জলবায়ু বিমার সুফল পাচ্ছেন চাষিরা
৮ আগস্ট ২০১৮গোটা এলাকার চাষিরা বড় হাটে নিজেদের পসার নিয়ে আসেন৷ তাঁদের ফসল কেমন হয়েছে, এসিআরই প্লাস প্রকল্পের মাক্সিম সুভিনিয়ে তা জানতে চান৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলের কৃষিকাজের ক্ষতি হচ্ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি এড়াতে বিমা চালু করার লক্ষ্যে এক গবেষণা প্রকল্পের সমন্বয় করছেন তিনি৷ মাক্সিম বলেন, ‘‘মরক্কোয় ছোট চাষিদের জন্য আগে থেকেই বিমা চালু রয়েছে৷ সরকারি ভরতুকির কল্যাণে বিমা কোম্পানিগুলি তাদের নানা পরিষেবা দেয়৷ কিন্তু সেটা আমাদের লক্ষ্যের মধ্যে পড়ে না৷ আমরা গোটা ‘ভ্যালু ক্রিয়েশন চেন'-এর জন্য সমাধানসূত্র দিতে চাই৷''
মাঠে বীজ বপন থেকে শুরু করে উৎপাদিত ফসল প্যাকেজিং ও তার পরিবহণ পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত সব ব্যক্তির জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি এড়াতে বিমা করা হচ্ছে৷ সুস এলাকার সমতলভূমিতে কৃষিকাজই আয়ের মূল উৎস৷ কিন্তু খরা থেকে বন্যা – চরম আবহাওয়ার সব রূপই বড় সমস্যা হয়ে উঠছে৷
আঞ্চলিক রাজধানী তারুদঁ-য় স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে চরম আবহাওয়ার প্রভাব সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে৷ প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যা গোটা অঞ্চলের ক্ষতি করছে৷ রাস্তাঘাট ও সেতু বিশেষভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে৷ কিন্তু সমস্যা মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট অর্থ নেই৷ সেখানকার পৌরসভার সভাপতি সমাইল এলহারিরি বলেন, ‘‘শহরের সেতুসহ সব অবকাঠামোর সুরক্ষার ব্যয়ের মাত্রা জানতে আমরা এক রিপোর্ট তৈরি করেছিলাম৷ দেখা গেল, ৮ লক্ষ ইউরোর বেশি ব্যয় হবে৷ শহর কর্তৃপক্ষ তার ২০ শতাংশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৩০ শতাংশ দেবে৷ বাকি ৫০ শতাংশের জন্য আমাদের দাতা খুঁজতে হবে৷''
কয়েক সপ্তাহ আগে মোবাইল ফোনে তোলা একটি ভিডিও দেখলে বন্যার নাটকীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়৷ বন্যার ফলে অনেক সেতু ধ্বংস হয়ে যায়৷ স্থানীয় কর্তৃপক্ষর সামর্থ্য না থাকলে তার মেরামতি হয় না৷ তখন তাজা ফল ও সবজির সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে৷ এমন সমস্যার সমাধানে তড়িঘড়ি এমন কোনো পদক্ষেপ নিলে চলে না, যা আবার বৃষ্টি হলে অর্থহীন হয়ে পড়বে৷ মাক্সিম সুভিনিয়ে বলেন, ‘‘তারুদঁ শহরে কোনো সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হলে উৎপাদন এবং এইত মেলোউল শহরের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতে পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে৷ ফলে গোটা শৃঙ্খলের ক্ষতি হবে৷ তারুদঁ শহরে একটি সেতুর ক্ষতির কুফল গোটা অঞ্চলকে ভোগ করতে হবে৷'' এইত মেলোউল শহরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি গোটা এলাকার তাজা ফলমূল ও শাকসবজি সংগ্রহ করে রপ্তানি করে৷ জোগানদাররা তাদের পণ্য সরবরাহ না করতে পারলে অর্থনীতির ক্ষতি হয়৷ মরক্কোর কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানির ৯০ শতাংশ এখান থেকেই চালিত হয়৷
সুভিনিয়ে-র জলবায়ু বিমা স্কিমের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে৷ নির্দিষ্ট মাত্রায় বৃষ্টি হলে বিমা কোম্পানি টাকা দেবে৷ তাতে ক্ষতির মাত্রাও নথিভূক্ত করতে হবে না৷ এইত মেলোউল শহরের ৪০০ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কথা ভেবে এই স্কিম ভাবা হয়েছে৷ মাক্সিম সুভিনিয়ে বলেন, ‘‘আমরা সরাসরি কোম্পানিগুলির সঙ্গে কাজ করি না৷ তাদের নাগাল পাওয়া কঠিন৷ আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ ও সংগঠনের সাহায্য ছাড়া নতুন প্রস্তাব দেওয়া বেশ জটিল৷ সে কারণে আমরা আঞ্চলিক বিনিয়োগ কেন্দ্রের মতো সহযোগীর সঙ্গে কাজ করি৷''
স্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি পরিস্থিতির গুরুত্ব সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন৷ একটি কোম্পানি নিজস্ব প্লান্টেশনে উৎপাদিত ফল বাক্সবন্দি করে৷ কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে তাপপ্রবাহ কমলালেবু গাছের জন্য ভালো নয়৷ আবার বন্যা হলে গাছে ছত্রাকের সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে৷ কোম্পানির প্রধান মনে করেন, বর্তমান বিমা স্কিমগুলি সঠিক দিশায় পদক্ষেপ হলেও এখনো ঘাটতি রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক বিষয় এখনো বিমার আওতায় আসেনি৷ আর লাল ফিতের ফাঁস তো আছেই৷ বিমা থাকলে ক্ষতির কারণ হিসেবে যদি জলবায়ু পরিবর্তন প্রমাণিত হয়, তাহলে কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না৷ কিছু হতে অনেক সময় লাগে৷''
নতুন জলবায়ু বিমা এই পরিস্থিতির উন্নতি করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ বাণিজ্য চেম্বারে এক কর্মশালায় বিমা কোম্পানি, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও সংঘের প্রতিনিধিরা একত্র হয়েছেন৷ প্রকল্পের সমন্বয়ক মাক্সিম সুভিনিয়ে অবশ্যই রয়েছেন৷ শুধু নতুন বিমা স্কিম সৃষ্টি করাই লক্ষ্য নয়, প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও কীভাবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে৷
মাবেল গুন্ডলাখ/এসবি