একমাত্র ইন্টারনেট স্কুল
৪ আগস্ট ২০১৪জার্মানির স্কুলগুলিতে গ্রীষ্মের ছুটি চলছে এখন৷ মিউনিখের ১৩ বছরের লিলির জন্য এটা কোনো বিষয় নয়৷ সে এখনও ক্লাস করছে৷ একইসঙ্গে বাবা-মার সঙ্গে টোঙ্গায় ছুটিও কাটাচ্ছে৷ তার মা-বাবা সেখানে একটি হোটেল চালান৷ লিলিও বছরে তিন মাস তাঁদের সঙ্গে সেখানে কাটায়৷ জার্মানি থেকে রবিন শাডে তাকে স্কাইপের মাধ্যমে গণিত ও ইংরেজি ব্যাকরণ পড়ান৷
লিলি মিউনিখে হাইস্কুল বা গিমনাসিয়ুমে পড়ে৷ পড়াশোনায় যাতে বাধা না পড়ে, সেজন্য টোঙ্গাতে বসেও সুবোধ ছাত্রীর মতো ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে সে৷ আর এক্ষেত্রে সাহায্য করছে জার্মানির একমাত্র ইন্টারনেট স্কুল৷ লিলি জানায়, ‘‘তিন বছর আগে আমি এটা শুরু করেছি৷ সত্যি খুব ভাল হচ্ছে৷''
তিন মাস টোঙ্গাতে থাকাকালীন বখুমের ‘ওয়েব ইনডুভিজুয়াল স্কুল'এর দুজন শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করে সে৷ এই ব্যবস্থা না থাকলে লিলিকে দীর্ঘদিনের জন্য টোঙ্গাতে আনা সম্ভব হতো না বলে জানিয়েছেন তার মা-বাবা৷
অনেকের জন্য সুবর্ণ সুযোগ
ইন্টারনেট স্কুলে সাত জন শিক্ষক নয় থেকে ২২ বছর বয়েসি ৯০ জনের মতো ছাত্রছাত্রীকে পড়ান৷ ১২ বছর আগে যাত্রা শুরু হয় স্কুলটির৷ যারা কোনো কারণে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না, তাদের সাহায্য করার জন্যই এগিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি৷
তবে ইন্টারনেট স্কুলটি পরীক্ষা নিতে বা নম্বর দিতে পারে না৷ ছাত্রছাত্রীদের তাদের হাউপ্টশুলে কিংবা রেয়ালশুলের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে হয় কোনো সহযোগী স্কুলে, সরকার অনুমোদিত পরীক্ষা-কমিশনের সামনে৷ এ পর্যন্ত ১৫০-এর বেশি শিক্ষার্থী ওয়েব স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে বের হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত কেউ ফেল করেনি৷
‘টোকিও হোটেল' সংগীত গোষ্ঠীর দুই ভাই বিল ও টম কাইলিৎস এই স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন৷ জাপান বা অ্যামেরিকা যেখানেই তারা গিয়েছেন, সেখানেই তারা হোটেলে বসে পড়াশোনা করেছেন৷ ইংরেজির পাশাপাশি গণিত ও ভূগোলে জ্ঞান অর্জন করেছেন জার্মান ভাষায়৷ শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে৷ কোনো জার্মান প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যারা বিদেশে কর্মরত, তাদের সন্তানরাও ইন্টারনেট স্কুলের সাহায্য নিয়ে থাকে৷
অধিকাংশই কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত
ওয়েব স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই শারীরিক বা মানসিক ক্রনিক রোগে আক্রান্ত, যাদের পক্ষে সাধারণ স্কুলে যাওয়া সম্ভব নয়৷ মাসে ৭৮০ ইউরো টিউশন ফি বহন করে ভারপ্রাপ্ত যুবদপ্তরগুলি৷
শুরুতে ইমেলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্কুলের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতো৷ ২০০৪ সাল থেকে পরিবর্তন শুরু হয়৷ আজ স্কাইপ, মোবাইল ও চ্যাটের মাধ্যমে ক্লাস করানো হয়৷
পড়াশোনা বা ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা হলে অনেক রাতেও শিক্ষকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা যায়৷ সাতজন শিক্ষক বখুম ও রুর অঞ্চলের আশেপাশের জায়গায় বসবাস করেন৷ অর্থাৎ ক্লাসরুমবিহীন স্কুলটি থেকে খুব বেশি দূরে থাকেন না তাঁরা৷ নিয়মিত স্কুলে চাকরি করার সুযোগ থাকলেও ওয়েব স্কুলে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই শিক্ষকরা৷
অটিস্টরাও আবরণ ছাড়তে পারে
আনা গেবার্স-ফ্রিটশে দুই বছর ধরে ১২ বছরের লেওনকে পড়াচ্ছেন৷ ছেলেটি অটিস্ট৷ অ্যাসপারজার্স সিনড্রোমে ভুগছে সে, অর্থাৎ মানুষের সংস্পর্শ পছন্দ নয় তার৷ তাই সানটেন শহরের হাউপ্টশুলেতে তাল সামলাতে পারছিল না লেওন৷ এখন সে নব উদ্যোমে ওয়েব স্কুলে পড়াশোনা করছে৷
কম্পিউটারের ‘পর্দার আড়ালে' মানুষের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করতে পারছে সে, বলেন শিক্ষিকা আনা৷ গতানুগতিক স্কুলে অটিস্টরা আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে আড়ষ্ট বোধ করে ও নিজেকে গুটিয়ে রাখে৷
আগ্রহ অনুযায়ী পাঠ্যসূচি
বখুমের ওয়েব স্কুলের শিক্ষকদের অধিকাংশই অতিরিক্ত বিশেষ কোর্স করেছেন৷ এছাড়া একজন মনস্তত্ত্ববিদ শিক্ষকদের সহায়ক হিসাবে পাশে থাকেন৷ বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কীরকম আচরণ করা উচিত, সে সম্পর্কে পরামর্শ দেন তিনি৷ ইন্টারনেট স্কুলের পাঠ্যসূচিও তৈরি করা হয় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ অনুযায়ী৷ যেমন অংক ক্লাসে হিসাব কষে বের করতে হয়, ফর্মুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়ন সেবাস্টিয়ান ফেটেল বছরে কত কিলোমিটার পার করেছেন৷ ভূগোলে সেই সব দেশ সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করা হয়, যেসব দেশে ফর্মুলা ওয়ান-এর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷
ইন্টারনেট স্কুল থেকে পাস করে বের হয়েছে ১৯ বছরের লিন মাক্স কেম্পেন৷ টেনিস খেলাকে ক্যারিয়ার হিসাবে বেছে নিয়েছে এই তরুণ৷ দৈনিক ছয় ঘণ্টা ট্রেনিং ছাড়াও বিভিন্ন দেশে টুর্নামেন্টে যেতে হয় তাকে৷ পাশাপাশি রেয়ালশুলের পরীক্ষার প্রস্তুতি সহজ ছিল না৷ ওয়েব স্কুলের সহায়তায় এই বৈতরণি পার হয়েছে লিন৷