জলবায়ুর পরিবর্তনে বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকিও
১৩ আগস্ট ২০১০চিকিৎসকরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফল হয়ে কখনো দেখা দিচ্ছে খুব গরম, আবার কখনোও বা খুব শীত৷ যা মানুষের হৃদযন্ত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷ বৃটিশ মেডিকেল জার্নালের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে একদিনে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার সঙ্গে অতিরিক্ত ২০০ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে৷
আবার লু হাওয়ার কারণেও হার্ট অ্যাটাক বেড়ে গেছে, যা ইতোমধ্যেই প্যারিসে দেখা গেছে৷ ২০০৩ সালে গ্রীষ্মের সময় ফ্রান্সে তাপমাত্রা উঠেছিলো ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এতে আগস্টের প্রথমার্ধেই ১১ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল৷ এর বেশিরভাগই মারা গিয়েছিল হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে৷ সে বছর গ্রীষ্মে যুক্তরাজ্যেও রেকর্ড ভেঙেছিল গরম৷ অন্য সময়ের চেয়ে সেখানে তখন মারা গিয়েছিল অতিরিক্ত ২ হাজার মানুষ৷
বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী দিচ্ছেন, ২০৮০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই এমন ঘটতে থাকবে৷ তাঁরা বলছেন, একটানা দু'সপ্তাহ ধরে অতিরিক্ত গরম বা শীত বয়স্ক মানুষদের দুর্বল করে দিচ্ছে, বিশেষ করে আগে থেকেই যাদের হৃদযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে৷
হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে ২০০৩ ও ২০০৬ সালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এমন ৮৪ হাজারের বেশি রোগীর ওপর গবেষণা চালান দ্য লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন এর গবেষকরা৷ ইংল্যান্ড ও ওয়েলস এর প্রতিদিনের তাপমাত্রার সঙ্গে এসব রোগীর হার্ট অ্যাটাকের তুলনা করে তারা খুঁজে পেয়েছেন, গ্রীষ্মকালেও তাপমাত্রা প্রতিদিন গড়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাওয়ার সঙ্গে শতকরা ২ ভাগ করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে৷
গবেষকরা বলেন, শতকরা ২ ভাগ ঝুঁকি বাড়ার কথা শুনলে মনে হতে পারে একজন মানুষের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকির পরিমাণ বুঝি কম৷ কিন্তু এই সংখ্যা যুক্তরাজ্যে প্রতিদিন অতিরিক্ত দু'শ' মানুষের হার্ট অ্যাটাকের সমান৷ তারা ধারণা করছেন, অতিরিক্ত শীতে রক্তের জমাট বাঁধার প্রবণতা দেখা দিতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে৷
দেখা গেছে, গত বছর তাপমাত্রা বেশি নেমে যাওয়ায় অন্য বছরের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা গেছে৷ মৃত্যুর এই সংখ্যা গত দশকের অন্যান্য সময়কে ছাপিয়ে গেছে৷ ২০০৮ ও ২০০৯ সালের শীতকালে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস-এ অতিরিক্ত ৩৬ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল, যা আগের বছরগুলোর চেয়ে শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ বেশি৷
প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস
সম্পাদনা: মনিরুল ইসলাম