জার্মানিতে বিদেশি বিদ্বেষ
১৬ জুন ২০১৬ইউরোপ জুড়ে চরম দক্ষিণপন্থি ও ‘পপুলিস্ট' দলগুলির লাগাতার উত্থান যথেষ্ট দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কিন্তু জার্মানি বহুকাল এই প্রবণতা থেকে দূরে থাকতে পেরেছিল৷ তারপর ‘পেগিডা' আন্দোলন ও একের পর এক আঞ্চলিক নির্বাচনে ‘এএফডি' নামের রাজনৈতিক দলের সাফল্য জার্মানির রাজনৈতিক চালচিত্র বদলে যাচ্ছে৷ মূল স্রোতের দলগুলির সমর্থকদের একাংশ বীতশ্রদ্ধ হয়ে জনমোহিনী রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে৷ ফলে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক বিতর্কিত অবস্থান জার্মানিতেও অনেকের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য৷
এই প্রবণতা কতটা শিকড় গড়েছে? লাইপসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে একটি জনমত সমীক্ষায় এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে৷ ২০০২ সাল থেকে প্রতি দু'বছর পর পর এই সমীক্ষা চালানো হয়৷ সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, যে ব়্যাডিকাল চিন্তাধারা জার্মানির মানুষের কাছে আগের তুলনায় অনেক গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে৷ ফলে ‘খাঁটি জার্মান' ভাবধারার বাইরে সব কিছুর প্রতি ঢালাও বিদ্বেষের প্রবণতা বাড়ছে৷
তালিকার উপরেই রয়েছে ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, জার্মানিতে মুসলিমদের অভিবাসন বন্ধ করে দেওয়া উচিত৷ ২০১৪ সালে ৩৬.৬ শতাংশ মানুষ এমন মত পোষণ করতেন৷ তবে শুধু মুসলিম নয়, সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী থেকে শুরু করে সিন্টি ও রোমা জনগোষ্ঠীর মতো ‘বহিরাগত'-দের প্রতি বিদ্বেষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ এমনকি সমকামীদেরও সমাজে স্থান দিতে প্রস্তুত নয় অনেকে৷
দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, বহিরাগতদের প্রতি এই বিদ্বেষ শুধু এএফডি-র মতো দলের সমর্থকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই৷ সমাজের একটা বড় অংশে এমন চিন্তাধারা গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করেছে৷ ফলে সাধারণ বিদেশি-বিদ্বেষ থেকে শুরু করে নাৎসি মতবাদের প্রতি নরম মনোভাব আজ আর ততটা বিরল নয়৷ শুধু তাই নয়, আগের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ প্রয়োজনে হিংসার আশ্রয় নিয়ে এই মনোভাব কার্যকর করতে প্রস্তুত৷ তবে আশার কথা হলো, এমন প্রবণতা বেড়ে চলা সত্ত্বেও জার্মানির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ উগ্র দক্ষিণপন্থি চিন্তাধারা ও হিংসার বিরোধী৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিদ্বেষের মাত্রা কম৷
এসবি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ)