জার্মানিতে বৈশাখের অনুষ্ঠানে বাঙালিদের মিলনমেলা
২১ এপ্রিল ২০১১ম্যোয়েনশেন গ্লাডবাখ৷ জার্মানির এই শহর সেদিন পরিণত হয়েছিলো এক টুকরো বাংলাদেশে৷
বাংলা নতুন বছর ১৪১৮৷ নববর্ষকে পালন করতেই সেই আয়োজন৷ তবে নববর্ষটা যেন কেবল উপলক্ষ্য৷ আসলে যেন সেই উপলক্ষ্যকে সামনে রেখে সবার এক হওয়া৷
ম্যোয়েনশেন গ্লাডবাখের প্রবাসী বাংলাদেশিরা এবং নিডাররাইন ইউনির্ভাসিটি অফ অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সস এর বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা আয়োজন করেছিলো অনুষ্ঠান৷ জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এইচ.ই. মসুদ মান্নানের উপস্থিতি বিদেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে পরিপূর্ণ করে তুলেছিলো৷ সেই আয়োজনে শরিক হয়ে রাষ্ট্রদূত মসুদ মান্নান বললেন, ‘‘আমি খুশি হয়েছি যে জার্মানির এই অংশে অর্থাৎ ম্যোয়েনশেন গ্লাডবাখে যারা বসবাস করছেন তাঁদের সকলে দেশের স্মৃতিচারণ করার জন্য একটা উদ্যোগকে সামনে নিয়ে একত্রিত হয়েছেন, নববর্ষকে বরণ করছেন৷''
আয়োজনের সবকিছুতেই ছিল বাঙালিয়ানা৷ তবে যে দেশটিতে এই আয়োজন সেই দেশের মানুষদের বাদ দিয়ে তো আর অনুষ্ঠান পূর্ণতা পায়না৷ তাই বাংলা ভাষাভাষীদের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো এই শহর এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত জার্মান নাগরিকদেরও৷ আর সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন শহরের মেয়র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা৷
রাষ্ট্রদূত মসুদ মান্নান তাঁর বক্তব্যে আরো বললেন, ‘‘আরেকটি জিনিস ভালো লাগছে যে এই অনুষ্ঠান বাংলাদেশিরা শুধু একা করছে তা নয়৷ তারা তাদের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে সেখানকার শিক্ষকদের বা যেখানে কাজ করছে সেখানকার জার্মান কর্মকর্তা আছেন তাঁদেরকে৷ সবচেয়ে ভালো লেগেছে মেয়রের উপস্থিতি৷ মেয়র একটা ছুটির দিনে সময় করে এসেছেন আমাদের মাঝে৷ কাজেই আমি অত্যন্ত আনন্দিত৷ যে আজকের একটি সুন্দর একটি সঘন পরিবেশে আমরা বাংলা নববর্ষ উদযাপন করছি৷''
অন্যদিকে মেয়র নরবের্ট বুডে বললেন, ‘‘ম্যোয়েনশেন গ্লাডবাখ আন্তর্জাতিক একটি স্থান৷ কেননা, এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়৷ যেখানে ৫৭ টি দেশের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনা করেন৷ এই শহরে রয়েছে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ৷ যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশিরাও৷''
পোশাক-আশাক, কথা-বার্তা, খাওয়া-দাওয়া সবকিছুতেই ফুঠে উঠেছিলো বাংলার ঐতিহ্য৷
‘‘দেশে থাকলে যেরকম করে তাঁরা ভাত খেতেন, পোশাক পরতেন, আনন্দ করতেন বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে, তাঁদের আজকের এই প্রয়াস দেখে আমার তাই মনে হচ্ছে৷ খুব ভালো লাগছে তাঁরা পরবর্তী প্রজন্মের সামনে এই জিনিসটা তুলে ধরছেন৷ আশা করি তাঁদের মধ্যদিয়ে বিদেশে বাংলাদেশি সংস্কৃতিটা বহমান থাকবে৷''
রাষ্ট্রদূত আরও বললেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানির সম্পর্ক সার্বিকক্ষেত্রেই দৃঢ় হচ্ছে৷ সাংস্কৃতিক বিনিময়, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনা এবং বিদেশে যারা রয়েছেন তাঁদের ভালো থাকা, ভালোভাবে নিজেদের গড়ে তোলা, সবদিক থেকে জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রয়েছে৷
‘‘আজকের এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আপনারা বুঝতে পারছেন জার্মানরা কীভাবে আমাদের সংস্কৃতির চর্চাকেও উৎসাহিত করছে৷ কাজেই অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সবক্ষেত্রেই জার্মানির সঙ্গে আমাদের দারুণ একটা যোগাযোগ রয়েছে৷''
বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত৷ ‘‘এইযে বিশ্বকাপ ক্রিকেট আমরা আয়োজন করলাম, এতো সুন্দর করে যে আমরা ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ' দেখলাম যার মধ্য দিয়ে সুন্দরকরে কীভাবে দেশকে তুলে ধরা যায় অর্থাৎ মার্কেটিং এর ব্যাপারে আমাদের যে উন্নয়ন এটি একটি বিরাট ব্যাপার৷ প্রবাসে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি রয়েছে৷ তাঁরা বাংলাদেশে যে নিয়মিতভাবে অর্থ পাঠাচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে নিজেদের জড়িত রেখেছে এটা একটা বড় সাফল্য৷ আমি আশা করি সামনের দিনে এই নতুন বছরে আমরা আরও অনেক স্বার্থকতার মুখ দেখবো৷''
গান, নাচ, কবিতা, কৌতুকাভিনয়, ফ্যাশন শো - নানা উপচারে শেষ হলো বর্ষবরণ অনুষ্ঠান৷ তবে সবকিছুর মধ্যদিয়ে ফুটে উঠছিলো বাংলার আবহমান ঐতিহ্য৷
প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক