজিউম’৷ এই স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণি অবধি শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারে৷
তারপরের ধাপের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ‘রেয়ালশ্যুলে’৷ সাধারণত দশম শ্রেণিতে স্কুলজীবন শেষ হয় এই শিক্ষার্থীদের৷ এরপর তারা বিভিন্ন চাকুরির জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে ‘ট্রেইনিশিপে’ অংশ নিতে পারে৷ তারা ভবিষ্যতে এমন অনেক চাকুরি করতে পারবেন যেগুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেওয়ার প্রয়োজন নেই৷
দুর্বল হিসেবে বিবেচিত শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ‘হপ্টশ্যুলে’৷ এই স্কুলে শিক্ষার্থীদেরকে নয় বা ১০ বছর পর্যন্ত মূলত ‘প্র্যাকটিক্যাল’ এবং ‘ভকেশনাল ট্রেনিং’ দেয়া হয়৷ এরপর তারা চাকুরির উপযুক্ত হয়৷
এই তিন ধরনের স্কুলের সমন্বয়ে আবার একটা স্কুল রয়েছে যেটিকে বলা হয় ‘গেজাম্টশ্যুলে’৷ সব ধরনের শিক্ষার্থীরা এই স্কুলে ভর্তির জন্য উপযুক্ত৷ কিন্তু এই স্কুলের চাহিদা ক্রমশ বাড়লেও ধারণক্ষমতা বেশ কম৷ ফলে বড় শহরগুলোতে অনেক শিক্ষার্থী চাইলেও গেজাম্টশ্যুলেতে ভর্তির সুযোগ পায় না৷
এসবের বাইরে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য আলাদা স্কুল রয়েছে৷
জার্মানিতে হোম স্কুলিং নিষিদ্ধ৷ অর্থাৎ শিশুদের অবশ্যই কোন না কোন স্কুলে যেতে হবে৷ আর চতুর্থ শ্রেণিতে একজন শিশু কোথায় যাবে সেটা নির্ধারিত হলেও পরবর্তীতে শিক্ষার্থীর মেধা অনুযায়ী স্কুলের ধরন বদলানোর সুযোগ রয়েছে৷ কিন্তু সেই প্রক্রিয়া সহজ নয়৷
একটি শিশুর স্কুলের ধরন নির্ধারণের ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও মতামত দেয়ার সুযোগ আছে৷ তবে সামগ্রিকভাবে সেই মতামত কতটা গুরুত্ব পায় সেটা নিয়ে বির্তক রয়েছে৷
জার্মানির স্কুল ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, চতুর্থ শ্রেণি নয়, বরং ষষ্ঠ শ্রেণিতে গিয়ে একটি শিশু কোন মাধ্যমিক স্কুলে যাবে সেটা নির্ধারণ করা উচিত৷ এতে করে শিশুরা আরো কিছুটা বেশি সময় পাবে এবং তাদের উপর থেকে চাপও কমবে৷