জলবায়ু দূষণের প্রভাব পড়ছে জনসংখ্যাতেও
১৯ নভেম্বর ২০০৯জলবায়ুতে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে দূষিত কার্বনের মাত্রা৷ ছড়িয়ে পড়ছে মাত্রাতিরিক্ত ভাবে৷ দূষণের ফলে নদী তার নাব্যতা হারাচ্ছে, গলে যাচ্ছে মেরুর বরফ, বেড়ে চলেছে উষ্ণতা ক্রমাগত৷ ঋতু পরিবর্তনে বিস্ময়কর ভাবে উধাও হয়ে যাচ্ছে একেকটি ঋতুর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য৷ বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে উষ্ণায়ন৷
কিন্তু তার সঙ্গে জনসংখ্যার সম্পর্ক আছে কী কোথাও? জাতিসংঘের সদ্য প্রকাশিত বার্ষিক বিশ্ব জনসংখ্যা রিপোর্ট কিন্তু বলছে, হ্যাঁ৷ আছে৷ ইউএনএফপিএ নামের ওই সংস্থার প্রধান থোরায়া আহমেদ ওবাইদ এই বছরের বার্ষিক রিপোর্টটি প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বিশ্বের সামনে যে দৈত্য ক্রমশ গোলিয়াথ হয়ে উঠছে, ছড়িয়ে দিচ্ছে তার হাত পা দিকদিগন্তে, তার নাম হল ওই ক্লাইমেট চেঞ্জ৷ বিশ্বের জলবায়ুতে শিল্পোন্নত দেশগুলি ক্রমশ মিশিয়ে দিচ্ছে বিষাক্ত কার্বনের মাত্রা, আর তা আঘাত করছে গিয়ে দরিদ্রতম মানুষের শরীরে৷ বিশেষত, গর্ভবতী নারীর ভ্রুণে৷ বিশ্বের দরিদ্র জনসংখ্যার শতকরা সত্তর ভাগ নারী৷ আর এই বিশ্বে তেমন মানুষের সংখ্যাই দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অনেক বেশি, যাঁরা উন্নত বিশ্বের সুযোগ সুবিধা বা পরিচ্ছন্ন আবহাওয়ায় সন্তানের জন্ম দিতে পারেন না৷ তাই লক্ষ্য করে দেখলে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, এই ক্লাইমেট চেঞ্জ নামের দৈত্য আমাদের অনাগত প্রজন্মের ওপর তার ধারালো থাবা বসিয়ে দিচ্ছে৷ এমনকি অজাত শিশুর শরীরেও বাসা বাঁধছে তার অভিশাপ৷
আর এই প্রাকৃতিক ধ্বংসের জন্য দায়ী কিন্তু আমরা মানুষরাই৷ যারা বিশ্বের জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়েছি৷ করে চলেছি এখনও৷
কোপেনহেগেন শহরে আর মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই বসবে জলবায়ু সম্মেলন৷ ডিসেম্বরের সাত থেকে আঠারো তারিখ পর্যন্ত চলবে সেই সম্মেলন৷ সেই সম্মেলনে যে চুক্তি প্রত্যাশিত, তাতে রাজনৈতিক লক্ষ্যই কী বেশি করে দেখা হবে না ? এই প্রশ্নও ইতিমধ্যে উঠেছে৷ ইউএনএফপিএ-র প্রধান থোরায়া আহমেদ ওবাইদ তাঁর রিপোর্টে সে আশঙ্কা যে প্রকাশ করেন নি তা নয়৷ বলেছেন, এই জলবায়ু ধ্বংসের প্রকোপ যেহেতু দরিদ্র নারীদেরকেই বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, অতএব এর বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে তাই তাঁদেরকেই সংগঠিত হতে হবে৷ এগিয়ে আসতে হবে এক সারিতে৷
কারণ এই বিশ্বকে পরবর্তী প্রজন্ম উপহার দেওয়ার যোগ্যতা রয়েছে একমাত্র তাঁদেরই৷
প্রতিবেদন - সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা - হোসাইন আব্দুল হাই