জাপানে টাইফুন শানশান: মুষলধারে বৃষ্টি, বিঘ্নিত যোগাযোগ ব্যবস্থা
টাইফুন শানশানের প্রভাবে শুক্রবার জাপানে মুষলধারে বৃষ্টি নামে৷ ঝুঁকিতে আছেন ৪০ লাখ মানুষ৷ ঝড়ের কেন্দ্র থেকে কয়েকশ মাইল পর্যন্ত বন্যা এবং ভূমিধসের জন্য সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ৷ যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও নেমেছে বিপর্যয়৷
বিধ্বস্ত কিউশু
কিউশুর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৃহস্পতিবার আঘাত হেনেছে ঝড়টি৷ কর্তৃপক্ষ বলছে, এই অঞ্চলে আঘাত হানা ঝড়গুলোর মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী৷ ফুকুওকা শহরের সব দোকানপাট বন্ধ, রাস্তাঘাটেও নেই মানুষের কোনো উপস্থিতি৷ কিউশু ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি জানিয়েছে, কিউশুর সাতটি এলাকার অন্তত এক লাখ ২৫ হাজার পরিবার বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে৷ কোথাও ভেঙে পড়েছে বাড়ি-ঘর, বিদ্যুতে খুঁটি৷
ট্রাকও উড়ে যেতে পারে
জাপানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই ঝড়ে কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং ৭৮ জন আহত হয়েছেন৷ টাইফুনটি শুক্রবার সকালের দিকেও উপকূলীয় শহর কুইনসাকিতে অবস্থান করছিল এবং উত্তর-পূর্বে অগ্রসর হচ্ছিল৷ ওইসময় টাইফুনের প্রভাবে সৃষ্ট বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১১২ মাইল৷ এই ঝোড়ো হাওয়া চলন্ত ট্রাক উড়িয়ে দেয়ার মতো শক্তিশালী বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর৷
ঝুঁকিতে ৪০ লাখ মানুষ
সারা দেশের ৪০ লাখেরও বেশি মানুষকে যেকোনো সময় নিজ বাসা-বাড়ি ছেড়ে নিরাপদে সরে যেতে হতে পারে বলে সতর্কতা দিয়েছে জাপান সরকার৷ এজন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে৷ বিশেষ করে কিউশু, রাজধানী টোকিও এবং ইয়োকোহামার কিছু অঞ্চলের জন্য এই বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷ ইয়োকোহামা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারি বৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে৷
স্থবির যোগাযোগ ব্যবস্থা
অ্যানা হোল্ডিং, জাপান এয়ারলাইনসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো শত শত অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ও কিছু সংখ্যক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে৷ শুক্রবার সকালে টোকিও এবং কেন্দ্রীয় শহর নাগোয়ার মধ্যে বুলেট ট্রেনসহ অনেক ফেরি এবং রেল পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে৷ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, টাইফুন শানশান সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়৷
দুশ্চিন্তায় পর্যটক ও সাধারণ যাত্রী
কিউশু থেকে ট্রেনে করে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কোকোরো ওসোগাওয়া৷ বললেন, ‘‘টাইফুনের কারণে কোনো ট্রেন নেই৷ তাই আমার বাবা-মা আমাকে নিতে আসছেন৷ আমি এক বন্ধুর বাড়িতে ছিলাম৷ ভেবেছিলাম, হয়তো একটা ট্রেন পেয়ে যাবো, কিন্তু কোনোটিই নেই৷’’ জাপানে আটকা পড়েছেন তাইওয়ানের ৬০ বছর বয়সি লিন ইউ-হুয়া৷ বৃহস্পতিবার ফুকুওকা থেকে তার বাড়ি ফেরার ফ্লাইট বাতিল করা হয়৷ কখন ফিরতে পারবেন তিনি জানেন না৷
উৎপাদনে টাইফুনের প্রভাব
টয়োটা, নিসান, হোন্ডার মতো জায়ান্ট গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কারখানা বন্ধ রেখেছে৷ ইলেকট্রনিক্স পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সনিকেও বন্ধ রাখতে হয়েছে তাদের উৎপাদন৷ সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রেনেসাস এবং টোকিও ইলেক্ট্রন দুর্যোগের কারণে কারখানা সাময়িক বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে৷