ব্যঙ্গ-কৌতুকের দল সংসদে ঢুকবে
৩১ আগস্ট ২০১৩গোড়াতেই একটা অর্ধসত্য ঠিক করে নেওয়া যাক৷ দলটির পুরো নাম হলো ‘‘শ্রম, আইনের শাসন, জীবজন্তুর অধিকার, অভিভাবকদের উৎসাহপ্রদান ও তৃণমূল গণতন্ত্রের উদ্যোগ দল''৷ জার্মান রাজনৈতিক দলগুলির ইতিহাসে দীর্ঘতম নাম৷ উদ্দেশ্য ছিল: সব ভোটারদের জন্যই কিছু একটা রাখা৷ সে প্রচেষ্টা সফল হয়েছে, কিন্তু গোটা নামটা মনে রাখা কারো পক্ষে সম্ভব নয়৷ তাই সংক্ষেপে: ‘দি পার্টাই', বা ‘দল'৷
দলের সদস্য হতে গেলে দ্বিতীয় যে গুণটি থাকা চাই, সেটি হলো, প্রচুর পরিমাণ বিয়ার পানের প্রবণতা ও ক্ষমতা৷ দলের নির্বাচনী কর্মসূচিতেই বলা আছে: ‘ডাস বিয়ার এন্টশাইডেট', অর্থাৎ ‘বিয়ারেই সিদ্ধান্ত'৷ যার অর্থ হতে পারে: বিয়ার খেয়ে ভোট দিন৷ দ্বিতীয়ত, কোন দল ভোটারদের বিনি খরচায় কি পরিমাণ বিয়ার খাওয়াচ্ছে৷
আসলে এসপিডি দল তাদের একটি পোস্টারে স্লোগান রেখেছিল: ‘ডাস ভির এন্টশাইডেট', অর্থাৎ ‘আমি' নয়, ‘আমাদের' কথা ভেবে, জনতার কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিন৷ স্লোগানটা অর্ধেক মানুষ বুঝতে পারেননি৷ আর যারা বুঝেছেন, তারাও শুধু হেসেছেন৷ এভাবেই ‘দি পার্টাই' প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনী স্লোগান, বোলচাল ইত্যাদির একটি ব্যঙ্গাত্মক সংস্করণ পরিবেশন করে৷
হামবুর্গের একটি প্রসিদ্ধ নিষিদ্ধ এলাকার বারে এই পার্টাই দলের কিছু সদস্যের দেখা পাওয়া যাবে – কেননা তাদের সব কিছুই প্ররোচনা৷ নয়ত এক হামবুর্গেই দলের ৭০০ সদস্য আছে, সারা জার্মানিতে ন'হাজার৷ উত্তরের ল্যুবেক শহরে তারা পৌরসভাতে একটি আসন জয় করতে পেরেছে৷ জার্মানিতে ব্যঙ্গ-কৌতুকের দ্বিতীয় বৃহত্তম পত্রিকা ‘টাইট্যানিক' হলো এই দলের মানসিক ঘরবাড়ি৷ বলতে কি, পত্রিকাটির কিছু সম্পাদক এই দলের প্রতিষ্ঠাতা৷
শব্দ নিয়ে খেলা
বাইরে থেকে যা ব্যঙ্গ-কৌতুক বলে মনে হয়, ঠিক সেই উপাদান দিয়েই এই দল বিশ্বের ও মানবজাতির উন্নতি করতে বদ্ধপরিকর৷ কিন্তু তাদের ১৩-দফা নির্বাচনী কর্মসূচিতে অর্থের চেয়ে অনর্থ, অর্থাৎ শব্দ নিয়ে খেলাই বেশি – যা বুঝতে জার্মান ভাষাটা জানা থাকা দরকার: যেমন ‘‘ফ্রাউয়েনকোটে'' শব্দটির অর্থ হলো মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ৷ ‘দল'-এর কর্মসূচিতে তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘‘ফাউলেনকোটে'', যার অর্থ দাঁড়ায় অলস, নিষ্কর্মা, কুঁড়েদের জন্য আসন সংরক্ষণ৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে মিশরের হোসনি মুবারকের মতো খাঁচায় পুরে বিচার করার দাবিও শুধু ‘দল'-ই তুলতে পারে৷
ব্যঙ্গ সর্বত্র: যেমন ‘দল' আগামী নির্বাচনে ১০০ শতাংশ ভোট সংগ্রহ করতে চায়৷ হামবুর্গের নতুন অপেরা হাউসকে জেপেলিন ওঠা-নামার স্টেশনে পরিণত করার আইডিয়াটাই বা কেমন? আসলে সব মিলিয়ে ‘দল' শুধু এটাই দেখাতে চাইছে: রাজনীতি যখন প্রহসন হয়ে ওঠে, তখন প্রহসনেরই বা রাজনীতি করতে আপত্তি কোথায়?
আপত্তি থাকবে কেন? ‘দল' অবলীলাক্রমে এবারকার সংসদীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অনুমোদন পেয়েছে৷