জলবায়ু ও করোনা নীতি নির্ধারণে রোমে জি-টোয়েন্টি নেতারা
৩০ অক্টোবর ২০২১ইটালির রোমে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে দুইদিনব্যাপী জি-টোয়েন্টি সম্মেলন৷ করোনার বড় ধাক্কা পেরিয়ে প্রথমবারের মতো শিল্পোন্নত দেশগুলোর সরকার প্রধানরা একে অন্যের মুখোমুখি হচ্ছেন৷ স্বভাবতই কোভিড সংকট ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ইস্যুটি সেখানে প্রাধাণ্য পাবে তা বলাই বাহুল্য৷
জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের পরপরই গ্লাসগোতে বসছে কপ-২৬ এর আসর৷ তাই জলবায়ু সংকট, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে নীতিনির্ধারণী আলোচনাগুলোও উঠে আসবে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে৷ পাশাপাশি বৈশ্বিক নেতারা দীর্ঘ বিরতিতে নিজেদের মধ্যে দেখা হওয়ার প্রেক্ষিতে যারযার সম্পর্কও ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবেন না৷ যেমন, জার্মানির অন্তবর্তীকালীন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতে মিলিত হবেন৷ বৈঠক করবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গেও৷ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ও চীনের শি ঝিনপিং অবশ্য সশরীরে থাকছেন না রোমে, তারা যোগ দিবেন ভিডিও লিংকের মাধ্যমে৷
আর ম্যার্কেল শুধু একা নন, তিনি সম্ভাব্য ভবিষ্যত চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসকেও আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন তার সঙ্গে সম্মেলনের বৈঠকগুলোতে যোগ দিতে৷
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ভারত, ব্রাজিলের মতো দেশগুলো নিয়ে জি-টোয়েন্টি বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৮০ শতাংশের ভাগীদার৷ ৬০ শতাংশ জনসংখ্যার ভার আর ৮০ শতাংশ কার্বন নির্গমণেরও দায়ও তাদের৷
আলোচনায় জলবায়ু সম্মেলন
রোমের আলোচনায় মুখ্য হয়ে উঠছে একদিন পর থেকে শুরু হতে যাওয়া গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনের এজেন্ডা৷ ইটালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি এরইমধ্যে জি-টোয়েন্টি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে সবাই বৈশ্বিক তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়৷ ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বের সব দেশ এই লক্ষ্যে কাজ করার কথা৷ তবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমণকারী চীন এখনও এই বিষয়ে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে৷ দেশটি এখনও নতুন নতুন কয়লা প্রকল্পে বিনিয়োগ করে চলছে৷
বেইজিং এর পরিকল্পনা ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন যা জলবায়ু আন্দোলকর্মীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী যথেষ্ট নয়৷
অন্যদিকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেইন ফরেস্ট অ্যামাজন রক্ষার খরচ হিসেবে উন্নত দেশগুলোর কাছে টাকা দাবি করে আসছেন৷
আরো যা
করোনা ও তার প্রভাব মোকাবিলার বিষয়গুলোও নেতা ও মন্ত্রীদের বৈঠকে গুরুত্ব পাবে৷ বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি ফেরানো, সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দাম; এমন সব বিষয়ে তারা আলোচনা করবেন৷
জি-টোয়েন্টি নেতারা বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলোর জন্য ন্যূনতম বৈশ্বিক কর ১৫ শতাংশ নির্ধারণ সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে সই করবেন৷ এটি গত মাসেই চূড়ান্ত হয়েছিল৷ এতে অ্যামাজন, অ্যালফাবেটের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কর এড়ানোর প্রচেষ্টা রোধ করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
এছাড়াও ২০২২ সালের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সারা বিশ্বের ৭০ ভাগ জনগোষ্ঠীকে কোভিড টিকার আওতায় আনার বিষয়ে একটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার কথা রয়েছে৷
এসব বিষয়ে রোমে সম্মেলন কক্ষে যখন দর কষাকষি চলবে তখন বাইরে তাদের চাপে রাখতে প্রতিবাদের আয়োজন করেছেন জলবায়ু সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়নগুলো৷ শনিবার বিকালে এক প্রতিবাদে দশ হাজার মানুষ জড়ো হবেন বলে আশা করা হচ্ছে৷ অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে মোতায়েন থাকছে ছয় হাজার পুলিশ ও ৫০০ সামরিক সদস্য৷
এফএস/আরআই (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)