সমীক্ষায় এগিয়ে বিজেপি
১৬ এপ্রিল ২০১৪এই প্রথম জাতীয় পর্যায়ের কোনো জনমত সমীক্ষার ফলাফল চলতি লোকসভা নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সম্ভাব্যতায় সুনির্দিষ্টভাবে এগিয়ে রাখল ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন ভারতের ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ জোটকে৷ এই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চলেছে এনডিএ৷ ৫৪৩ আসনের ভারতীয় সংসদে তারা জিততে পারে ২৭৫টি আসনে, যার মধ্যে বিজেপি একাই পেতে পারে ২২৬টি আসন৷ ছমাস আগে জাতীয় পর্যায়ের এক জনমত সমীক্ষাতেও বিজেপির এনডিএ জোটই এগিয়ে ছিল, কিন্তু এবারে দেখা যাচ্ছে বাড়তি আরও ১৬টি আসন চলে এসেছে তাদের দিকে৷
বিজেপির একার ২২৬টি আসনে জেতার সম্ভাবনা সত্যি হলে, সেটা বিজেপির পক্ষে তো বটেই, ১৯৯১ সালের পর থেকে যে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে সেরা ফল হবে৷ অন্যদিকে জনমত সমীক্ষা বলছে, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স বা ইউপিএ ২০১৪ সালের এই লোকসভা ভোটে জিততে পারে খুব বেশি হলে ১১১টি আসনে, যার মধ্যে কংগ্রেস পেতে পারে ৯২টি আসন৷ কংগ্রেসের ইতিহাসে সবথেকে খারাপ ফল! সোজা কথায়, রাজনৈতিক দল হিসেবে এবার লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হতে চলেছে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের৷
বিজেপি এবার ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের তুলনায় ভাল ফল করতে পারে বেশ কয়েকটি রাজ্যে৷ তার মধ্যে প্রথমেই আছে উত্তর প্রদেশ৷ এখানে বিজেপি ২০০৯ সালের থেকে ৪১টি আসন বেশি পেতে পারে৷ এছাড়া মহারাষ্ট্রে বিজেপির ১৭টি আসন বাড়তে পারে, রাজস্থানে বাড়তে পারে ১৭টি, বিহার এবং অন্ধ্র প্রদেশে ১২টি করে এবং মধ্য প্রদেশে গতবারের তুলনায় ১০টি আসন বেশি পেতে পারে বিজেপি৷ সব মিলিয়ে এই ছটি রাজ্য থেকে বিজেপি ১০৯টি বাড়তি আসন জোগাড় করে সংসদে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করতে পারে৷ ঐ ১০৯টি আসন ধরলে এনডিএ জোটের আসন বাড়বে মোট ১১৬টি৷ অন্যদিকে ইউপিএ জোটের হাতছাড়া হতে পারে ১৫১টি আসন৷
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী এবার খুব চেষ্টা করছেন, যাতে রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে অন্তত ৩৮টি তাদের দখলে আসে৷ সমীক্ষার ফল বলছে, এতগুলি না হলেও, ৩০টি আসন জিতে এবার দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস৷ কিন্তু তাতে মমতার কার্যসিদ্ধি হবে না৷ জাতীয় রাজনীতির অঙ্কের হিসেবে ৩৫ থেকে ৩৮টি আসন পেলে তবেই নির্ণায়ক অবস্থানে থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস৷ যদিও সেই সঙ্গে বাকি হিসেব একটু এদিক ওদিক হয়ে বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলিকে আরও কিছু বাড়তি আসন পেতে হবে এবং সবথেকে বড় কথা, কংগ্রেসকে আরও অনেকটা ভদ্রস্থ ফল করতে হবে৷ একমাত্র তা হলেই কেন্দ্রে পরবর্তী জোট সরকার গঠনের ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাতে পারবে তৃণমূল-সহ আঞ্চলিক দলেরা, মমতা যেটা চাইছেন৷
কিন্তু সমীক্ষা বলছে, উত্তর প্রদেশে গত লোকসভা ভোটের তুলনায় এবার নয়টি আসন কম পেতে পারে মুলায়ম-অখিলেশ সিং যাদবদের সমাজবাদী পার্টি৷ মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি তাদের ১০টি আসন ধরে রাখতে পারে, কিন্তু বাড়তি একটি আসনও তারা পাবে না৷ এদিকে বিহারে শরদ যাদব-নীতীশ কুমারদের সংযুক্ত জনতা দল গতবারের তুলনায় ১৬টি আসন কম পেতে পারে, যার ১২টি নিয়ে যাবে একা বিজেপি৷ একমাত্র তামিলনাড়ুতে এবার ১৩টি আসন বাড়িয়ে মোট ২২টি আসন পেতে পারে জয়ললিতার এডিএমকে৷ সেখানে বিজেপি বরং ছিনিয়ে নেবে বাড়তি ১০৯টি আসন৷
সুতরাং ভারতের ক্ষেত্রে বিজেপির নির্বাচনী স্লোগানই সম্ভবত সত্যি হতে চলেছে৷ ‘‘আব কি বার মোদী সরকার''৷ অর্থাৎ এবারের সরকার, মোদী সরকার৷ গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরেই শুরু থেকে প্রচার চালিয়েছে বিজেপি৷ মূল্যবৃদ্ধি থেকে দুর্নীতি, দেশের সব সমস্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের তুলনায় নরেন্দ্র মোদী কত দক্ষ প্রশাসক হতে পারেন, গুজরাট মডেলকে সামনে রেখে বারবার সেটাই বলেছে বিজেপি৷ সেই কৌশল সম্ভবত খেটে গেল৷