জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এশিয়া জুড়ে বন্যা আর খরা
১৩ আগস্ট ২০১০এই হিমবাহগুলো গলতে শুরু করেছে৷ ফলে দেখা দিচ্ছে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ৷ পাকিস্তানে স্মরণকালের মধ্যে ভয়াবহতম বন্যার জন্য কি দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন? এই প্রশ্ন এখন সকলের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ এ কথা তো সকলের জানা আছে যে, এশিয়া মহাদেশের ১৩০ কোটি অধিবাসী হিমালয় পর্বতমালার হিমবাহগুলো থেকে সৃষ্ট পানির ওপর নির্ভরশীল৷ তবে এই সময়ে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হিমবাহগুলো আশঙ্কাজনক হারে গলে যাচ্ছে এবং এতে মহাদেশের একটি বিশাল অংশ খরায় আক্রান্ত হতে পারে৷
একটু আগে বলছিলাম বন্যার বিষয়ে, এখন আবার বললাম খরার কথা, এ নিয়ে জানি আপনাদের সামান্য হলেও ভ্রু কুঁচকে যেতে পারে৷
তাহলে খোলাসা করেই বলি....
হিমালয়ের দুই হাজার ৪০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা হিমবাহগুলোই হলো পাকিস্তান, ভারত, চীন, নেপাল ও ভুটানের মূল পানির উৎস৷ এই অঞ্চলে তিন দশক ধরে প্রতি দশকে শূন্য দশমিক ১৫ থেকে শূন্য দশমিক ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে৷ ফলে গলে তো আর হিমবাহগুলো বরফ আকারে থাকতে পারে না৷ তাই এর গলে যাওয়ার হারও নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷
জলবায়ু আন্দোলনের নেতা প্রশান্ত সিং বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, আগামী ৪০ বছরের মধ্যে বেশির ভাগ হিমবাহ গলে যাবে৷ তাঁর কথার সঙ্গে একমত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্ত:সরকার প্যানেল বা আইপিসিসি৷ তারা এ বিষয়ে অবশ্য বেশ আগেই সতর্ক করে জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যেই হিমালয়ের সব হিমবাহ গলে যেতে পারে৷ পাকিস্তানের বন্যা, বাংলাদেশ বা ভারতের অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি কিংবা চীনের ভূমিধ্বসের চিত্র দেখে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ওই অঞ্চলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব এরই মধ্যেই অনুভূত হতে শুরু করেছে৷ তবে আইপিসিসির এই ভাষ্য নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে৷
চলুন নেপাল ও ভুটানে
এবার তাহলে চলুন একটু নেপাল ও ভুটান থেকে ঘুরে আসি৷ সবুজ পাহাড়, বরফের সাদা টোপর পরা পর্বত আর বুনো গন্ধ জেঁকে ধরে আছে এই দুই দেশকে৷ সেখানে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেল.... গলে যাওয়া হিমবাহ থেকে বিশালাকৃতির হ্রদ সৃষ্টি হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ এসব হ্রদ উপচে ভাটিতে থাকা গ্রামগুলো প্লাবিত করতে পারে এমনটাও আশঙ্কা অনেকের৷ হিমালয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব বর্ণনা করতে গিয়ে নেপালের পর্বতারোহী ও পরিবেশকর্মী দাভা স্টিভেন শেরপার জানান, ধরুন আমি খুবই সন্তোর্পনে একটি হিমবাহের ওপর দিয়ে হেঁটে গেলাম৷ এর কয়েক কয়েক মিনিট পর দেখলাম সেটি ধসে পড়ছে... এমন চিত্র এখন প্রায় নিয়মিত হয়ে সকলের চোখে ধরা দিচ্ছে৷ তাই প্রতিটা মুহুর্ত আমাদের থাকতে হয় খুবই সচেতন৷
ঘন ঘন বন্যা হতে শুরু করেছে
আমরা এতক্ষণ যে কথাগুলো বলছিলাম সেই কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানাচ্ছে, এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে তারা দেখতে পেয়েছেন, হিমবাহ গলে যাওয়ার হার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে ঘন ঘন স্বল্পমেয়াদি বন্যা হচ্ছে৷ এই হিমবাহগুলো গলতে থাকা অব্যাহত থাকলে আস্তে আস্তে তা নদীর প্রবাহের উপর প্রভাব ফেলবে৷ এর অর্থ হচ্ছে এই যে নদীর পানি হ্রাস পাবে৷ অন্যদিকে, আইপিসিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোতেও ব্যাপক বন্যা দেখা দিতে পারে এবং পরে সেখানকার নদীগুলো শুকিয়ে খরা দেখা দিতে পারে৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