ঢাবির ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীকে নির্যাতন
২৭ জানুয়ারি ২০২২বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আকতারুল ইসলাম এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন৷ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হলের আবাসিক শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম সানাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করার কথা জানিয়েছেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছির৷ ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অধ্যাপক বাছির বলেন, ‘‘তদন্ত কমিটি সত্যতা নিরূপণ করে যে শাস্তির সুপারিশ করবে, সেটা পর্যালোচনা করে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, সন্দেহ নাই৷ ঘটনা শুনে আমি গত রাত তিনটার দিকে হলে গেছি৷ শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমি নিজে কথা বলেছি৷ তাকে আমি সাপোর্টও দেওয়ার চেষ্টা করেছি৷”
আকতারুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী৷ বিজয় একাত্তর হলের মেঘনা ব্লকের ৩০০২ (ক) কক্ষে থাকেন তিনি৷ আকতারের অভিযোগ, বুধবার রাত ১০টায় হল ছাত্রলীগ গেস্টরুমে ( অতিথি কক্ষে) যেতে বলেছিল কিন্তু অসুস্থতার কারণে যেতে না পারায় তাকে ডেকে নিয়ে ‘নির্যাতন' করা হয়৷
অসুস্থতার কথা বলার পরও তাকে ‘কক্ষের লাইটের দিকে আধা ঘণ্টা তাকিয়ে থাকার শাস্তি' দেওয়া হয়৷ ১৫ মিনিট লাইটের দিকে তাকিয়ে থাকার পর চেতনা হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানান আকতার৷ সাত দিন আগে তার বাবার স্ট্রোক করেছে; পরিবারের বিপদে ছোট ভাই দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছে৷ এসব কারণে আগে থেকেই তিনি প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন বলেও জানান তিনি৷
বুধবার রাতে তাকে নির্যাতনের ঘটনায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কামরুজ্জামান রাজু, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাইফুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের সাইফুল ইসলাম রোহান, ইতিহাস বিভাগের হৃদয় আহমেদ কাজল, সমাজকল্যাণ বিভাগের ইয়ামিন ইসলাম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক শুভ জড়িত বলে আকতারের অভিযোগ৷
তারা সবাই ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী আবু ইউনুস ও রবিউল ইসলাম রানার সহযোগী হিসেবে পরিচিত৷ ইউনুস ও রানা হলের সভপাতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী৷ আকতার যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, তাদের ফোন করা হলে কেউ ধরেননি৷
বুধবার রাতের ঘটনার সময় উপস্থিত এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘এর আগেও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করা হয়েছে৷ উনারা এখন বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম৷’’ এ বিষয়ে আবু ইউনুসকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি৷ এসএমএস পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি৷ তবে বরিউল ইসলাম রানা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘এ বিষয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই৷ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান থাকবে তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার৷ ’’
ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কেউ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা তো দূরের কথা, ন্যূনতম অসম্মানজনক আচরণও যদি করে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব৷”
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)