জার্মানিতে নির্বাচন
৩১ আগস্ট ২০১৩স্টারও আবার যেমন-তেমন হলে চলবে না: বড় বড় অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সিকে দিয়ে তৈরি করানো সব পোস্টার৷ তার যেমন ছবি, তেমন ক্যাপশন: উর্বর, পেশাদারি মস্তিষ্কপ্রসূত৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো: আজকের যুগে পোস্টার সেঁটে নির্বাচনী প্রচারণাকে সময়োপযোগী বলা চলে কিনা৷
সেপ্টেম্বরে নির্বাচন৷ বলতে কি, নির্বাচনী প্রচার এখনও ঠিকমতো শুরু হয়নি৷ তারই মধ্যে এসপিডি দল এক সমস্যার সম্মুখীন: তাদের নির্বাচনী পোস্টারগুলোর কাগজ কি কালিতে কোনো ভুল ছিল, তাই বৃষ্টিতে রং ধুয়ে সেগুলোর বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা হয়েছে৷ শেষমেষ পয়সা খরচ করে সেই সব পোস্টার সরাতে হয়েছে৷
নয়ত নির্বাচনের ছ'সপ্তাহ আগে প্রায় সব দলই তাদের এবারকার নির্বাচনী পোস্টারগুলো জন – এবং মিডিয়ার সমক্ষে পেশ করেছে৷ নির্বাচনের ঠিক দু'মাস বাকি থাকতে সেগুলো প্রকাশ্য স্থানে সাঁটার অনুমতি৷ কাজেই সব দেয়াল অথবা স্ট্যান্ড থেকেই নির্বাচনপ্রার্থী রাজনীতিকদের সহাস্য বদন আপামর জনতাকে অভিবাদন জানাচ্ছে৷ কোনো কোনো শহরের অবস্থা যেন বহু টিকিট লাগানো খামের মতো৷ তবে জার্মান নির্বাচনে এই পোস্টারগুলোর যে আজও একটা ভূমিকা আছে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও দ্বিমত নেই৷
সস্তার বিজ্ঞাপন, অথচ সকলেরই চোখে পড়ে
বড় বড় শহরে অতি কম সময়ের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পোস্টারের জুড়ি নেই, বলেন বিশেষজ্ঞরা৷ ওদিকে পৌর কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র নির্বাচনী প্রচারের জন্য আলাদা করে বিলবোর্ডের ব্যবস্থা করে থাকেন, কাজেই বিলবোর্ড ভাড়া করার খরচও নেই৷ তা না হলে পোস্টার লাগানো সংক্রান্ত বিশেষ আইন-কানুন, বিধিনিষেধ নেই৷ এমনভাবে পোস্টার লাগানো চলবে না যে যানচলাচলের ব্যাঘাত ঘটে৷ আর জার্মানিতে গাছগাছালির উপর ফেস্টুন ঝোলানোরও কোনো রীতি নেই৷ কোন দল কতটা জায়গা পাবে, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা হয়নি, কেননা তার কোনো প্রয়োজন পড়েনি৷ পোস্টার সাঁটার ভালো জায়গাগুলো যে দল আগে দখল করতে পারবে, তাদের৷
হালের নির্বাচনী প্রচার অভিযান টেলিভিশন কিংবা অনলাইন ছাড়া সম্ভব নয়৷ কিন্তু রাস্তা বা গলির মোড়ের কি রাজপথের রাউন্ড্যাবাউটের নির্বাচনী পোস্টার চিরন্তনী, তার চেয়ে সস্তার আর কোনো পথ কিংবা পন্থা নেই৷ তাই জার্মানির হালফ্যাশনের পাইরেটস দল, যারা নাকি ইন্টারনেটে বিশ্বাসী, তাদেরও নির্বাচনী বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ যাচ্ছে পোস্টার ছাপাতে৷
জার্মান নির্বাচনী পোস্টারগুলো সাবধানি, ভদ্র, রঙচঙে – কিন্তু বেশি রঙচঙে নয়৷ সামান্য ব্যঙ্গ-রসিকতা চলতে পারে, কিন্তু বাড়াবাড়ি করলে চলবে না৷ প্রার্থীদের ছবি দেখানো চলবে, কিন্তু সে ছবি সাম্প্রতিক ও বাস্তবসম্মত হতে হবে৷ টাচিং করে বয়স কমানো, কন্দর্পকান্তি অথবা হুরীপরী করে তোলার প্রথা জার্মানিতে নেই৷
বিজ্ঞাপন জগতের এক পণ্ডিত নাকি একবার বলেছিলেন: নির্বাচন বাদ দিলে, এভাবে দাঁতের মাজন বেচাও অসম্ভব৷ বাণিজ্যের সঙ্গে রাজনীতির বোধহয় সেখানেই তফাৎ৷