‘চাপ' অনুভব করছেন না টিভি মালিকরা!
২৩ জানুয়ারি ২০১৫অ্যাসোসিয়েশন অফ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (এটকো) সভাপতি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘‘নাশকতাকে আমরা যেন সেনসেশনালাইজড না করি, এ ব্যাপারে কিছু মন্তব্যে আমরা একমত হয়েছি৷ আমাদের দেশের জন্য যা ক্ষতিকর – অবশ্যই তা আমরা করব না৷'' সরকারের পাঁচজন মন্ত্রীর এ ধরনের বৈঠককে ‘চাপ' মনে করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই এটা চাপ নয়৷''
গত বৃহস্পতিবার ‘দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর করণীয়' নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মালিকদের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন সরকারের পাঁচ জন মন্ত্রী৷ এদের মধ্যে ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল৷ বৈঠকে মন্ত্রীরা টেলিভিশন মালিকদের সহযোগিতা চান৷
চলমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের পরামর্শ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর ওপর এক ধরনের চাপ কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশের) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘‘সাংবাদিক হিসেবে আমি কোনো চাপ অনুভব করিনি৷ চাপ অনুভব করলে অবশ্যই এর প্রতিবাদ করতাম৷ আমার কাছে মনে হয়েছে, এটি পর্যালোচনামূলক বৈঠক৷ সরকার দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে টেলিভিশন মালিকদের সঙ্গে কথা বলতেই পারেন৷ আর আমাদেরও দায়িত্ব আছে৷ কোনো সহিংসতাকে আমরা উসকে দিতে পারি না৷''
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের আরেকাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ৷ তিনি বলেন, জনগণ যাতে প্রকৃত ঘটনা জানতে না পারে তাই মিডিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ডেকে ‘ভদ্র থ্রেট' দিয়েছেন সরকারের মন্ত্রীরা৷ তিনি বলেন, অতীতে কখনও মিডিয়ার এত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মন্ত্রীদের এমন বৈঠক হয়নি৷ এখন থেকে আর টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আর সঠিক সংবাদ দিতে পারবে না৷ কয়েকদিন আগে সরকার একুশে টেলিভিশনের মালিক আবদুস সালামকে গ্রেফতার করেছে৷ এরপর রিমান্ডে নিয়ে তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে৷ মিডিয়ার উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে জানান শওকত মাহমুদ৷ তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার মিডিয়ার উপর ‘সেন্সরশিপ' আরো করতে চাচ্ছে৷
তবে খালেদা জিয়ার অভিযোগ নাকচ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, টেলিভিশনগুলোকে ‘নেতিবাচক সংবাদ প্রচারে' বিরত থাকতে অনুরোধ করা কোনোভাবেই ‘সেন্সরশিপ' নয়৷ তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে নেতিবাচক খবর প্রচার করা হয় না৷ এটা চাপিয়ে দেওয়া নয়, এটা সমাজের প্রতি নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে করা৷ নেতিবাচক সংবাদ সম্প্রচার করলে সন্ত্রাসীরা উত্সাহিত বোধ করবে৷' তিনি বলেন, ‘‘সন্ত্রাসীরা যাতে উত্সাহিত না হয় সেজন্য নেতিবাচক খবর প্রচার করবে না বলে কথা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ এটা সেন্সরশিপ হল কীভাবে, কোনো সেন্সরশিপ নেই৷'' বরং এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার ‘জ্ঞানের ঘাটতি' রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘উনাকে কেউ মিথ্যা বুঝিয়ে এসব কথাবার্তা বলাচ্ছেন৷''
টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর আমির হোসেন আমু বলেন, ‘‘মিডিয়াকে জানাতে চাই, তাঁরা (টেলিভিশনের মালিকরা) অনেককিছু ওয়াকিবহাল ছিলেন না৷ তাদের কাছে আমরা অনেক কিছু প্রমাণ সহকারে উপস্থাপন করেছি৷ তাঁরাও কনভিন্সড এবং তারা বলছেন, আন্দোলন ও রাজনীতি এগুলো নয়, এটা সন্ত্রাস ও নাশকতা৷ সন্ত্রাস ও নাশকতা মানুষকে গাইড করতে পারে না৷ এগুলো নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে৷''