জাতিসংঘ জলবায়ু প্রধান ইভো ডি বোয়ারের পদত্যাগ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০এ পরিপ্রক্ষিতেই বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেছেন জাতিসংঘের বিশ্ব জলবায়ু চুক্তি প্রক্রিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তা ইভো ডি বোয়ার৷
ইভো ডি বোয়ের জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কাঠামোগত সম্মেলনের প্রধান নির্বাহী৷ একটি বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তির মিশনে যথেষ্টই অপেক্ষা করেছেন তিনি৷ কিন্তু শেষপর্যন্ত কোনো কার্যকর চুক্তিই হল না৷ ফলে প্রায় টানা চার বছর বিরামহীনভাবে কাজ করার পর পদত্যাগের সিদ্ধান্তই তাঁর কাছে যথার্থ মনে হয়েছে৷
এক বিবৃতিতে ডি বোয়ার বলেছেন, ‘‘আইনগত বিবেচনায় কোপেনহেগেন আমাদেরকে কোনো স্পষ্ট চুক্তি দিতে পারেনি৷ তবে, একটি কম নির্গমনের বিশ্ব গড়ার দিকে এগিয়ে যেতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং বোঝাপড়ার দিক থেকে এটা অনেক৷''
ডি বোয়ার বলেন,‘‘ আমি সবসময়ই বলে এসেছি যে, সরকারগুলো প্রয়োজনীয় নীতি কাঠামো নিশ্চিত করবে, কিন্তু আসল সমাধানটা হতে হবে বাণিজ্য ক্ষেত্র থেকে৷''
অনেক জল্পনা কল্পনা প্রচারণার পর গত বছরের ডিসেম্বরে কোপেনহেগেনে যে জলবায়ু চুক্তিটি হয়েছে তাকে বস্তুতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলের একটি পেছন দরজার সমঝোতা বললেও অত্যুক্তি হবে না৷ এই চুক্তির তিন পৃষ্ঠার নথিতে না আছে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা, না আছে নির্গমন কমানোর কোনো দীর্ঘমেয়াদী বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা৷
সম্মেলন শেষ হয়েছিল ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সদস্য দেশগুলোর সরকারের তরফে এই চুক্তিটির আইনি অনুমোদন করার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে৷ কিন্তু মন্দের ভাল এই চুক্তির কপালে শেষ পর্যন্ত তাও জুটলো না৷ ওই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পরও সংশ্লিষ্ট ১৯০টিরও বেশি দেশের মধ্যে ৬০টিরও কম দেশ এতে স্বাক্ষর করেছে৷
অনেক উন্নয়নশীল দেশে এবং বেসরকারি সংস্থা অভিযোগ করছে যে, কোপেনহেগেন চুক্তি প্রকারান্তরে বহু বছরের প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা বহুপাক্ষিক সমঝোতার প্রক্রিয়াকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে৷
ক্যানাডার বৃহত্তম এনজিও ‘কাউন্সিল অফ ক্যানাডা'র আন্দ্রিয়া হার্ডেন দোনাহুয়ে বলছিলেন, ‘‘এই চুক্তিটি সঠিক পথের দিকে এগোয়নি৷ এটা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো হয়ে গেছে, যেখানে মুষ্টিমেয় কিছু বড় দেশই সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে৷''
বার্তা সংস্থা আইপিএস'কে দোনাহুয়ে আরও বলেন, ‘‘হয়তো ডি বোয়ারের পদত্যাগ নতুন পথও খুলে দিতে পারে৷ এর প্রতিক্রিয়ায় হয়তো এই চুক্তিটি পরিত্যক্ত হতে পারে এবং আলোচনা আবার সঠিক পথে এগোনোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে৷''
ওদিকে, জাতিসংঘের এ দায়িত্ব থেকে বিদায় নিয়ে ডি বোয়ার এখন বিশ্বে পেশাদারদের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন এবং পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ‘কেপিএমজি' তে ‘জলবায়ু এবং টেকসই উন্নয়ন' বিষয়ে বৈশ্বিক উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেবেন৷
প্রতিবেদন : মুনীর উদ্দিন আহমেদ
সম্পাদনা : আবদুস সাত্তার