জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের সঙ্গে সংঘাত তীব্রতর
১৫ নভেম্বর ২০১১মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ডাকে সাড়া দিয়ে জঙ্গলমহলের যে মাওবাদী-সমর্থকরা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন, তাঁরাই এখন মাওবাদীদের আক্রমণের লক্ষ্য৷ পুরুলিয়ার বলরামপুরে যে দুজনকে সোমবার সন্ধ্যায় খুন করে তারা, এরা হলেন তৃণমূল কর্মী রাজেন সিং সর্দারের বাবা এবং ভাই, যে রাজেন সম্প্রতি জনগণের কমিটি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন৷ এই রাজেনকে খুন করতেই আচমকা হামলা চালিয়েছিল মাওবাদীরা৷ ঠিক যেভাবে গত ১৫ দিনে চার জন তৃণমূল কর্মীকে তারা হত্যা করেছে৷ আগে যেমন লাগাতার খুন হতেন বামফ্রন্ট কর্মীরা, তেমনই এখন তৃণমূল কর্মীরা রয়েছেন মাওবাদীদের হিট লিস্টে৷
তবে বলরামপুরে হামলা করে ফেরার পথে যৌথবাহিনীর পাল্টা আক্রমণের মুখে পড়ে মাওবাদীরা৷ সারা রাত ধরে, লাগাতার প্রায় সাড়ে ১২ ঘন্টা নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে তাদের গুলির লড়াই চলে৷ প্রাণ হারায় দুজন মাওবাদী৷ উদ্ধার হয় তাদের অস্ত্রশস্ত্র৷ সংঘর্ষে আরও বেশ কয়েকজন মাওবাদী গুলিতে জখম হয়েছে বলে যৌথবাহিনীর দাবি৷ অন্য দিকে দুই নাগা নিরাপত্তাকর্মী মাওবাদীদের গুলিতে জখম হন৷ এই সংঘর্ষের পর থেকেই জঙ্গলমহলে ব্যাপক তল্লাসি অভিযান শুরু করেছে যৌথবাহিনী৷
এদিকে সোমবার রাতেই মধ্যস্থকারীদের ফের একটি চিঠি দেয় মাওবাদীরা৷ তাতে বলা হয়েছে, মাওবাদীরা অস্ত্র সংবরণ করতে রাজি কিন্তু যেহেতু তারা অস্ত্র নিয়েই ঘোরে, তাই অস্ত্র প্রদর্শন বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ তবে যৌথবাহিনীকে চার মাসের জন্য জঙ্গলমহলে অভিযান বন্ধ করতে হবে৷ এই চার মাসে মাওবাদীদের একটি কমিটি গ্রামে গ্রামে ঘুরে যাচাই করবে সত্যিই অভিযান বন্ধ হয়েছে কিনা৷ তার পরেই যুদ্ধবিরতি হবে৷
এই চিঠি পাওয়ার পর মঙ্গলবার মধ্যস্থতাকারীরা নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসেন এটা ঠিক করতে যে, আদৌ তাদের আর মধ্যস্থতা করার দরকার আছে কিনা৷ কারণ, মাওবাদীরা কার্যত তাদের কোনও কথাতেই কান দিচ্ছেন না৷
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলরামপুরের দুই দলীয় কর্মীর মৃত্যুর পর এদিন মাওবাদীদের উদ্দেশে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এবার কঠোর হবে সরকার৷ শুধু মাওবাদীরা নয়, যাঁরা গোপনে তাদের মদত জোগায়, তাদেরকেও শাস্তি পেতে হবে৷ একটা ব্যাপার গত ২৪ ঘন্টায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ যাবতীয় প্রতিশ্রুতি এবং ইতিবাচক উদ্যোগ সত্ত্বেও প্রশাসন এবং মাওবাদীদের মধ্যে যে পারস্পরিক অবিশ্বাস রয়ে গিয়েছে, তা এবার প্রত্যক্ষ সংঘর্ষের দিকেই এগোচ্ছে৷
প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক