চিকুনগুনিয়া জ্বর সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো
১২ জুলাই ২০১৪জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর গত বছর এই রোগের উপর একটি সমীক্ষা চালায়৷ এতে ঢাকার সূত্রাপুর, ধানমণ্ডি, মতিঝিল ও মহাখালী এলাকার প্রতি ১০ বাড়িতে একজন করে (বয়স ১৫ থেকে ৬০ বছর) মোট ৬০১ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে৷ এঁদের মধ্যে ২০৭ জনই চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত বলে পরীক্ষায় জানা যায়৷ সে হিসেবে ঢাকার প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত বলে জানায় আইইডিসিআর৷ চলতি বছরের মে মাসে সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সরকারি এই সংস্থাটি৷
মশাবাহিত রোগ
আইইডিসিআর-এর মতে, ‘এডিস অ্যালবোপিকটাস' ও ‘এডিস এজিপটি' নামক মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া জ্বর হয়ে থাকে৷ তবে কেবল নারী এডিস মশার কামড়েই এ রোগ হতে পারে৷ কামড় খাওয়ার পাঁচ দিন পর থেকে শরীরে লক্ষণগুলো ফুটে ওঠে৷ রোগের লক্ষণ হিসেবে মাথাব্যথা, সর্দি, বমি বমি ভাব, হাত ও পায়ের গিঁটে এবং আঙুলের গিঁটে ব্যথা, ফোসকা পড়া ও শরীর বেঁকে যেতে পারে৷ জ্বর উঠতে পারে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত৷ থাকতে পারে ২ থেকে ১২ দিন৷ তবে সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত জ্বর থাকে৷
অনেকে চিকুনগুনিয়া জ্বরকে ডেঙ্গু জ্বর মনে করতে পারেন৷ কারণ এদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে৷ তবে ডেঙ্গুর সঙ্গে চিকুনগুনিয়ার মূল পার্থক্য হলো, এই জ্বরে হাড়ের জোড়াগুলো ফুলে যায়, ডেঙ্গু জ্বরে যেটা হয় না৷
চিকিৎসা
ঢাকার একটি দৈনিক আইইডিসিআর এর সমীক্ষা প্রকাশ নিয়ে ২রা মে একটি প্রতিবেদন ছাপে৷ সেখানে চিকুনগুনিয়া রোগের চিকিৎসা বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদের মন্তব্য ছাপা হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বিদ্যমান আইসিটি, এলাইজা ও আরটি-পিসিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া রোগ শনাক্ত করা সম্ভব৷ এক্ষেত্রে কেবল আলাদা কিছু কিটস প্রয়োজন, যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআরে রয়েছে৷'' তিনি আরও বলেন, রক্ত পরীক্ষা করলেই রোগটি শনাক্ত করা যায়৷ এখন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি৷ তাই চিকুনগুনিয়া সারাতে সাধারণ জ্বরের চিকিত্সা নিলেই চলবে৷ বিশ্রাম, প্রচুর তরল খাবার ও প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে৷ তবে চিকুনগুনিয়া জ্বর প্রতিরোধে এডিস মশার প্রজনন বন্ধ করতে হবে৷
ইতিহাস
১৯৫২-৫৩ সালে আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ায় প্রথম এই রোগের আবির্ভাব ঘটে৷ আইইডিসিআর-এর সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রথম এ রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং ঢাকার দোহার ও কেরানীগঞ্জে৷ পরে ২০১১ সালের নভেম্বরে নতুন করে পাবনার সাঁথিয়ায় আবারও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়৷ আর ঢাকায় প্রথম দেখা দেয় গত বছরের আগস্টে৷