জার্মানিতে হামলায় নিহতরা ‘বিদেশি বংশোদ্ভূত’
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জানিয়েছেন, জার্মানির হানাও শহরের শিশাবারে বুধবার রাতের হামলার সঙ্গে সম্ভবত উগ্র ডানপন্থি চরমপন্থার সম্পর্ক রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘অন্য জাতিসত্ত্বা, ধর্ম এবং চেহারার প্রতি বিদ্বেষ থেকে হামলাকারী উগ্র ডানপন্থি চরমপন্থা, বর্ণবাদী উদ্দেশ্যে এই হামলা চালিয়েছে বলে এই মুহূর্তে নানা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷’’
তিনি বলেছেন, ‘‘বর্ণবাদ একধরনের বিষ৷ ঘৃণা একধরনের বিষ৷ আর এই ঘৃণা আমাদের সমাজে এখনো আছে৷’’
হানাও হামলার পর বৃহস্পতিবার দেয়া বক্তব্যে চ্যান্সেলর ম্যার্কেল আরো বলেন, জার্মানি প্রতিটি মানুষের সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর, তা তিনি যে বর্ণের বা জাতিরই হোন না কেন৷ সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে গতকালের হামলার শিকার এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় থাকা জার্মানির এই চ্যান্সেলর৷
প্রসঙ্গত, স্থানীয় সময় বুধবার রাত দশটার দিকে হানাও শহরের একটি শিশাবার এবং পার্শ্ববর্তী ক্যাফেতে প্রবেশ করে গুলিবর্ষণ করে ৪৩ বছর বয়সি বন্ধুকধারী৷ সেখানে বেশ কয়েকজন হতাহত হন৷ এরপর হামলাকারী সেই ঘটনাস্থল থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে একটি গাড়ি এবং স্পোর্টস বারেও হামলা চালায়৷ সেখানেও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে৷ পরবর্তীতে হামলাকারী এবং তার মা-কে মৃত অবস্থায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ৷
হামলাকারী অতীতে আরব এবং মুসলমান দেশগুলো সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিল বলে জানা গেছে৷ বুধবারের হামলার দায় স্বীকার করা হয়েছে এমন একটি চিঠি এবং ভিডিও বার্তাও পরীক্ষা করছে পুলিশ৷
এদিকে, বুধবারের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন তুর্কি নাগরিক ছিলেন বলে দাবি করেছেন জার্মানিতে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত আলী কামাল আয়দিন৷ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে লিখেছে, ‘‘এই হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, ইউরোপে ‘বর্ণবাদ এবং ইসলামবিদ্বেষ’ বাড়ছে৷’’
হানাওয়ে হামলার ঘটনার পর জার্মানির চারটি সবচেয়ে বড় ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন উগ্র ডানপন্থিদের চরমপন্থা রুখতে আরো উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে৷ মুসলমানদের সমন্বিত কাউন্সিল কেআরএম জানিয়েছে, তারা গত কয়েকমাস ধরেই ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে একটি পরিষ্কার অবস্থান নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছে আসছিলেন৷
এদিকে, হানাও হামলার ভুক্তভোগীদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বাৎসরিক কার্নেভাল উৎসব বাতিল করেছে ডয়চে ভেলে৷ শুক্রবার ডয়চে ভেলের প্রধান কার্যালয়ে এই উৎসব আয়োজনের কথা ছিল৷ প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক পেটার লিমবুর্গ এক বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘‘হানাওতে বর্ণবাদী সন্ত্রাসী হামলা এক অবিশ্বাস্য ঘটনা৷ ডয়চে ভেলেতে আমরা সবাই প্রতিদিন যে মূল্যবোধ ধরে রাখতে কাজ করি, সেই মূল্যবোধের উপর এই হামলা হয়েছে৷ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যময়তা জার্মানিকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে এবং আমাদের সমৃদ্ধ করেছে৷ এই কাপুরুষোচিত হামলা আমাদেরকে আমাদের নীতি থেকে সরাতে পারবে না৷’’
তিনি লিখেছেন, ‘‘যখন অন্যরা বিলাপ করছে, তখন আমরা উৎসব করতে পারি না৷ ভুক্তভোগীদের পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি৷ একটি আন্তর্জাতিক এবং অসাম্প্রদায়িক গণমাধ্যম হিসেবে আমরা এই বার্তাও দিতে চাই যে, জার্মান সমাজে এসব চলতে পারে না৷’’
উল্লেখ্য, জার্মানিতে গত কয়েকবছরে মসজিদসহ মুসলমানদের উপর হামলার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে৷ দেশটি ২০১৫ সালে দশলাখের বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার পর এধরনের হামলা বেড়ে যায়৷
এআই/এসিবি (এপি, এএফপি, ডিপিএ)