চ্যালেঞ্জ এবং বিএনপির আন্দোলনের নতুন কৌশল
৩০ জুলাই ২০২৩বিশেষ করে ওই কর্মসূচিতে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের আশানুরূপ অংশগ্রহণ না থাকা নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আর বিএনপির সঙ্গে যে ৩৭টি দল যুগপৎ আন্দোলনে আছে তাদের প্রত্যাশিত সক্রিয় অংশগ্রহণ এখনো পাচ্ছেনা বিএনপি। সব মিলিয়ে বিএনপি একটু দম নিয়ে আন্দোলন আরো কার্যকর করতে চায়। তবে তাদের আন্দোলনের মূল টার্গেট ঢাকা। কারণ তারা মনে করছে ঢাকাকে নিয়ন্ত্রণে নেয়া না গেলে সরকারের পতন ঘটানো যাবে না। বিএনপি চাচ্ছে তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই এই দখল নিতে।
গত ২২ জুলাই ঢাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ থেকেই বিএনপির আন্দোলনের টার্নি পয়েন্ট শুরু হওয়ার কথা ছিলো। তাদের পরিকল্পনা ছিলো এরপর একের পর এক, লাগাতার ঢাকা কেন্দ্রিক কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে বড় চাপে ফেলার। সেই কারণেই ২২ জুলাই তারুণ্যের সমাবেশের তারা ঢাকায় পাঁচ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার মহাসমাশের কর্মসূচি দেয়। পরে সমাবেশ স্থলের অনুমতি না পেয়ে একদিন পর শুক্রবার নয়া পল্টনে তারা সমাবেশ করে। দুইটি কর্মসূচিতেই ঢাকার বাইরে থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসেন।
বিএনপির হিসেবে সেটা ১০-১২ লাখ। এই নেতা-কর্মীদের ঢাকায় রেখেই তাদের ঢাকা ভিত্তিক আন্দোলনের পরিকল্পনা ছিলো। ফলে তারা সমাবেশের পরদিনই শনিবার ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান কর্মসূচি দেয়। এই কর্মসূচির পরদিন তাদের সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়ার কথা ছিলো বলে জানা গেছে।
কিন্তু এখানে কর্মসূচির তারিখ নিয়ে কিছুটা সমন্বয়হীনতা কাজ করেছে বলে জানা গেছে। আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থানের কর্মসূচি দেয়ার কথা ছিলো রবিবারে। সেখান থেকে সোমবারে সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়ার কথা ছিলো। এটা একদিন এগিয়ে আনা হয় হাইকমান্ডের নির্দেশে।
কিন্তু ঢাকার প্রবেশ মুখের কর্মসূচিতে আমানউল্লাহ আমান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ আরো দুই-একজন সিনিয়র নেতা ছাড়া অন্য নেতাদের তেমন দেখা যায়নি। আর কর্মসূচির স্পটে সমাবেশের মত নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিলোনা। পুলিশ ওই কর্মসূচির অনুমতি না দেয়ায় তার প্রেক্ষাপটে ভালো প্রস্তুতিও ছিলো না তাদের। ফলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবস্থান বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও যে মাঠে আছে সেটার জন্য বাড়তি কোনো প্রস্তুতি ছিলো না বিএনপির।
তাই বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো মনে করছে তাদের সামনে এখন দুইটি চ্যালেঞ্জ আছে আন্দোলন ঢাকা কেন্দ্রিক করার। ১. পুলিশ এবং ২. আওয়ামী লীগ। তারা মনে করছেন শনিবারের কর্মসূচিতে স্পষ্ট হয়ে গেছে সামনের দিনগুলোতে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আরো সক্রিয় হবে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আরো শক্তি নিয়ে সমান্তারলভাবে মাঠে থাকবে। তাই তাদের এখন চিন্তা এইসব উপেক্ষা করে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন এগিয়ে নেয়া যায়।
বিশেষ করে সংঘাত হলেই নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে মামলা হবে। ফলে মামলা ও গ্রেপ্তারের চাপ আরো বাড়বে। তবে এর মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো সমর্থন পাবে বলে মনে করছে।
শনিবারের কর্মসূচিতে তারা লাভবান হয়েছে বলে মনে করছে। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ- সম্পাদক ও সাবেক এমপি রুমিন ফারহানা বলেন," আমাদের মূল কৌশল হলো আমরা কোনো রকম উসকানিতে পা দেবনা। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব। আপনারা দেখেছেন শনিবার আমাদের দুইজন সিনিয়র নেতাকে মারধোর করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। কিন্তু আমরা মারমুখী হয়নি। আমরা আবারো ঢাকা কোন্দ্রিক কর্মসূচি দেব। তবে কোনো মারমুখী আচরণ কববনা। তবে আমাদের ওপর বার বার হামলা করলে আমরা প্রতিরোধ করব। আত্মরক্ষার অধিকার সবার আছে।”
বিএনপি মনে করছে তারা আবারো সারাদেশে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আরো শক্তি সঞ্চয় করে ঢাকা কেন্দ্রিক আন্দোলনকে তারা জোরদার করবে। আগে আগস্ট মাস তাদের টার্গেট ছিলো । এখন তারা সেপ্টেম্বর মাসকে টার্গেট করেছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন," আমরা একভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবনা। আমাদের আন্দোলনের কৌশলে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে। এরইমধ্যে পরিবর্তন এসেছে। রবিবার আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকায় আমরা কর্মসূচি দিইনি। আমরা সোমবার ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখতে চাই। যদিও শনিবার আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে, শতাধিক গ্রেপ্তার করেছে। অনেক মামলা হয়েছে।আর পরিকল্পিত ভাবে বাসে আগুন নিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে।”
তিনি বলেন," আমরা এখন আর সব কর্মসূচি একসঙ্গে প্রকাশ করবনা। একটা কর্মসূচি শেষ হবে সেখান থেকে আরেকটি কর্মসূচি দেয়া হবে। আমরা আরো কৌশলী হবো। কারণ সরকার ও তার দল এবং পুলিশ আমাদের বিরুদ্ধে মাঠে আছে। আমরা সারাদেশে আরো কিছু কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে দেব। তার মাধ্যমেই ঢাকা কেন্দ্রিক কর্মসূচি আরো জোরদার করব। এর মাধ্যমেই সরকারের পতন হবে।”
এদিকে শনিবারের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘাতের ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ১১টি মামলা করেছে । এতে বিএনপির নেতা-কর্মীসহ ৫৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বানে ভোটার তেমন ছিলো না:
ঢাকা-১৭ আসনের মতোই রবিবার চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিলো খুবই কম। বিকেল চারটায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে।
সর্বোচ্চ ১০-১১ ভাগ ভোট পড়েছে। তবে ভোটার না থাকলেও আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থীর লোকজনের দুই দফা হামলার শিকার হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আরমান আলী। তিনি হামলার অভিযোগ করে ভোট বর্জন করেছেন। এই নির্বাচনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। এখানে মোট প্রার্থী ছয় জন।