1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চীনের এক নির্ভীক কন্ঠ - শিল্পী আই ওয়েইওয়েই

৩ মে ২০১১

গণতন্ত্রকামী ও মুক্তমনা বলে পরিচিত চীনা শিল্পী আই ওয়েইওয়েইকে গ্রেফতার করে চীনের পুলিশ৷ জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এই শিল্পীর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার৷

https://p.dw.com/p/117wq
জার্মানির মিউনিখে ২০০৯ সালে শিল্পী আই ওয়েইওয়েইছবি: Zhou Qing

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে চীনের জাতীয় মিউজিয়ামে জার্মানির রেনেসাঁ যুগের শিল্পকলার একটি প্রদর্শনী উদ্বোধন করার কয়েক দিন যেতে না যেতেই শিল্পী আই ওয়েইওয়েইকে গ্রেফতার করে চীনের পুলিশ৷ বিশ্বের নানা স্থানে এই গ্রেফতারির নিন্দা করা হয়েছে৷

শিল্পী আই ওয়েইওয়েই জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৫৭ সালে বেইজিংএ৷ চীনের সমকালীন শিল্পকলায় সবচেয়ে জনপ্রিয় বলে খ্যাত ওয়েইওয়েই৷ বাবা আই কুয়িং ছিলেন একজন কবি৷ ১৯৫০ সালের শেষের দিকে কমিউনিস্ট শাসকগোষ্ঠী গোটা পরিবারটিকে চীনের এক প্রদেশে নির্বাসিত করে৷ সেখানে কঠিন শারীরিক পরিশ্রম করতে হত ওয়েইওয়েইকে৷ ১৯৭৬ সালে আবার তাদের বেইজিং ফিরে আসার অনুমতি দেয়া হয়৷ আই ওয়েইওয়েই প্রথমে ফিল্মএকাডেমিতে পড়াশোনা করেন৷ ১৯৮১ সালে নিউ ইয়র্কে যান তিনি৷ ১৯৯৩ সালে আবার চীনে ফিরে আসেন৷

শিল্পের নানা ক্ষেত্রে স্বচ্ছন্দ বিচরণ তাঁর৷ ছবি আঁকা, ভাস্কর্য, আলোক চিত্র, স্থাপত্য, ইন্সটেলেশন আর্ট, প্রামাণ্য চিত্র এসব কিছুতেই পারদর্শী ওয়েইওয়েই৷ সমকালীন আধুনিক শিল্পকলার জগতে এক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী হিসেবে তিনি সুপরিচিত৷ বেইজিং অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ডিজাইনে ছিল তাঁর হাতের ছোঁয়া৷ তবে স্বাধীন মতবাদের জন্য কমিউনিস্ট শাসনযন্ত্রের কাছে সব সময় তিনি চক্ষুশূল থেকেছেন৷ কেননা শিল্লী হিসাবে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সবক্ষেত্রেই অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার তিনি৷ তাঁর মতে শিল্প ও মানবাধিকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই৷ এ ছাড়া এক্ষেত্রে শিল্পীদের বিশেষ দায়িত্বও রয়েছে বলে তিনি মনে করেন৷ তুলির আঁচড় বা অন্যান্য যে কোনো শিল্পকলার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় মানবাধিকার৷

জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশাল দেশ চীন সর্বক্ষেত্রেই শীর্ষস্থানে ওঠার চেষ্টা করছে৷ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ফুলেফেঁপে উঠছে৷ কিন্তু মানবাধিকারের প্রশ্নে এখনও অনেকটা দূরে দেশটির শাসকগোষ্ঠী৷ আর তাই তো ৪ এপ্রিল বেইজিং থেকে হংকং যাবার পখে আটক করা হয় স্বাধীনচেতা, গণতন্ত্রকামী শিল্পী ওয়েইওয়েইকে৷ এর বিরুদ্ধে অ্যামেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলি সোচ্চার হয়ে উঠেছে৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ওয়েইওয়েইকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷ হংকংস্থ ইউম্যান রাইটস ওয়াচের মুখপাত্র নিকোলাস বিকুয়েলিন সমালোচনা করে বলেন, ‘‘সংকেতটা খুবই স্পষ্ট, যেরকমটি দেখা গিয়েছিল শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী লিউ শিয়াবোর ক্ষেত্রে৷ তখনও অনেকে মনে করেছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি থাকায় রক্ষা পাবেন লিউ৷ আই ওয়েইওয়েইকে গ্রেপ্তার ও তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে চীনের অন্যান্য মুক্তমনা চিন্তাবিদদেরও মুখবন্ধ করতে চায় চীনের শাসকমহল৷''

