জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা
১৯ ডিসেম্বর ২০১১আশি এবং নব্বইয়ের দশকে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বাইরে থাকার জায়গা পাওয়া ছিল অত্যন্ত কঠিন৷ সেই সময় সহজে কেউ কোন ছাত্র বা ছাত্রীকে বাড়ি ভাড়া দিতে চাইতো না৷ এখন সমস্যা অবশ্য অন্যখানে৷ এ বছর জার্মানিতে দ্বিগুন সংখ্যায় ছাত্র-ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে৷ যার ফলে আবাসিক হলগুলো কানায় কানায় ভর্তি৷ কিন্তু তারপরেও অনেক ছাত্র-ছাত্রীই থাকার কোন জায়গা পায়নি৷ অত্যন্ত চড়া ভাড়ায় এদের বাসা নিতে হয়েছে৷
কিন্তু একজন ছাত্র বা ছাত্রীর পক্ষে চারশো বা পাঁচশো ইউরোর বেশি দিয়ে বাড়ি ভাড়া করে থাকা সম্ভব নয়৷ তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অন্তত ছয় মাস আগে থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বলে দেয়া হয় স্টুডেন্ট ডর্মে একটি রুমের জন্য আবেদন করতে৷ তিয়ানা মিলুনোভিচ জানালো, ‘‘এটা আমার রুম৷ রুমে একটি বুক শেল্ফ রয়েছে৷ একপাশে হাতমুখ ধোয়ার জন্য একটি বেসিন৷ কাপড় রাখার একটি ওয়ারড্রোব৷ একটি ছোট বিছানা৷ আর রয়েছে বিশাল একটি পড়ার টেবিল৷ রুমটি খুবই ছোট৷ মাত্র ১১ স্কয়ার ফিট৷''
স্টুডেন্ট ডর্ম সবচেয়ে সস্তা
২৫ বছর বয়সি তিয়ানা সার্বিয়া থেকে এসেছে৷ কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টেনভ্যার্ক অর্থাৎ ছাত্র কল্যাণ সংস্থার সাহায্যে তিয়ানা এই রুমটি পেয়েছে৷ অন্য আরেকটি হলে রুম চেয়েছিল তিয়ানা সেখানে রুম না থাকায় অন্য আরেকটি ডর্মে তাকে পাঠানো হয়েছে৷ এই হলটি বেশ পুরনো৷ করিডরগুলো সারাক্ষণই অন্ধকারে ডুবে থাকে৷ কমন বাথরুম৷ কেউই ঠিকমত পরিষ্কার করে রাখে না৷ অনেক ছাত্র-ছাত্রীই এ ধরণের পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে না৷ তাই তারা তিন-চারজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়৷ কথাগুলো জানান স্টুডেন্টেনভ্যার্কের মুখপাত্র কর্নেলিয়া গেরেকে৷ ডর্মের রুম প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘আমাদের ডর্মে প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে একটি পরিপূর্ণ রান্নাঘর৷ রান্নার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের শুধু খাবার কিনে নিতে হয়৷ প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে দুটি করে বাথরুম৷ প্রতিটি রান্নাঘরের সঙ্গে রয়েছে বিশাল বারান্দা৷ এবং রুমগুলো অন্তত ১৭ স্কয়ার ফুট৷ ভাড়া ২৩১ ইউরো৷ সবকিছু মিলে৷ আলাদা করে পানি, বিদ্যুৎ না গ্যাসের খরচ দিতে হয় না৷ এত সহজে, এত কম খরচে কেউই থাকার জায়গা খুঁজে পাবে না৷''
আবেদন করতে হবে অন্তত ছয় মাস আগে থেকে
কোলনের স্টুডেন্টেনভ্যার্কের ইনফোপয়েন্টে অনেকেই রুম চেয়ে বা রুম খালি আছে জানিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়৷ তবে তা সবসময়ই করতে হয় সেমেস্টারের শুরুতে৷ একজন ছাত্র জানাল, ‘‘ছাত্র বা ছাত্রী হিসেবে এত কম খরচে থাকার সুযোগ আর কখনোই পাওয়া যাবে না৷'' আরেক ছাত্র বলল, ‘‘এই রুমগুলো খুবই সস্তা এবং এখানে অনেকেই থাকে বলে সবার সঙ্গে মেলামেশার এবং পরিচিত হওয়ার সুযোগও থাকে অনেক বেশি৷'' দেরি করে ফেলায় আরেক ছাত্রের আক্ষেপ, ‘‘আমি অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে রুম খুঁজছি৷ সেমেস্টার তখন শুরু হয়ে গেছে৷ আমি দেরি করে ফেলেছি৷ আমি ক্যাম্পাসের আশেপাশেই থাকার জায়গা খুঁজছি৷ আমাকে অন্তত আরো দুটি সেমেস্টার অপেক্ষা করতে হবে৷ কারণ সেমেস্টারের মাঝামাঝি সময়ে কেউই রুম ছাড়বে না৷''
বাবা-মা'ই শেষ ভরসা
জার্মান স্টুডেন্টেনভ্যার্কের জরিপ অনুযায়ী গোটা জার্মানির বারো শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী হলে থাকে৷ প্রায় ৩৭ শতাংশ বন্ধু বা বান্ধবীর সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকে৷ প্রায় এক চতুর্থাংশ থাকে ভেগে বা ভোনগেমাইনশাফটে৷ অর্থাৎ দুই-তিনজন মিলে সস্তায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়৷ আর বাকিরা থাকে বাবা-মায়ের সঙ্গে৷ চিকিৎসাবিদ্যার ছাত্র হারোল্ড স্টেগুভাইট বিদেশে একটি একটি সেমেস্টার কাটিয়ে ফিরে এসেছে জার্মানিতে৷ সে এখন থাকছে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে৷ হারোল্ড বলল, ‘‘যখন কোথাও থাকার জায়গা পাওয়া যায় না তখন বাবা-মা'ই ভরসা৷ আর এর ফলে খরচও অনেক বেঁচে যায়৷''
হারোল্ডের বাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই৷ কোন ভাড়া দিতে হচ্ছে না৷ কিন্তু তারপরেও হারোল্ড বলল, ‘‘বাবা-মায়ের কাছে সন্তান সবসময়ই শিশুর মত৷ সবসময়ই এরা বাচ্চাকে দেখে-শুনে রাখতে চায়৷ তাই আমাকে প্রায়ই শুনতে হয়ে, ‘‘রাত বারোটার আগে বাসায় আসোনি কেন? কোথায় ছিলে? নিজের ঘরটা এবার পরিষ্কার কর!''
হারোল্ড অনেকদিন ধরেই হলে একটি রুম খুজঁছে, কিন্তু পাচ্ছে না৷ ৬৪ হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সবাই থাকার জায়গা খুঁজে বেড়াচ্ছে৷ আর একারণেই পছন্দমত থাকার জায়গা পাওয়া হয়ে উঠেছে আরো বেশি কঠিন৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক