1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা না পড়িলে ধরা

৩০ মার্চ ২০১১

গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে গোটা বিশ্বে বিভিন্ন রকমের ধাতুর মূল্য বেড়ে চলেছে৷ তামা অথবা এ্যালুমিনিয়ামের দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ৷ আর তাই ধাতু চুরির দিকে অপরাধীদের নজরও বাড়ছে৷

https://p.dw.com/p/10jwk
জার্মানির ড্রেসডেনে এই ভবনগুলোর শীর্ষে রয়েছে মূল্যবান ধাতুছবি: AP

দিন দিন ধাতুর মূল্য বেড়ে চলায় অপরাধীদের নজর পড়েছে ধাতুর ওপরে৷ ধাতু হয়ে উঠেছে তাদের লক্ষ্যবস্তু৷ শুধু বাংলাদেশ, ভারত বা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেই ধাতু চোরদের দৌরাত্ম্য রয়েছে, এই কথা এখন আর বলা যাবে না৷ তাদের দৌরাত্ম্য ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়েছে৷ এমন কী গত বছরে জার্মানিতেও তারা তাদের দাপট দেখিয়েছে৷ জার্মানির শহরগুলোতে বিভিন্ন ভবনে লাগানো ধাতু, রেলপথ বা এমন কী সমাধিক্ষেত্রে লাগানো ধাতুও চুরি হচ্ছে৷ অপরাধীরা ধাতুর টুকরো খুঁজে বেড়ায়, সেগুলো বিক্রি করে ভালো দাম পায়৷ আর বড় ধরণের ধাতুর খণ্ড পেয়ে গেলে তো সোনায় সোহাগা! এদিকে জাপানে ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির পরে পুননির্মাণের চাহিদা এতো বেড়ে গেছে, যে তা ধাতুর মূল্য আরো বেড়ে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে৷

বার্লিনের একটি সমাধিক্ষেত্র৷ এটি অত্যন্ত শান্তির জায়গা৷ ঝকঝকে তকতকে, সুন্দর প্রতিটি লন৷ এটি মানুষের শেষ বিশ্রামের জায়গা৷ বিশেষ করে এই সমাধিক্ষেত্রটিতে শুয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে নিহত বহু সৈন্য৷ সাথে রয়েছে আরো অনেকের সমাধি৷ কিন্তু সম্প্রতি এই শান্তির জায়গাটি পরিণত হয়েছে অপরাধের জায়গায়৷ গত জানুয়ারি মাসের এক রাতে এখানে আসে চোরদের একটি দল৷ তারা সমাধিক্ষেত্রের প্রধান ভূগর্ভস্থ কক্ষের ওপরের ঢাকনি বা ছাদটি খোলার চেষ্টা করে৷ এই সমাধিক্ষেত্রের কেয়ারটেকার দেখালেন, ছাদটি কীভাবে ব্যবহার করতে হয়৷ তবে এখন পুরো জায়গাটি একটি ক্যানভাস দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে৷ কেয়ারটেকার জানালেন, চোরেরা সম্ভবত এটি ধাতু হিসেবে বিক্রি করতে চেয়েছিল৷ সম্ভবত এটির বিনিময়ে তারা ১৫শ ইউরো দাম হাঁকতো৷ আর নতুন করে ছাদ বসাতে হলে শহরের ব্যয় হবে প্রায় কুড়ি হাজার ইউরো৷ সমাধিক্ষেত্রের কেয়ারটেকার বললেন, ধাতু চোররা শহরের জন্যে এক বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে৷ তিনি বললেন, ‘‘ধাতুর বাজার দরের ওপরে নির্ভর করে সমাধিক্ষেত্রে চুরির ব্যাপারটি কীভাবে ওঠানামা করছে৷ এমন কী সমাধিক্ষেত্রের পাথরের মত ব্রোঞ্জের ফুলদানি, পাখি অথবা চিঠি উধাও হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ চুরি হয়ে যাচ্ছে৷ আবার এমন চুরির ঘটনাও ঘটে, যা হয়তো চোখেও পড়ে না৷''

Estland Tallinn sowjetisches Kriegerdenkmal am 8. Mai 2007
সমাধিক্ষেত্রে ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরী মূর্তীছবি: AP

অর্থনৈতিক সংকট চলাকালে ধাতুর দাম কমে যায়৷ যার ফলে চুরির ঘটনাও কম ঘটছিল৷ কিন্তু গত দুই বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন এসেছে৷ ধাতু, বিশেষ করে তামা এবং এ্যালুমিনিয়ামের দাম বেড়ে চলেছে৷ যার অর্থ হচ্ছে, খুব দ্রুত লাভের মুখ দেখার জন্যে চোরদের কাছে ধাতু হয়ে উঠছে আকর্ষণীয়৷ ধাতু যে কেবল সমাধিক্ষেত্র বা ভবন থেকে খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা নয়, খোলা জায়গা বা রেলওয়ের ট্র্যাক থেকেও তা খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷

NO FLASH Inter City Express 3 ICE
ধাতু চোরদের উৎপাতে অতিষ্ঠ জার্মান রেল সংস্থা ‘ডয়চে বান'ছবি: AP

জার্মান রেল সংস্থা ‘ডয়চে বান' ধাতু চোরদের উৎপাতে অতিষ্ঠ৷ গত বছরে রেলের লাইন চুরির ৮২১টি ঘটনা ঘটেছে৷ তার আগের বছর এর দ্বিগুণ চুরির ঘটনা ঘটেছিল৷ চোরেরা মাঝে মাঝে রেলপথের ওপরের ইলেকট্রিক্যাল লাইন এবং নীচের তার চুরি করছে৷ কিন্তু চোরদের মধ্যে অনেকে আবার আরো বেশি উচ্চাকাঙ্খী৷ তারা ধাতুর তৈরি গোটা রেল লাইনই মাঝে মধ্যে তুলে নিয়ে যেতে চায়৷ ডয়চে বান'এর অবকাঠামো বিষয়ের মুখপাত্র মার্টিন ভাল্ডেন৷ তিনি বললেন, ‘‘যারা চুরি করার চেষ্টা করছে এবং তাদের নিজেদের গাড়িতে করে এইসব চোরাই জিনিস নিয়ে যাচ্ছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে৷ কিন্তু এই চুরির সঙ্গে পেশাগতভাবে সংঘবদ্ধ গ্যাং রয়েছে, যারা যারা চুরি করার জন্যে অত্যন্ত ভারি যন্ত্রপাতি, হাইড্রলিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে৷ যার ফলে তারা অত্যন্ত ভারি ধাতুও খুলে নিয়ে যেতে পারছে৷ তারা ধাতুর ছোটখাটো টুকরো চুরির মধ্যে নিজেদের ধরে রাখছে না৷ যেমন আমাদের অন্যান্য জায়গা থেকে তারা ধাতুর তারের একটা সম্পূর্ণ রিল চুরি করতে পারে৷''

প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন