জটিলতা এড়িয়ে দেশের শীর্ষ ইউটিউবার ফারজানার সাফল্যগাঁথা
৩ মার্চ ২০২৩চ্যানেলটি পরিচালনা করেন ফারজানা আক্তার৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ‘ফারজানা ড্রয়িং অ্যাকাডেমি'-র আকাশছোঁয়া সাফল্যের পেছনের গল্প শুনিয়েছেন তিনি৷
ডয়চে ভেলে : শুরুতে ‘ফারজানা ড্রয়িং অ্যাকাডেমি’ সম্পর্কে সংক্ষেপে যদি কিছু বলেন...
ফারজানা আক্তার : আমার নাম ফারজানা আক্তার৷ আমার চ্যানেলের নাম ফারজানা ড্রয়িং একাডেমি৷ আমি মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি৷ শুরুতে আমার ইচ্ছা ছিল মাস্টার্স শেষ করার পর একটা জব করার, তো সেক্ষেত্রে আমার হাজবেন্ডের পরামর্শেই আমি ফ্রিল্যান্সার থেকেই ইউটিউবার বা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ শুরু করি৷
ড্রয়িং এবং ইউটিউবিং শুরুর পেছনের গল্প?
আঁকাআঁকিটা একদম ছোটবেলা থেকেই৷ আমার আব্বু একজন রিটায়ার্ড আর্মি পার্সন, উনি আর্মিতে জব করতেন৷ উনি যখনই অবসর সময় পেতেন, উনি দুইটা কাজ করতেন৷ এর মধ্যে একটা ছবি আঁকা এবং আরেকটা মেকানিকাল কাজ করতেন৷ এটা ওনার শখের কাজ ছিল৷ উনি ছবি যখন আঁকতেন, তখন আমি ক্লাস ওয়ানে পড়ি৷ আমি খেয়াল করলাম, ঐখান থেকে আমার আঁকাআঁকির শখ ও ভালোবাসা তৈরি হয়৷ তারপর থেকে নিজে নিজেই আঁকার প্র্যাক্টিস করতাম ড্রয়িংটা, নিজে নিজেই করতাম৷ প্রতিদিন কিছু না কিছু করতাম৷ এভাবেই দিন দিন আমার আঁকার ইম্প্রুভমেন্ট হয়৷ ২০১৭ সালের জানুয়ারির ২০ তারিখ থেকে আমি ভিডিও দেওয়া শুরু করি৷ প্রথম এক মাসেই আমি প্রচুর সাড়া পাই, ইউটিউব থেকে যে আমার অডিয়েন্সরা আমাকে খুব রিকোয়েস্ট করতে থাকে, আমি যেন প্রতিদিন ভিডিও পাবলিশ করি৷ ইউটিউব থেকে আয় হবে বা ইউটিউব আমার প্রফেশন হবে শুরুতে এরকমটা ধারণা ছিল না৷
কী ধরনের ছবি আঁকতে ভালো লাগে?
আঁকাআঁকির সবকিছুর মধ্যেই আমি ভালো লাগা ফিল করি৷ তবে দেখা গেছে যে, পেইন্টিংয়ে আমার দক্ষতা একটু কম, তো আমি শুধু স্কেচ নিয়ে কাজ করেছি এতদিন৷ আপাতত চেষ্টা করছি পেইন্টিংয়ের উপরে দক্ষতা তৈরি করার৷ যতটা সম্ভব আমি রেগুলার প্র্যাকটিসের মাধ্যমে নিজেকে ইমপ্রুভ করার চেষ্টা করছি৷
কারা আপনার ভিডিও বেশি দেখেন?
সবাই চায় আমি মূলত স্কেচ নিয়েই কাজ করি৷ আর এটা বাহিরের কান্ট্রিতে বেশি চলে আরকি৷ ভিউজ বেশি আসে ইন্ডিয়া থেকে, ইন্ডিয়া থেকে ৪০% গ্রাহক আছে বর্তমানে৷ সেকেন্ড অপশনে আছে ইউনাইটেড স্টেটস৷ তারপরে আছে বাংলাদেশ, তারপর তুরস্ক, এরপরে আছে পাকিস্তান৷
একা কনটেন্ট ক্রিয়েট করা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
কী ধরনের ভিডিও তৈরি করবো, এটা নিয়ে ধারণা, তারপর ভিডিওর যে শুটিং, এরপর এডিটিং, তারপর পাবলিশ করা৷ পরে আবার কী ধরনের ভিডিও পাবলিশ করবো, এই সব ধরনের কাজ প্রতিদিন আমি একা হাতে হ্যান্ডেল করি৷ আসলে কাউকে যে ভরসা করে দেবো, এই কাজটা তো আমার মতো করে অন্যজন বুঝতে পারবে না৷ তো দেখা যায় অনেক চ্যালেঞ্জ হয়ে যায় একা একা পুরো কাজ হ্যান্ডেল করা৷
পরিবার থেকে কেমন সাপোর্ট পাচ্ছেন?
