জলবায়ু পরিবর্তন
২৭ মে ২০১২জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠিত ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং জ্বালানি সমস্যা ও এর সমাধান' শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জনস্বাস্থ্যের হুমকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়৷ ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের হুমকি ও এর প্রতিকারে কৌশলগত পরিকল্পনা' বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জার্মানির বিলেফেল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মোবারক হোসেন খান৷
সম্মেলনের কারিগরি অধিবেশনে ড. খান বলেন, ‘‘আইপিসি ২০১২ প্রতিবেদন অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের যে নেতিবাচক প্রভাব, তা সবচেয়ে বেশি পড়ছে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের উপর৷ ফলে এসব দেশের জনস্বাস্থ্যের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্যণীয়৷ আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতা বা ঘাটতি বাড়ছে৷ কারণ বন্যা, সাইক্লোন হলে পানি দূষিত হচ্ছে৷ আবার যখন অতিরিক্ত গরম পড়ছে তখনও আমরা ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে বেশি পরিমাণ পানি তুলে নিচ্ছি৷ ফলে দেখা যাচ্ছে পানির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে৷ আবার পানির সাথে জনস্বাস্থ্যের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে৷ কারণ পানিবাহিত অনেক রোগের প্রকোপ জনস্বাস্থ্যকে হুমকির দিকে ঠেলে দেয়৷ যেমন বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের পর দুর্যোগ পীড়িত এলাকায় ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার সংক্রমণ দেখা যায়৷''
অবশ্য, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের মতো সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ যে শুধুই জলবায়ু পরিবর্তনের ফল তা জোর দিয়ে বলা যায় না৷ তবে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার বৃদ্ধির সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ড. মোবারক হোসেন খান৷ আর এর ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়৷ তাঁর মতে, একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ আহত-নিহত হচ্ছে৷ অন্যদিকে, এর পরোক্ষ প্রভাবে মানুষ নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে৷
এমতাবস্থায় জনস্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য সর্বপ্রথম ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের উপর জোর দিয়েছেন এই বাংলাদেশি-জার্মান বিজ্ঞানী৷ তাঁর মতে, ‘‘আমাদের কর্মকাণ্ড এবং আচরণের কারণেই পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে৷ আবার পরিবেশ সর্বপ্রথম আমাদেরই আঘাত হানছে এবং হানবে৷ তাই ব্যক্তিপর্যায়েই আমাদের প্রথম এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে এবং সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে৷ যেমন আমাদের নিজেদেরই উচিত পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ না করা এবং ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলা৷ আবার সুযোগ থাকলে নিজেদের জায়গা নিজেদেরই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে৷ এতে করে কারো ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয় না৷ বরং এমন কাজের মাধ্যমে একদিকে যেমন নিজেকে রক্ষা করা হয়, তেমনি অপরকে বাঁচানোর কাজও করা হয়৷ ফলে আমার নিজের কাজের মাধ্যমে সবাই লাভবান হয়৷ তবে একইসাথে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষকেও এক্ষেত্রে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে করে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জনস্বাস্থ্য ভেঙে না পড়ে এবং গোটা সমাজে বিপর্যয় না ঘটে৷''
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়