চলচ্চিত্রে সমকামিতার শত বছর
হলিউডের চলচ্চিত্রে সমকামী চরিত্রে অভিনয় এখন খুব সাধারণ ঘটনা৷ শত বছর আগে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে রুপালি পর্দায় সমকামিতা নিয়ে আসেন নির্মাতারা৷ অভিনয়ে সাহস দেখান শিল্পীরা৷ ১৯১৯ সালে প্রথমবার চলচ্চিত্রে বিষয় হয়ে আসে সমকামিতা৷
ডিফারেন্ট ফ্রম দ্য আদার্স (১৯১৯)
সমকামিতা নিয়ে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ডিফারেন্ট ফ্রম দ্য আদারস৷’ জার্মানির আইনে সমকামিতা ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ ১৯১৯ সালে পরিচালক রিচার্ড অসওয়াল্ড এই ছবি দিয়েই আইনটি প্রত্যাহারের দাবি জানান৷ ওই বছর বার্লিন মুভি থিয়েটারে ছবিটির প্রিমিয়ারের পর হৈ চৈ পড়ে যায়৷ প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন অনেকে৷ তখন সেন্সর বোর্ড না থাকায় ছবিটি নিষিদ্ধ করা যায়নি৷ তবে ছবি মুক্তির কয়েক দশক পর, ১৯৯৪ সালে আইনটি বাতিল করা হয়৷
দ্য চিলড্রেন’স আওয়ার (১৯৬১)
স্কুল শিক্ষকের ভূমিকায় দেখা যায় অড্রে হেপবার্নকে ৷ তার প্রেমে পড়েন সহকর্মী শার্লি ম্যাকলেইন৷ মার্থা চরিত্র নিয়ে শার্লি অভিনয় করেন সমকামী নারীর ভূমিকায়৷ নির্মাতা উইলিয়াম ওয়াইলারের সমকামিতা নিয়ে কাজের দ্বিতীয় কিস্তি ছিল এই ছবি৷ লিলিয়ান হেলম্যানের গল্প ‘দিজ থ্রি’ অবলম্বনে বানানো ছবির প্রথম কিস্তিতে দেখানো হয় মধুর সমাপ্তি৷ তবে দ্বিতীয় দফায় এসে পরিচালক দেখান মার্থার আত্মহত্যা৷
ডেথ ইন ভেনিস (১৯৭১)
থমাস মানের উপন্যাস থেকেই ছবিটি নির্মাণ করেন লুকিনো ভিস্কোন্তি৷ ছবিতে দেখানো হয়, সমুদ্র পাড়ের এক হোটেলে অবসর যাপন করছেন ৫০ বছর বয়সি নাট্যকার গোস্তব ফন আসেনবাখ৷ সৈকতে এক তরুণকে দেখে প্রেমে পড়ে যান তিনি৷ ওই তরুণও উঠেছেন একই হোটেলে৷ আর এমন প্রেম ওই সময় তো বটেই, এখনও কোথাও কোথাও ট্যাবু৷
ইট ইজ নট দ্য হোমোসেক্সুয়াল হু ইজ পারভার্স, বাট দ্য সোসাইটি ইন হুইচ হি লিভস (১৯৭১)
পরিচালক রোজা ফন প্রাউনহেইম জানতেন, একজন সমকামী নিজের সঙ্গে কিভাবে যুদ্ধ করেন আর সামাজিক বাস্তবতায় কতটা গ্লানিতে ভোগেন৷ সেখানেই আলো ফেলেছেন তিনি৷ তুলে ধরেছেন একজন সমকামীর লাইফস্টাইল৷ সাধারণ বিয়ে-সংসার, পোশাকের আড়ালে ভিন্ন মানুষ আর সমকামীদের সঙ্গে মিশে আরেক ভূবন- এসবই চিত্রিত হয়েছে এই ছবিতে৷
মাই বিউটিফুল লনড্রেট (১৯৮৫)
ড্যানি ইন স্টিফেন ফিয়ার‘স নামের কমেডি ধাঁচের নাটক ঘিরে নির্মাণ করা হয় এই ছবি, যার মধ্য দিয়ে নজর কাড়েন অভিনেতা ড্যানিয়েল ডে লুইস৷ লন্ডনে ৮০-র দশকের মাঝামাঝি সময়ের কথা৷ একটা লন্ড্রি চালানোর দায়িত্ব পান দুই বন্ধু৷ একজনের নাম ওমর, যার বাড়ি পাকিস্তান৷ তারা জড়িয়ে পড়েন রোমান্টিক সম্পর্কে৷