আল্লাহর রহমতে আমি কোনোরকম সমস্যা ফেস করছি না৷ আর আমার হাজবেন্ড সম্পূর্ণভাবে আমাকে সাপোর্ট দেয়৷ এমনকি আমার শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ এই বিষয়ে আমাকে খুব সাপোর্ট করে৷ এবং আমি যে এতদূর আসতে পেরেছি তা ভেবে তাারা অনেক গর্ব অনুভব করে এবং আমাকে নিয়ে সবার কাছে খুব প্রশংসা করে৷
মিডিয়া থেকে কী স্বেচ্ছায় আড়ালে থাকছেন?
অনেক টিভি চ্যানেল থেকে আমাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকেছিল, কিন্তু আমি অ্যাভয়েড করেছি ৷ আমি আরো পাবলিসিটি পেলে সরকার বা আরো দূর পর্যন্ত আমার কথা মানুষ জানতো৷ আমি ইচ্ছা করেই এগুলো অনেক অ্যাভয়েড করে গেছি৷ কারণ, এগুলোর পেছনে সময় দিতে গেলে আমার যে মূল ফোকাস, আমার কাজের অনেক ক্ষতি হয়৷ তাছাড়া আমি একজন মেয়ে মানুষ, আমি চাই না আমাকে অনেক মানুষ দেখুক৷ আমি একটু পর্দার মধ্যেও থাকতে পছন্দ করি৷ তবে ইচ্ছে আছে যদি সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে ডাকা হয়, আমি অবশ্যই সেখানে যাবো৷
দিনে কতটা সময় এর পিছনে ব্যয় করেন?
ইউটিউবে বর্তমানে শর্ট ভিডিও নিয়েও কাজ করছে মানুষ৷ শর্ট আসার পর থেকে আমাকে আরেকটু ঘন ঘন ভিডিও দিতে হচ্ছে, যেহেতু আমি বড় ভিডিওটাও মেইন্টেইন করছি সাথে শর্ট ভিডিওটাও৷ এমনিতে বলতে গেলে আমি অন্য কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখি না, সম্পূর্ণ এটার মধ্যেই...৷ এমনিতে ভিডিও শুটিংটাইমটা লাগে আমার দেড় থেকে দুই ঘণ্টা আর এডিটিং টাইম লাগে, যদি শর্ট ভিডিও হয় তাহলে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে আমি এডিটিংটা কমপ্লিট করে ফেলতে পারি মিউজিকসহ৷
এতকিছু সামলিয়ে পরিবারকে কতটুকু সময় দিতে পারেন?
যেহেতু আমার কাজটা ঘরোয়া, আমরা একসাথেই থাকি, একসাথেই খাওয়া-দাওয়া, একসাথেই সময় কাটানো৷ আমার ছেলের স্কুলের বই গুছিয়ে দেওয়া, তারপর তার পড়াশোনায় কোনো সমস্যা হলে আমি পড়ানোর ব্যাপারটাও দেখি৷ তারপর দেখা গেছে সে যদি কোনো কম্পিটিশন থাকে, যেমন ড্রয়িং অথবা অন্য কোনো প্র্যাকটিকেল থাকে, তখন আমি তাঁকে হেল্প করি৷ আমি ফ্যামিলিকেও সময় দেই, আমার হাজবেন্ডের সাথেও অনেক গল্প করি, একসাথে চা খাই, সবকিছু একসাথে৷ বলতে গেলে আমি শুটিং করা, ভিডিও এডিটিং করা, ফ্যামিলিকে সময় দেওয়া, এগুলো সবকিছুই এর মধ্যে করি৷
আপনার সাফল্যের মূলমন্ত্র কী?
আমার চ্যানেল শুরু করার আট মাসের মধ্যে আমি ১ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার গেইন করি৷ আর দশ মিলিয়ন হয়েছে ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৮ তারিখে৷ এই যে সহজভাবে উপস্থাপনটা, যেকোনো জিনিস, ড্রয়িং অথবা পেইন্টিং৷ আমি বেশি জটিল কিছু নিয়ে কাজ করি না, আমার মেইন টার্গেট থাকে বিগিনার্সদের প্রতি, যারা নতুন, কাজ করতে চায়, যারা শিখতে চায়, তাদেরকেই আমি টার্গেট করে কাজ করি৷ আমি মূলত এই দিকে ফোকাস করেই কাজ করি, যার কারণে আমার পপুলারিটি সবথেকে বেশি হয়৷