জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের প্রধান হিমবাহগুলোর ওপর প্রভাব
৮ এপ্রিল ২০১১সমীক্ষাটির লেখকদের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ায় নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির এরিক রিগনটও রয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, পোলার আইস শিটের ওপরে করা এটি সবচেয়ে দীর্ঘ সমীক্ষা৷ যাতে গত কুড়ি বছরের মধ্যে এর বিভিন্ন পরিবর্তনকে তুলে ধরা হয়েছে৷ ঐ সমীক্ষায় দেখা গেছে, যতোদিন সমীক্ষাটি চলেছে সেই সময়ের মধ্যে, অর্থাৎ একবছরে, গ্রিনল্যান্ড এবং আর্কটিকের আইস শিটগুলো থেকে গড়ে ৪৭৫ গিগাটন আইস গলে গেছে৷ ২০০৬ সালে অপর একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছিল, পাহাড় সমান হিমবাহ এবং পোলার আইস ক্যাপ থেকে এক বছরে ৪০২ গিগাটন বরফ গলেছে৷ এইভাবে আইস শিট গলে যাওয়া পৃথিবীর সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট৷ এর ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১.৩ মিলিমিটার বা ২০৫০ সাল নাগাদ ১৫ সেন্টিমিটার বাড়াবে৷
তবে অ্যামেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়ন এজিইউ-এর লেখকরা হিসেব করে বলেছেন, ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্র পৃষ্ঠের মোট উচ্চতা ৩২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে৷ যার মধ্যে ১৫ সেন্টিমিটার আইস শিট গলা পানি, ৮ সেন্টিমিটার হিমবাহের বরফ ক্যাপ গলা পানি এবং সাগরে তাপ বৃদ্ধির কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ৯ সেন্টিমিটার৷
বিংশ শতাব্দিতে প্রতি বছর সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ১৭ সেন্টিমিটার করে৷ ২০০৭ সালে জাতিসংঘ প্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয় যে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিই প্রবল বন্যার কারণ৷ এবং এই ব্যপারটি বিশেষ করে উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জন্য এক বিশাল হুমকি৷
বিশ্বে জলবায়ুর এই পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্যও এক মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ শুধু যে ভবিষ্যতের জন্য এই হুমকি, তা নয়৷ আরো আগে থেকেই বাংলাদেশে শুরু হয়েছে প্রায় প্রতি বছর বন্যা, ঝড়, খরা এবং মরুভূমির মতো আবহাওয়া৷
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দূর্যোগ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড.আমানত উল্লাহ খান জানান, ‘‘যেহেতু আমি ‘জিওগ্রাফি ব্যাকগ্রাউন্ডের', আমি ব্যাপারটা একটু অন্যরকমভাবে দেখি৷ পানি বেশি আসলো আর সি লেভেল রাইজ করলো - আসলে ঘটনাটা তা নয়৷ সি লেভেলেরও অনেক রকমের লেভেল রয়েছে৷ পৃথিবীর আকৃতি ঠিকভাবে হিসেব করে বুঝতে হবে বাংলাদেশে পানি কতোদূর আসবে৷ সেই ধরণের স্টাডি বা রিসার্চ করার মতো সুবিধা আমরা পাচ্ছি না এ দেশে৷''
অবস্থা মোকাবিলায় করনীয় সম্পর্কে ড. আমানত উল্লাহ বললেন, ‘‘বিপর্যয়গুলোর জন্যে তৈরি থাকতে হবে আমাদের৷ যদি আসলেই ‘ল্যান্ড এড়িয়া' অনেকটা চলে যায়, তাহলে এই মানুষদের অন্যখানে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে৷ সেটা করা যেতে পারে উন্নততর নগরায়ণ পরিকল্পনার মাধ্যমে৷ আর নগরায়ণ করতে হবে পরিকল্পিতভাবে৷ বাংলাদেশে রাজধানীভিত্তিক নগরায়ণ বেড়ে গেছে৷ এমন হয়ে গেছে যে, ঢাকা শহরে সারা দেশ থেকে লোকজন এসে বসতি গড়তে শুরু করছে৷ ফলে এক্ষেত্রে পরিবেশের ওপর একটা প্রভাব পড়ছেই৷ যেটা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরো কঠিন হবে৷ এক্ষুনি আমাদের অন্যান্য নগর কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন করতে হবে, করতে হবে আকর্ষণীয়৷''
প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