মরিস (১৯৮৭)
১৯১০ সালে ব্রিটেনের এক অসুখি দম্পতিকে নিয়ে ছবিটি তৈরি করেন জেমস আইভরি৷ কলেজ পডুয়া মরিস ও ক্লাইভ একে অপরের প্রমে পড়েন৷ সমকামী পরিচয় সামনে এলে সমাজ-বিচ্যুত হতে পারেন- এমন শঙ্কা নিয়ে এক নারীকেই বিয়ে করেন ক্লাইভ৷ আর মরিসের জীবনে আসে নতুন প্রেম৷ ক্লাইভের গৃহপরিচারকের প্রেমে পড়েন মরিস৷
মাই ওন প্রাইভেট ইডাহো (১৯৯১)
দেহ বেচেই জীবিকা চলে মাইকের৷ তাই রাস্তার মোড়ে খদ্দের খুঁজতে হয় তাঁকে৷ একদিন মা-কে খুঁজছিলেন তিনি৷ এসময় তাঁর সঙ্গে দেখা হয় স্কটের৷ দুজনের নিয়তি একইরকম৷ সেই থেকে বন্ধুত্ব, যা প্রণয়ে গড়ায়৷ কিন্তু বহুমাত্রিক যৌনতায় বিশ্বাসী ছিলেন স্কট৷ তাই সম্পর্কে আসে দূরত্ব৷ ৯০ দশকের শুরুতে এই ছবির মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমকামিতা নির্ভর ছবির নতুন যুগ৷
দ্য মোস্ট ডিজায়ার্ড ম্যান (১৯৯২)
১৯৯৪ সালে জার্মান কমেডি ‘মাকো মিটস ড্র্যাগ কুইন্স’-এর তুমুল ব্যবসার পর এই ছবিতে অভিনয় করেন টিল শোয়াইগার৷ তাঁর চরিত্রটা ছিল দুষ্টু লোকের, যার মাথার মধ্যে সারাক্ষণ নারী বাস করতো৷ শেষ পর্যন্ত ‘ছ্যাঁকা’ খেয়ে এক সমকামীর সঙ্গে জড়িয়ে যান তিনি৷ রালফ কনিগের কমেডির ছায়া থেকে বানানো জ্যোনকে বর্টমানের ছবিটি রূপ নেয় মিউজিক্যালে৷
ব্রোকব্যাক মাউন্টেন (২০০৫)
ব্রোকব্যাক মাউন্টেনের দুই কাউবয় জ্যাক আর এনিস৷ সবকিছু একসঙ্গে করেন তাঁরা৷ পানাহার কিংবা ঘুমানো- একসঙ্গেই হওয়া চাই৷ পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করলেও দূরে থাকতে হয় দুজনকে৷ ট্যাবু ভাঙার সাহস আসে না৷ শেষ পর্যন্ত নারীতে আশ্রয় খোঁজেন দুজন৷ নিও-ওয়েস্টার্ন ধাঁচে থাই বংশোদ্ভূত মার্কিন পরিচালক আং লির এই ছবিকে বলা হয় ‘অবিস্মরণীয় মেলোড্রামা’৷ এই ছবির জন্য তিনটি অস্কার নিজের ঝোলায় নেন নির্মাতা৷
ক্যারল (২০১৫)
৫০-এর দশকে নিউ ইয়র্কের গল্প নিয়ে ’ক্যারল’৷ ক্যাট ব্লানচেট আর রুনি মারা অভিনয় করেছেন মূল ভূমিকায়৷ ভালোবেসে প্রকাশ করতে পারছিলেন না দুই প্রেমী৷ অবাধ যৌনতা, নারীর স্বাধীনতা কিংবা সমকামীদের অধিকার-কিছুই প্রতিষ্ঠা পায়নি৷ দুজনের চাপা আর্তনাদ নিয়েই এগিয়েছে ছবির গল্প৷ প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের উপন্যাস থেকে ছবিটি নির্মাণ করেছেন টড হাইনস৷ স্পর্শকাতর বিষয় বলে ১৯৫২ সালে বইটি প্রকাশ হলেও পরিচয় গোপন রাখেন লেখিকা৷