জার্মানিতে নব্য নাৎসিদের হাতে খুন হয়েছেন যারা
জার্মানিতে ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে কুখ্যাত সংগঠন ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট আন্ডারগ্রাউন্ড (এনএসইউ) নব্য-নাৎসি’র সদস্যদের হাতে খুন হয়েছেন অন্তত দশ ব্যক্তি৷ সেই ঘটনার পাঁচ বছর পর সংগঠনটির একমাত্র জীবিত সদস্যের শাস্তি হয়েছে৷
দশ ভুক্তভোগী, দশটি বিয়োগান্তক ঘটনা
হত্যাকাণ্ডের শিকার দশজনের মধ্যে নয়জনই ছিলেন বিদেশি বংশোদ্ভূত৷ তবে যখন তাঁদের হত্যা করা হয়, তখন জার্মানিকে তাঁরা নিজের দেশ বানিয়ে নিয়েছিলেন৷ আর দশম ভুক্তভোগী হচ্ছেন একজন জার্মান পুলিশ কর্মকর্তা৷ তাঁদের প্রত্যেককে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল৷
এন্ভার সিমসেক
ফুলচাষী এন্ভার সিমসেককে (ছবিতে স্ত্রীসহ) ২০০০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আটবার গুলি করা হয়েছিল৷ ন্যুরেমবার্গের একটি কারপার্কের পাশে ফুল বিক্রি করতেন আটত্রিশ বছর বয়সি এই দুই সন্তানের বাবা৷ ধারণা করা হয়, ১৯৮৬ সালে তুরস্ক থেকে জার্মানিতে আসা সিমসেক হচ্ছেন এনএসইউ’র প্রথম শিকার, যাঁকে বর্ণবাদী মানসিকতা থেকে হত্যা করা হয়েছে৷
আব্দুররাহিম অজ্যুদোগরু
ন্যুরেমবার্গের আরেক ঘটনা৷ তুরস্কে জন্ম নেয়া দর্জি আব্দুররাহিম অজ্যুদোগরুকে ২০০১ সালের ১৩ জুন তাঁর দোকানে হত্যা করা হয়৷ সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ৪৯ বছর, আর তাঁর একমাত্র মেয়ের বয়স ছিল ১৯ বছর৷
সুলেইমান তাসকোপ্রু
সেই মাসেরই শেষের দিকে, অর্থাৎ ২০০১ সালের ২৭ জুন, সুলেইমান তাসকোপ্রুকে হামবুর্গে তাঁর বাবার ফল এবং সবজির দোকানে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ এক কন্যার বাবা তাসকোপ্রুর বয়স তখন ছিল ৩১ বছর৷
হাবিল কিলিচ
সে বছরেরই ২৯ আগস্ট ২৮ বছর বয়সি ফল এবং সবজি বিক্রেতা হাবিল কিলিচকে মিউনিখে তাঁর নিজের দোকানের মধ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ তাসকোপ্রুর মতো তাঁকেও মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়৷ সেই হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর ১২ বছর বয়সি কন্যা এবং স্ত্রী জার্মানি ছেড়ে চলে যান৷
মেহমেত তুরগুত
হামবুর্গের বাসিন্দা ছিলেন মেহমেত তুরগুত৷ তবে খুন হন জার্মানির উত্তরাঞ্চলের শহর রস্টকে৷ সেখানে এক বন্ধুর ড্যোনার কাবাবের রেস্তোরাঁয় কাজে সহায়তা করতে গিয়েছিলেন তিনি৷ ২০০৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সেই রেস্তোরাঁয় খুন হন তিনি৷ তাঁর মাথায় তিনটি গুলি করা হয়েছিল৷
ইসমাইল ইয়াসার
নিজের ড্যোনার কাবাবের রেস্তোরাঁয় খুন হন ইসমাইল ইয়াসার৷ ন্যুরেমবার্গে ২০০৫ সালের ৯ জুন তাঁকে পাঁচবার গুলি করা হয়৷ এক খদ্দের রেস্তোরাঁর কাউন্টারের পেছনে তাঁর মরদেহ খুঁজে পেয়েছিল৷ ৫০ বছর বয়সি ইয়াসার ছিলেন তিন সন্তানের বাবা৷
থেওডরস বুলগারিডেস
সেই ঘটনার কিছুদিন পর, ২০০৫ সালের ১৫ জুন, মিউনিখে নিজের তালাচাবির দোকেন খুন হন থেওডরস বুলগারিডেস৷ হত্যাকাণ্ডের শিকার একমাত্র গ্রিক বংশোদ্ভূত তিনি৷ ৪১ বছর বয়সি তিন সন্তানের জনক থেওডরস ছিলেন এনএসইউ’র হাতে খুন হওয়া সপ্তম ব্যক্তি৷
মেহমেত কুবাসিক
জার্মানির ডর্টমুন্ড শহরের এক ব্যস্ত সড়কের পাশে নিজের মুদি দোকানে খুন হন তুরস্কে জন্ম নেয়া মেহমেত কুবাসিক৷ ৩৯ বছর বয়সি এই তিন সন্তানের বাবাকে ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল বেশ কয়েকটি গুলি করা হয়েছিল৷
হালিত ইয়সগাট
জার্মানির কাসেল শহরে ২০০৬ সালের ৬ এপ্রিল হালিত ইয়সগাটকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ বাবার সঙ্গে একটি ইন্টারনেট ক্যাফে চালাতেন তিনি৷ সেখানেই হত্যা করা হয় তাঁকে৷ তুরস্কে জন্ম হলেও জার্মান পাসপোর্ট ছিল ২১ বছর বয়সি ইয়সগাটের৷ দিনে কাজ করতেন এবং রাতের বেলা নৈশস্কুলে লেখাপড়া করতেন হালিত৷
মিশেল কিসেভ্যাটার
জার্মানির হেইলব্রনে ২০০৭ সালের ২৫ এপ্রিল ২২ বছর বয়সি পুলিশ কর্মকর্তা মিশেল কিসেভ্যাটারকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ তিনি ছিলেন এনএসইউ’র হাতে খুন হওয়া দশম এবং সর্বশেষ ব্যক্তি৷