Flash-Galerie Wochenrückschau 2011 KW 16
জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এই শিল্পীর মুক্তির দাবিতে সোচ্চারছবি: AP

এই শিল্পীকে গ্রেপ্তার করার কারণটা এখনও অস্বচ্ছ৷ ওয়েইওয়েই'র বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কম্পিউটার ও টাকা পয়সা জব্দ করেছে পুলিশ৷ তাঁর বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের কর ফাঁকি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে৷ আই ওয়েইওয়েই আগেও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন৷ কিন্তু এবারের ব্যাপারটা কিছুটা ভিন্নরকম৷ জোরেশোরে প্রচারণা চালানো হচ্ছে ওয়েইওয়েই'এর বিরুদ্ধে৷

শিল্পীর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জুয়োশিয়াও এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এইবার আমরা তাঁর স্ত্রীকেও টেলিফোন করতে পারছিনা৷ তাঁর আর্ট স্টুডিওতে তল্লাশি চালানোর পরপরই গোটা এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যায়৷ কয়েক ঘন্টা পর আবার ফিরে আসে ইলেকট্রিক লাইন৷ আমরা ইন্টারনেটও ব্যবহার করতে পারিনি৷''

এই শিল্পী চীনা শাসক গোষ্ঠীর এক কঠোর সমালোচক৷ কিছুদিন আগে জার্মান টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েইওয়েই অভিযোগ করেন যে, বেইজিং'এ শিল্পী হিসাবে কাজ করা তাঁর পক্ষে প্রায় অসম্ভব৷ তাই বার্লিনে একটি আর্ট স্টুডিও খোলার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর৷

ওয়েইওয়েই'এর ভাষায়, ‘‘আমার বাড়িতে ঢোকার পথে দুটো ক্যামেরা লাগিয়ে রাখা হয়েছে৷ আমার টেলিফোনে আড়ি পাতা হয়৷ আমার ইমেইল, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং পরিচিত ও বন্ধুবান্ধবের ওপর নজর রাখা হচ্ছে৷''

অন্তরীণ এই চীনা শিল্পী ওয়েইওয়েই'কে বার্লিনের আর্ট ইউনিভার্সিটি ভিজিটিং লেকচারার হিসেবে সম্মানিত করছে৷

উল্লেখ্য, জার্মানির কাসেল শহরে শিল্পকলার বিখ্যাত প্রদর্শনী ডকুমেন্টায় ২০০৭ সালে ‘ফেয়ারিটেইল' নামে ওয়েইওয়েই'এর শিল্পকর্মের এক প্রকল্প প্রদর্শিত হয়েছিল৷ এজন্য চীন থেকে আনা হয়েছিল ১০০১ নানা শ্রেণী ও পেশার মানুষকে৷ এবং চীনের কিং রাজবংশের ১০০১ টি চেয়ার৷ এই প্রকল্পের অনুরূপে বার্লিনে চীনা দূতাবাসের সামনে অভিনব এক প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি৷ ওয়েইওয়েইর মুক্তির দাবিতে একত্রিত হয়েছিলেন বহু মানুষ, সাথে এনেছিলেন নানা ধরনের ১০০১ টি চেয়ার৷ এগুলি তারা স্থাপন করেছিলেন দূতাবাসের চারিদিকে৷ কয়েক জনের হাতে ছিল শিল্পী ওয়েইওয়েইর ছবি, যার নীচে লেখা নিখোঁজ৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক