জার্মানিতে তুর্কি নাগরিক
৩ আগস্ট ২০১৩১৯৮২ সালের অক্টোবরে জার্মানির (পশ্চিম) তৎকালীন রাজধানী বনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোল৷ সেই বৈঠকে কোল জানান, তুর্কি অভিবাসীদের মধ্য থেকে একটি বড় অংশকে জার্মানি থেকে তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে, কেন না তাদেরকে জার্মান সমাজের মূল ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা সম্ভব নয়৷ বৃহস্পতিবার স্পিগেল অনলাইন এই তথ্য প্রকাশ করেছে৷
স্পিগেল পত্রিকা কোল এবং থ্যাচারের মধ্যকার বৈঠকে আলোচিত বিষয়াদি নিয়ে তৈরি ‘নোট' থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়েছে৷ নিয়ম অনুযায়ী ৩০ বছর এসব নোট গোপন রাখা হয়েছিল৷ এরপর ব্রিটিশ সরকার সেগুলো প্রকাশ করে৷
বনের সেই বৈঠক নোট করেছিলেন থ্যাচারের ব্যক্তিগত সেক্রেটারি এ.জে.কোলস৷ এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘চ্যান্সেলর কোল বলেছেন....আগামী চার বছরের মধ্য জার্মানিতে অবস্থানরত তুর্কি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনার প্রয়োজন হবে৷ তবে কোল জনসমক্ষে তাঁর এই পরিকল্পনার কথা জানাননি৷''
কোলসের তৈরি নোট অনুযায়ী, জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, ‘‘বর্তমানে যে সংখ্যক তুর্কি রয়েছে তাদের সবাইকে জার্মান সমাজের মূল ধারায় অঙ্গীভূত করা সম্ভব হবে না৷''
জার্মানির রক্ষণশীল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ-র সদস্য কোল ১৯৮২ সালে চ্যান্সেলরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন৷ এরপর সামাজিক গণতন্ত্রী এবং সবুজদের নিয়ে তৈরি মধ্যবামপন্থী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তিনি৷ এই সরকার মূলত জার্মানিতে অভিবাসীদের জন্য উদার নীতি চালু করে৷
‘ভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি'
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দ্রুতই অর্থনৈতিক খাতে উন্নয়ন আনার চেষ্টা করে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি৷ এক্ষেত্রে সফলও হয় তারা৷ এই সাফল্যকে বিবেচনা করা হয় ‘‘ইকোনোমিক মিরাকেল'' হিসেবে৷ ১৯৬০ সালের দিকে তুরস্ক থেকে প্রচুর অতিথি শ্রমিক আনে জার্মানি৷ পাশাপাশি ইটালি, গ্রিস, পর্তুগাল, টিউনিশিয়া এবং সাবেক ইউগোস্লাভিয়া থেকেও অনেক শ্রমিক আসে৷
থ্যাচারের সঙ্গে বৈঠকে কোল বলেছিলেন, ‘‘জার্মানিতে পর্তুগিজ, ইটালীয় এবং এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়দের নিয়েও কোনো সমস্যা নেই৷ এসব দেশের নাগরিকরা ভালোভাবে সমাজের মূল ধারার সঙ্গে অঙ্গীভূত হচ্ছেন৷''
‘‘কিন্তু তুর্কিরা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি থেকে এসেছে...'', বলেন কোল৷ এক্ষেত্রে তুর্কি সমাজে জোরপূর্বক বিয়ের বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি৷
বর্তমানে তিন মিলিয়নের মতো তুর্কি বংশোদ্ভূত মানুষ জার্মানিতে বসবাস করছেন৷ এদের অনেকেই জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন৷ সামাজিক গণতন্ত্রী এবং সবুজ দল অভিবাসীদের বিষয়ে নিয়মনীতি উদার করার পর জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন তারা৷ বর্তমানে জার্মানির মোট জনসংখ্যা ৮২ মিলিয়ন, এদের মধ্যে সাত মিলিয়ন অভিবাসী৷
এআই/ডিজি (এপি, ডিপিএ, রয়টার্স)