চীনে উইগুর মুসলমানদের নির্যাতন
৮ জুন ২০২০চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে ঠিক কতজন উইগুর মুসলমানকে আটকে রাখা হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা কারো জানা নেই৷ তবে নানা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও খবর অনুযায়ী সংখ্যাটা দশ লাখের কম হবে না৷
২০০৯ সালে ভয়াবহ এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল শিনজিয়াং-এর রাজধানী উরুমকুই শহরে৷ তাতে কমপক্ষে ১৪০ জন নিহত এবং কয়েকশ' মানুষ আহত হয়েছিল৷অসংখ্য ঘর-বাড়ি জ্বালানো হয়েছিল সেই সংঘর্ষে, ধংস হয়েছিল অনেক রাষ্ট্রীয় সম্পদ৷
এর পাঁচ বছর পর, অর্থাৎ. ২০১৪ সালে এক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয় ৩১ জন৷ উইগুর মুসলমানদের ওপর সরকারের কঠোর নজরদারি এবং দমন-পীড়ন-নির্যাতনের শুরু তখন থেকেই৷
চীন সরকারের দাবি, সব করা হচ্ছে ইসলামি জঙ্গি এবং উইগুরদের মনোজগত থেকে জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন করতে৷ সেই লক্ষ্যে শিনজিয়াং প্রদেশে খোলা হয় উইগুর মুসলমানদের ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষাদান ক্যাম্প'৷ চীন সরকার বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের কথা বললেও উইগুর, বিশ্বের বিভি্ন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম মনে করে ওই ক্যাম্পে উইগুরদের আটকে রেখে আসলে একটি সম্প্রদায়কে অস্তিত্বের সংকটে ফেলা হচ্ছে৷
ডয়চে ভেলের বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এমন দাবি৷ প্রতিবেদনটি তৈরি করতে শিনজিয়াং-এ দীর্ঘদিন আটক থাকা চারজন উইগুরের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ চারজনই কাজাখ বংশোদ্ভূত৷ শিনজিয়াং থেকে মুক্তি পেয়ে এই মুহূর্তে চীনের প্রতিবেশী মুসলিম প্রধান দেশ কাজাখস্তানেই রয়েছেন তারা৷
অপরাধ স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়
কাজাখস্তানে ফিরে যাওয়া ওই চার উইগুর মুসলমানের দুজন পুরুষ, দুজন নারী৷ টানা কয়েক সপ্তাহ তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিনজিয়াংয়ে আটকদের কোনো-না-কোনোভাবে অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করতে বাধ্য করা হচ্ছে৷
৭৫টি ছোট-বড় অপরাধের তালিকা ধরিয়ে তার অন্তত একটি বা একাধিক অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নির্দিষ্ট কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেয় কর্তৃপক্ষ৷ চারজনই দাবি করেন, বিদেশে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা, বিদেশে যাওয়া থেকে শুরু করে জঙ্গিবাদে জড়িত সন্দেহ করার মতো ‘অপরাধ' হিসেবে নিয়মিত নামাজ পড়া, মেয়েদের হিজাব পরতে বাধ্য করার মতো বিষয়গুলোরও উল্লেখ আছে ওই তালিকায়৷
তালিকা থেকে কিছু অপরাধে টিক চিহ্ন দিয়ে তাতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করা ব্যক্তিকে অনেক ক্ষেত্রে অল্প সাজা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়৷ ডয়েচে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেয়া চার উইগুরের তিনজনই সেভাবে কাজাখস্তানে ফিরে যাবার সুযোগ পেয়েছেন৷
এক সাহসী উইগুর
তবে চারজনের মধ্যে একজন ভীষণ সাহসী৷ তিনি জানান, বারবার চাপ দেয়া সত্ত্বেও তিনি সেই তালিকার কোনো অপরাধেই জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি৷যতবার চাপ এসেছে ততবারই বলেছেন, ‘‘আমি নির্দোষ৷'' অনেকেই বলেছিলেন, তাতে বিপদ হতে পারে,আসতে পারে দীর্ঘ কারাবাসের রায়৷কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি৷ একদিন হঠাৎই আসে মুক্তির খবর৷
অল্প শাস্তি সৌভাগ্যের
কাজাখস্তানের জনগণ চীনে আটক স্বজনদের মুক্তির দাবি তোলায় এবং কাজাখ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই মূলত কাজাখ উইগুরদের ছেড়ে দিতে শুরু করে চীন সরকার৷
ডয়চে ভেলেকে এক উইগুর নারী বলেন, তালিকায় দু-একটা টিক চিহ্ন দিয়ে তিনি যখন স্বল্প মেয়াদের কারাবাস শেষে মুক্তির রায় পান, অন্যদের জন্য খারাপ লাগছিল তার৷ তিনি বলেন, যাদের দীর্ঘ কারাবাসের আদেশ হয়েছিল তাদের ‘‘চোখের জল মুছতে দেখে, কাঁদতে দেখে
মন খুব খারাপ হয়েছিল৷'' তবে তিনি এ-ও জানান, নিজের স্বল্পমেয়াদি কারাদণ্ড হওয়ায় খুশি হয়েছিলেন, কারণ, ‘‘আমি তো সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম, মনে হচ্ছিল আর দু বছর সেখানে থাকতে হলে আমি মারা যাবো৷''
নাওমি কনরাড, ইউলিয়া বায়ার, চেরি চ্যান/ এসিবি