জার্মানি’র প্রতিবন্ধীরা
১১ ডিসেম্বর ২০১৩বসনিক খুশি মনেই কাজ করতে যান৷ প্রায় এক বছর যাবৎ ২৪ বছর বয়সি এই ব্যক্তি কোলনের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করছেন ও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ বসে থাকলে তাঁর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বোঝা যায় না৷ ‘স্পাসটিসিটি' রোগের কারণে ডান পা নাড়াতে পারেন না তিনি৷ ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ুসিস্টেম থেকে অসুখটি হয়৷ বসনিক জানান, ‘‘আমার ডান দিকে স্পাসটিসিটি হয়েছে, শুধু পায়ে৷''
প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ কাজ
কোলনের এই ওয়ার্কশপে প্রশিক্ষণের কাজ পাওয়ার আগে বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করেছেন তিনি৷ কিন্তু সুবিধা হয়নি৷ তবে কোলনের ওয়ার্কশপে মানিয়ে নিতে পারছেন তিনি৷ ভালও লাগছে৷ বসনিক বলেন ‘‘আজ বেশ শান্ত৷ সবসময় এইরকম নয়৷ ক্রিসমাসের বাজার আমরা প্রায় শেষ করে ফেলেছি৷'' বসনিক কোলনের জনকল্যাণমূলক একটি কাঠের ওয়ার্কশপে কাজ করেন৷ প্রতিবন্ধীদের জন্য জার্মানির ৭০০ ওয়ার্কশপের মধ্যে এটি একটি৷
তাঁর কাজের জন্য ৫.১১ ইউরো পান বসনিক৷ এক ঘণ্টা বা এক দিনের নয় বরং এক মাসের বেতন এটি৷ প্রশিক্ষণ শেষ হলে বেশি টাকা পাবেন৷ ‘‘বেতন মাসে ৭৫ ইউরো থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় ৮০০ থেকে ৯০০ ইউরোতে৷ জার্মানিতে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে গড় বেতন ২৩০ ইউরো,'' বলেন ওয়ার্কশপের পরিচালক এঙ্গেলব্যার্ট বেকার৷ এই অল্প টাকা দিয়ে জীবনধারণ করা সম্ভব নয় বলে সরকার বাকিটা পূরণ করে দেয়৷ এর ফলে মোটামুটি চলে যায় কর্মীদের৷ বেকার বলেন, তিনি আরো বেশি বেতন দিতে ইচ্ছুক৷ ‘‘সমস্যা হলো আমরা একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান৷ আমি তো আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করতে পারি না৷''
প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা
ওয়ার্কশপগুলিকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হয়৷ ক্রিসমাসের বাজারের জন্য হাতের কাজের জিনিসের পাশাপাশি কোলনের ওয়ার্কশপটিতে গাড়ির অংশ, জানালার ফ্রেম, সোলার মডিউলের জন্য সাপোর্ট ইত্যাদি তৈরি করা হয়৷
মূলত এই ধরনের ওয়ার্কশপগুলি সাধারণ কর্মবাজারে যাওয়ার একটা সোপান হিসাবে ধরা হয়েছিল৷ কিন্তু বাস্তবের চিত্রটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্যরকম৷ ওয়ার্কশপের কর্মীরা সাধারণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করার তেমন সুযোগ পান না, বা তাদের আগ্রহও থাকে না৷
প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ম মেনে চলে না
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলির কমপক্ষে ৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী কর্মীকে নিয়োগ দেওয়ার কথা৷ কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানই এই নিয়মটা মেনে চলতে চায় না৷ এর চেয়ে বরং তারা কিছু খেসারত দিতেও প্রস্তুত৷ কিন্তু এমনটা হওয়া উচিত নয়, বলে মনে করেন প্রতিবন্ধী এসোসিয়েশনের প্রধান ইলিয়া সাইফার্ট৷ ‘‘কেউ আইন অমান্য করলে দণ্ড পাওয়া উচিত৷ সামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়েই পার পেয়ে যাওয়াটা ঠিক নয়৷''
সাইফার্ট কর্মবাজারে সামগ্রিকভাবে চিন্তাধারার একটা পরিবর্তন আশা করেন৷ কাজের চাপেও অনেক মানুষ ‘প্রতিবন্ধী' হয়ে পড়ে৷ ‘‘এটা হওয়া উচিত নয় যে কাজের চাপে মানুষ মানসিক দিক দিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং চাপটা কম বলে এই ধরনের ওয়ার্কশপে কাজ করা ছাড়া আর গতি থাকবে না৷''
কর্মবাজারে মানসিকতার সমস্যা ছাড়াও শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের প্রয়োজন বিশেষ সহায়ক৷ আর এজন্য প্রয়োজন অর্থ৷ ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবার পরিজনের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই কেবল সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অর্থ সাহায্য পাওয়া যায়৷
সাইফার্ট জানান, ‘‘অবশ্য গত বছরগুলিতে এক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি হয়েছে৷ ২০-২৫ বছর আগেও সরকারি যানবাহনে হুইল চেয়ার নিয়ে ঢোকার কথা কেউ চিন্তা করতে পারতো না৷ আজ শহরগুলিতে এটা কোনো সমস্যাই নয়৷ বাস একটু কাত হয় বা এজন্য বিশেষ প্রবেশ পথ থাকে৷''
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এব্যাপারে জার্মানির অবস্থান মধ্যম সারিতে৷ পূর্ব ইউরোপে প্রতিবন্ধীদের অবস্থাটা আরো খারাপ৷ অন্যদিকে স্ক্যান্ডিনেভিয়া অনেক দিক দিয়ে এগিয়ে আছে৷ এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে হলেও জার্মানিরও অগ্রগতি হচ্ছে৷