জার্মানদের জীবনে আবারো ফিরে আসছে গান আর ছন্দ
২৫ ডিসেম্বর ২০১০গানের ভুবনে জন্ম রুডল্ফ টিয়েরশ-এর৷ তাঁর বয়স যখন খুব অল্প, তখন বন্ধুরা বাড়িতে আসতো ছুটির দিনগুলোতে৷ রান্নাঘরে বসতো আড্ডা, চলত খাওয়া দাওয়া৷ আর সেই সঙ্গে গান৷ সেই সময় বাড়িতে বাড়িতে টেলিভিশন ছিল না৷ গানের সঙ্গে বাজানো হত গিটার৷ অনেক ছোট বেলা থেকেই টুং-টাং সুর তোলা হত গিটারে৷
টিয়েরশ-এর বয়স এখন ৫০৷ পুরনো দিনের সেই গানের সুরে মাখা সোনালি দিনগুলো আজ কেবলই স্মৃতি৷ স্মৃতি শুধু গান গাওয়ার জন্য নয় বরং বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে গান গাওয়া এবং গেয়ে যাওয়া৷
ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘গানের সেই দিনগুলো মানুষকে মানুষের আরো কাছে আনতে পারতো৷ ধর্ম অথবা দেশ যে কোন বিষয় নিয়েই গান গাওয়ার প্রথা ছিল৷ গানের মাধ্যমে সবাইকে কাছে আনা সহজ৷ কারণ যে কেউই একটু চেষ্টা করলে গান গাইতে পারে৷ সবার পক্ষে গিটার বাজানো বা পিয়ানো বাজানো সম্ভব নয় – কিন্তু গান যে কেউই গাইতে পারে৷'' কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়৷
জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলের লোকসংগীতের শিকড় লুকিয়ে আছে দ্বাদশ শতাব্দীতে৷ তখন মিনেসিঙ্গাররা পথে পথে ঘুরে ঘুরে প্রেম আর ভালবাসার গান গাইতো৷ আমাদের দেশের বাউলের মত৷ এরপর সময়ের সঙ্গে তাল রেখে প্রেম আর ভালবাসার হাত ধরে গানের এই তীব্র স্রোতে চলে আসে ধর্ম, সমাজ-জীবন আর মানুষের জীবন কাহিনী৷ উনবিংশ শতাব্দীতে এসে গান পরিণত হয় উচ্চ মার্গের এক শিল্পে৷ গান হয়ে ওঠে শিল্পের আত্মা৷
এরপর এসেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ৷ মানুষের জীবনের অন্তঃস্থল থেকে হারিয়ে গিয়েছিল গান৷ মানুষকে দূরে রেখে সংগীত, সংগীতের মূর্ছনা পার করেছে কঠিন এক সময়৷ বিভক্ত হয়েছিল জার্মানি৷ আজ জার্মানির একত্রীকরণের কুড়ি বছর পর পার হয়ে গেছে৷ বেশ কয়েক দশক ধরে মানুষের জীবনে গান আর তেমন প্রাধান্য পায় নি৷ অনেকেই ভুলে গেছেন সুর তুলতে, সুরের সঙ্গে তাল রাখতে৷ কিন্তু ভোলেননি রুডল্ফ টিয়েরশ৷ গানের জন্য ভালবাসার কমতি কখনোই তাঁর মধ্যে ছিল না৷ আজ তিনি একজন সফল কয়ারমাস্টার৷ বৃন্দগানের দলের নির্দেশক৷ জার্মানির পূর্বে ফ্রাঙ্কফুর্ট আন ড্যার ওডার শহরে একটি সংগীত ভবনের প্রধান রুডল্ফ টিয়েরশ৷
টিয়েরশ চেষ্টা করছেন মানুষের জীবনে প্রতিদিন সংগীতের পরশ দিতে৷ গানের ভুবন তাঁর কাছে একটি সামাজিক নেটওয়ার্কের মত৷ গান তাঁর কাছে সমাজের মধ্যে যেন আরেকটি বিশাল নিষ্পাপ সমাজ৷ সেখানে নেই একাকিত্ব, রয়েছে শুধু স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক