জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে গরমের রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছে
৬ মে ২০১১গত ছয় বছরে সুমেরু অঞ্চলে উষ্ণতা যতটা বেড়েছে তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ দশমিক ৬ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে৷ সম্প্রতি অসলোতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এইকথা বলা হয়েছে৷ ‘দ্য আর্কর্টিক মনিটরিং অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম'-এএমএপি বলেছে, ১৮৮০ সাল থেকে শুরু করে যে কোন পাঁচ বছরে সুমেরু অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা যত ছিল তার চেয়ে, ২০০৫ সাল থেকে সুমেরু অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা অনেকটা বেড়ে গেছে৷
গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা শূন্য দশমিক ৯ থেকে ১ দশমিক ৬ পর্যন্ত বেড়ে যাবে৷ তাঁরা বলেছেন,‘‘সুমেরু অঞ্চলের হিমবাহ ও বরফের উপরিভাগ গলে যাবে৷ সেইসঙ্গে গ্রিনল্যান্ডের বিশাল বিশাল বরফ খণ্ডগুলোও একসময় হারিয়ে যাবে৷ আর এই বিষয়গুলোর ফলে বেড়ে যাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা৷''
তাঁরা আরও বলেছেন, সুমেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা যতটা বাড়ছে বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় তাপমাত্রা বাড়ছে তার দ্বিগুণ হারে৷ এমনকি শরৎকাল এবং শীতকালে সুমেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷
গবেষণায় বলা হয়েছে, এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে ২০৮০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে ৩ ডিগ্রি থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ আর সুমেরু অঞ্চল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, এ শতাব্দীতেই, হতে পারে আগামী ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যেই গ্রীষ্মকালে প্রায় বরফশূন্য হয়ে যাবে৷
গত একশ' বছরের মধ্যে এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যে এবছর সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছিলো৷ সাধারণত এপ্রিল মাসে যে তাপমাত্রা থাকে এবার তার চেয়ে তাপমাত্রা ছিলো ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি৷ এছাড়া এই এপ্রিল মাস ছিলো যুক্তরাজ্যের ১১তম শুষ্ক মাস৷ কেননা, সাধারণত এসময় যে পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়, এবার হয়েছে তার অর্ধেক৷
ফয়সাল আহমেদ ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে আছেন৷ তিনি বললেন, ‘‘এই চারবছরে আমি এখানকার আবহাওয়ার বেশ পরিবর্তন দেখেছি৷ এ বছর যা মনে হচ্ছে তুলনামূলকভাবে রোদ ও উজ্জ্বল আবহাওয়া৷ মানুষ এখনই গরম অনুভব করছে৷ তুলনামূলকভাবে বৃষ্টিও কম৷ গ্রীষ্মকালে দেখা যায়, গড়ে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়৷ সকালে না হলেও সন্ধ্যায় হয়৷ এবার এখনও বৃষ্টি শুরু হয়নি৷''
এবছর এপ্রিলে যুক্তরাজ্যের গড় তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ২০০৭ সালের এপ্রিলের তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে ছাড়িয়ে গেছে৷
মার্চ-এপ্রিল মাসে গোটা যুক্তরাজ্য জুড়ে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় এবার হয়েছে তার অর্ধেক৷ ফলে শীতকালের গড় শুষ্কতার চেয়েও ঐ দু'মাসকে বেশি শুষ্ক দেখা গেছে৷ তবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণের দিক থেকে বড় ধরণের বৈচিত্র্য দেখা গেছে৷ উত্তর-পশ্চিমাংশে স্কটল্যান্ডে এপ্রিলের সাধারণ বৃষ্টিপাতের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত দেখা গেছে৷ যেখানে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এই সময়ের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চেয়ে বৃষ্টিপাত দেখা গেছে ১০ শতাংশ কম৷
‘‘এখন আসলে আবহাওয়া বিশেষ কোনো নিয়ম কানুন অনুযায়ী আর চলছে না৷ যে সময় গ্রীষ্মকাল আশা করা হচ্ছে সেসময় দেখা যাচ্ছে গ্রীষ্ম শুরু হচ্ছে না৷ হয়ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এটি হচ্ছে৷ এখানকার অনেক পত্র-পত্রিকায় আবহাওয়া নিয়ে অনেক লেখালেখিও হচ্ছে৷ কী কারণে এটা হচ্ছে তা নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে এখানে৷''
জার্মানিতেও এবারের এপ্রিল ছিল বেশ গরম৷ সুলতানা আইয়ূব জার্মানির বন শহরে বাস করছেন দীর্ঘদিন ধরে৷ তিনি বললেন, ‘‘আমি প্রায় ৩০ বছর জার্মানিতে আছি৷ আবহাওয়ার পরিবর্তনটা এখানে চোখে পড়ার মতো৷ এখানে আমি আসার পর ২০ বছর পর্যন্ত কখনও দেখিনি গরমে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে৷ কিংবা এপ্রিল মাসে কখনই দেখিনি এতো উজ্জ্বল আলোতে চারিদিক ভরে থাকে৷ আসার পর থেকে সবসময় শুনেছি এপ্রিল মাসে আবহাওয়ার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই৷ অন্ধকার, বৃষ্টি৷ এপ্রিল মাসে অনেক সময় খুবই ঠান্ডা, বৃষ্টি, অন্ধকার, হালকা বরফ পড়তেও দেখেছি৷ কিন্তু এবার দেখছি তার উল্টো৷ আবার গরমকালেও অসহনীয় গরম৷''
একদিকে তাপমাত্রা বাড়ছে৷ অন্যদিকে বাড়ছে শুষ্কতা৷ যার প্রভাব গিয়ে পড়া শুরু করেছে শস্যে৷
‘‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য শীতের সময় শীত দরকার৷ তা না হলে তো এখানকার অনেক পোকামাকড় এবং ফসলের আবাদের জন্য অসুবিধা৷ ভালো ফসল হয় না৷ অনেক সময় মাটি যদি যথেষ্ট সময় ঠান্ডা না হয় অনেক ফসলের ফলন ভালো হয় না৷ পোকামাকড় বেড়ে যায়৷ সেজন্য শীতের সময় শীত থাকাটাইতো কাম্য৷''
প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক