বিদেশিদের উপহার ভাবনা
২৪ ডিসেম্বর ২০১৩প্রবাসে বড়দিন পালনের কথাটা চিন্তাও করতে পারেন না পোল্যান্ড থেকে আসা আলিসিয়া৷ হিল্ডেসহাইম ইউনিভার্সিটিতে শীতকালীন সেমিস্টার থেকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও অনুবাদ বিভাগে পড়াশোনা করছেন তিনি৷ ক্রিসমাসের সময় মা-বাবার কাছে পোল্যান্ডে যাচ্ছেন তিনি৷ সাথে থাকছে একেবারেই জার্মান কিছু উপহার ও জিনিসপত্র৷ এই সম্পর্কে আলিসিয়া জানান, ‘‘স্বাভাবিকভাবেই আত্মীয় স্বজনের জন্য উপহার কিনেছি আমি৷ যেমন বোতলে ভরা সসেজ ও নানা রকম ছয় সাতটি জিনিস৷
স্বদেশে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কাটাতে চান অনেকে
জার্মানির আশেপাশের দেশ থেকে আসা বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা সম্ভব হলে বড়দিনের ছুটিটা স্বদেশে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কাটাতে ভালবাসেন৷ সাথে থাকে অবশ্যই নানা রকমের উপহার৷ বেছে বেছে জার্মানির ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র কেনার চেষ্টা করেন তারা৷ মা-বাবা, ভাই-বোন, নানা-নানি, দাদা-দাদি সবার জন্যই পছন্দসই উপহার কেনার চেষ্টা করেন এই তরুণ তরুণীরা৷ অবশ্য বাজেটে যতোটা কুলায়৷
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা মিয়োঙজে বড়দিনের উপহারকে ঘিরে জার্মানদের এই রকম স্ট্রেস বুঝতে পারেন না৷ সাধারণত বড়দিনে তিনি ও তাঁর তিন ভাইবোন প্রত্যেকের জন্য একটি করে উপহার কেনেন৷ এগুলি প্যাকেট করে রেখে দেওয়া হয়৷ যে কেউ যে-কোনো প্যাকেটি তুলতে পারেন৷ এই বছর তাঁর পরিবার বুঝতে পারবে জার্মানি থেকে কে প্যাকেটটি পাঠিয়েছে৷
কয়েক ধরনের ‘চা'
মিয়োঙজে বলেন, ‘‘আমি কয়েক ধরনের চা দেখেছি এখানে৷ কোরিয়াতে আমরা শুধু গ্রিন টি কিংবা কফি পান করি৷ এবার আমি ভ্যানিলার স্বাদের ফলের চা কিনেছি৷ আপেল টি, মেলিসা টিও কিনেছি৷'' ইতোমধ্যে মা-বাবার কাছ থেকে একটি প্যাকেট পেয়ে গেছেন বলে জানান উৎফুল্ল মিয়োঙজে৷
তবে ভিয়েতনামের আন গুয়েট দেশ থেকে পাঠানো উপহারের আশা করতে পারেন না৷ তাঁর পরিবারের জন্য এটা খুব ব্যয়সাপেক্ষ ও কষ্টকর৷
তাঁর ভাষায়, ‘‘আমার পরিবার বড় শহরে বাস করে না৷ বাস করে গ্রামাঞ্চলে৷ সেখান থেকে জার্মানিতে কিছু পাঠানো সহজ নয়৷''
ক্রিসমাসের কার্ড
মা-বাবাকে জার্মানি থেকে ক্রিসমাসের কার্ড পাঠিয়েছেন তিনি৷ তুষার ঢাকা হিল্ডেসহাইমের ফটো পাঠানোর ইচ্ছা তাঁর৷ মা এই রকম ছবি দেখতে খুব আগ্রহী৷
ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর জন্য একটি স্কার্ফ কিনেছেন আন গুয়েট৷ আরেক বান্ধবী পাবে ভিয়েতনামের একটি ব্রেসলেট৷ অবশ্য এখনও এটা গোপন রাখা হয়েছে৷ হেসে জানান এই ছাত্রী৷
পবিত্র রাতে অন্যান্য বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে হিল্ডেসহাইমে কাটাবেন তিনি৷ জার্মান বন্ধু বান্ধবরা তো তাদের পরিবারের সাথে উৎসবটি পালন করবেন৷
চিঠি ও ফুল অনেক বেশি মূল্যবান
তুর্কি ছাত্রী বেলজান ছোটবেলায় স্যান্টাক্লজের জন্য প্রতি বছর অপেক্ষা করেছেন এবং প্রতিবারই হতাশ হয়েছেন৷
তাঁর ভাষায়, ‘‘সাত বছর বয়স পর্যন্ত আমি স্যান্টাক্লজের জন্য অপেক্ষা করেছি৷ ইউরোপীয় কার্টুন ফিল্মে আমি স্যান্টাক্লজকে দেখেছি৷ যিনি বাচ্চাদের জন্য সুন্দর সুন্দর জিনিস নিয়ে আসতেন৷ কিন্তু এরপর আমি বুঝতে পেরেছি, তুর্কিদের জন্য কোনো স্যান্টাক্লজ নেই৷''
মুসলিম প্রধান দেশ তুরস্কে অত ঘটা করে বড়দিন পালন করা হয় না৷ তার বদলে থাকে নববর্ষের উপহার৷ এ জন্য এক দোকান থেকে আরেক দোকানে গলদঘর্ম হওয়ার ইচ্ছা বেলজানের নেই৷ এর বদলে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবকে চিঠি লিখতে ভাল লাগে তাঁর৷
বেলজান বলেন, ‘‘আমি আমার পরিবার ও বন্ধুদের কাছে চিঠি লিখছি৷ মাঝে মাঝে বাগান থেকে ফুল ছিড়ে চিঠিতে ঢুকিয়ে দেই৷ কেনা কোনো জিনিসের চেয়ে এটা আমার কাছে অনেক মূল্যবান৷''
বেলজান আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও অনুবাদ বিভাগে পড়াশোনা করছেন৷ এই প্রথম বড়দিন কাটাবেন তিনি জার্মানিতে, পরিচিত হতে পারবেন ভিন্ন সংস্কৃতির সাথে৷