জার্মানির কোচ ইওয়াখিম ল্যোভের উত্থান-পতন
ইওয়াখিম ল্যোভ প্রায় ১২ বছর ধরে জার্মান ফুটবল দলের কোচ৷ ৮০ বছর পর রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকে জার্মানি বিদায় নিলেও কোচ হিসেবে থেকে যাচ্ছেন তিনি৷
সময় ফুরায়নি
রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে লজ্জাজনকভাবে জার্মানির বেরিয়ে যাওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন কোচ হিসেবে ইওয়াখিম ল্যোভের সময় হয়ত ফুরিয়ে এসেছে৷ যদিও তাঁর চুক্তির মেয়াদ আছে ২০২২ সাল পর্যন্ত৷ মঙ্গলবার জানা গেছে, তিনি কোচ হিসেবে থেকে যাচ্ছেন৷ জার্মান ফুটবল ফেডারেশন, ডিএফবি তাঁর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে৷
খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড
খুব উল্লেখযোগ্য নয়৷ স্টুটগার্ট, ফ্রাংকফুর্ট ও কার্লসরুয়ের স্ট্রাইকার হয়ে বুন্ডেসলিগায় মাত্র ৫২টি ম্যাচ খেলেছেন৷ গোল করেছেন সাতটি৷ ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় তৎকালীন দ্বিতীয় বিভাগের দল ফ্রাইবুর্গের হয়ে খেলেছেন তিনি৷
কোচ হিসেবে শুরু
সুইজারল্যান্ডের ক্লাব এফসি ভিন্টারটুর-এর হয়ে খেলার সময় ১৯৯৪ সালে ল্যোভ ঐ ক্লাবের যুব দলের কোচিংয়ের দায়িত্ব নেন৷ পরের বছর বুন্ডেসলিগা ক্লাব স্টুটগার্টের সহকারী কোচ হন তিনি৷ পরের বছরই হেড কোচের দায়িত্ব পান ল্যোভ৷ ছবিতে তাঁকে টোমাস শ্নাইডারের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, যিনি পরবর্তীতে জার্মান জাতীয় দলে ল্যোভের সহকারী হয়েছেন৷
তুরস্ক যাত্রা
১৯৯৭ সালে স্টুটগার্টের হয়ে জার্মান কাপ জিতলেও পরের বছর তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ক্লাব ফ্যানাবাটশেতে চলে যান ল্যোভ৷ তাঁর নেতৃত্বে ক্লাবটি লিগে তৃতীয় হয়েছিল৷ সেখানে তিনি ছিলেন এক বছর৷
বরখাস্ত
ফ্যানাবাটশের পর কার্লসরুয়ে, আডানাস্পোর ও ইন্সব্রুকে কোচ ছিলেন ল্যোভ৷ ২০০৩ সালে অস্ট্রিয়া ভিয়েনা ক্লাবের দায়িত্ব নেন৷ তাঁর অধীনে ক্লাব লিগের প্রথম স্থানে থাকাকালীন ল্যোভকে বরখাস্ত করা হয়৷ পরে তাঁর অনুপস্থিতিতে ভিয়েনা ক্লাব দ্বিতীয় হয়ে লিগ শেষ করে৷
ক্লিন্সমানের সঙ্গী
রুডি ফ্যোলার জার্মানির দায়িত্ব ছাড়ার পর কোচ হয়েছিলেন জার্মানির আরেক সাবেক তারকা স্ট্রাইকার ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান৷ সেই সময় ক্লিন্সমান নিজের সহকারী হিসেবে ল্যোভকে বেছে নিয়েছিলেন৷
২০০৬ বিশ্বকাপ
নিজ দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ জিততে ব্যর্থ হয় জার্মানি৷ সেমিফাইনালে ইটালির কাছে হেরে যায় তারা৷ পরে ইটালি সেই বিশ্বকাপ জিতেছিল৷ বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় সরে দাঁড়ান ক্লিন্সমান৷ সেই সময় হেড কোচের দায়িত্ব পান ল্যোভ৷
ইউরোর ফাইনালে পরাজয়
জার্মানির কোচ হিসেবে ল্যোভের প্রথম বড় টুর্নামেন্ট ছিল ইউরো ২০০৮৷ সেটির ফাইনালে উঠলেও স্পেনের কাছে হেরে যায় জার্মানি৷
প্রথম বিশ্বকাপ
২০১০ সালের বিশ্বকাপের জন্য তরুণ দল নির্বাচন করেছিলেন ল্যোভ৷ তারাই দ্বিতীয় রাউন্ডে ইংল্যান্ডকে ৪-১ আর কোয়ার্টারে আর্জেন্টিনাকে ৪-০ গোলে পরাস্ত করে৷ কিন্তু সেমিফাইনালে গিয়ে অভিজ্ঞ স্পেনের কাছে হেরে যায়৷
ইউরো ২০১২
গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ জিতে শুরু করেছিল জার্মানি৷ এরপর কোয়ার্টারে গ্রিসকে ৪-২ গোলে হারায়৷ কিন্তু সেমিফাইনালে ইটালির কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় ল্যোভের দল৷
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
২০১৪ সালে ব্রাজিলে গিয়ে স্বপ্ন পূরণ হয় ইওয়াখিম ল্যোভের৷ তবে পথটা মসৃণ ছিল না৷ গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ঘানার সঙ্গে কোনোরকম ড্র করে জার্মানি৷ এরপর দ্বিতীয় রাউন্ডে আলজেরিয়াকে হারাতে অতিরিক্ত সময়ের সহায়তা নিতে হয়৷ কোয়ার্টারে ফ্রান্সকে কোনোমতে ১-০ গোলে হারানোর পর অবশ্য সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে ৭-১ গোলের লজ্জায় ফেলে দেয় ল্যোভ বাহিনী৷ এরপর ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের গোলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে সেরা হয় জার্মানি৷
ইউরো ২০১৬
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি ফ্রান্সে আয়োজিত ইউরোর ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়৷ সেমিফাইনালে স্বাগতিকদের কাছে ২-০ গোলে হেরে যায় তারা৷ গোল দুটি করেন গ্রিজমান৷
কনফেডারেশনস কাপ
২০১৭ সালে ল্যোভের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো কনফেডারেশনস কাপ জেতে জার্মানি৷ একেবারে তরুণ দল বেছে নিয়েছিলেন তিনি৷ ফাইনালে পূর্ণ শক্তির চিলিকে ১-০ গোলে হারায় জার্মানি৷ সেই সময় জার্মানির ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল৷
কিন্তু...
তরুণ দল নিয়ে কনফেডারেশনস কাপ জেতায় পূর্ণ শক্তির জার্মানির কাছে সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি৷ বিশ্বব্যাপী অনেক ফুটবল বিশ্লেষকও জার্মানিই আবার বিশ্বসেরা হতে যাচ্ছে বলে ধরে নিয়েছিলেন৷ কিন্তু গ্রুপ পর্বে এক জয় আর দুই পরাজয় নিয়ে একেবারে শেষ স্থান নিয়ে দেশে ফেরে ল্যোভের দল৷