জার্মানির রাজনীতিতে সমকামিতা
জার্মানিতে সমকামীদের অধিকারের লড়াই দীর্ঘদিনের৷ এখন তাদের অনেক অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে৷ তবে এখনো তাদের নানা ধরনের বৈষম্য ও বিদ্বেষের শিকার হতে হয়৷ কিন্তু সমকামিতা জার্মান রাজনীতিকে ধীরে ধীরে পালটে দিচ্ছে৷
বৈধতা, বিয়ের অধিকার
প্রুশিয়ান সাম্রাজ্য এবং পরে নাৎসি জার্মানিতে সমকামীরা ব্যাপক নির্যাতনের স্বীকার হতেন৷ সমকামিতার অভিযোগে ছিল কারাদণ্ডের বিধান৷ এমনকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং আধুনিক জার্মানি স্থাপিত হওয়ার পরও সমকামীদের অধিকার নিশ্চিত হয়নি৷ তবে কয়েক দশকে সে অবস্থানের দ্রুতই পরিবর্তন হয়েছে৷ ১৯৬৯ সালে সমকামীদের শাস্তি দেয়ার বিধান বাতিল হলেও ২০১৭ সালে এসে তারা বিয়ের অধিকার পান৷
পার্লামেন্টে জয়
জার্মান পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে সমকামীদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ান রাজনীতিবিদরা৷ কিন্তু তখনো অনেক পার্লামেন্ট সদস্য এর বিরুদ্ধে ছিলেন৷ ক্ষমতায় থাকা দল সিডিইউ-র ৩০৯ সদস্যের মধ্যে ২২৫ জনই এর বিরুদ্ধে ভোট দেন৷ খোদ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ছিলেন বিরোধিতাকারীদের একজন৷ তবে পরবর্তী ভোটে রাজনীতিবিদরা যাতে দলের মতাদর্শ মেনে ভোট না দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে ভোট দেন, সে আহ্বান জানিয়েছিলেন ম্যার্কেল৷
প্রকাশ্যে সমকামী রাজনীতিবিদ
সমকামীদের অধিকারের আন্দোলন যত জনপ্রিয় হতে থাকে, জার্মান রাজনীতিতেও পড়ে এর প্রভাব৷ অনেক রাজনীতিবিদ নিজেদের সমকামিতার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে থাকেন৷ ২০০১ সালের সিটি নির্বাচনে বার্লিনের এসপিডির মেয়র প্রার্থী ক্লাউস ভোভেরাইট দলের সম্মেলনে তার বক্তব্য শেষ করেন এই বলে, ‘‘আমি সমকামী এবং এটা খারাপ কিছু নয়৷’’ পরবর্তীতে ভোভেরাইট মেয়র নির্বাচিত হন এবং টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন৷
রক্ষণশীল দলে সমকামী নেতা
সমকামিতা সাধারণ মানুষের চোখে ধীরে ধীরে সহনীয় করে তোলায় বড় ভূমিকা রেখেছেন রাজনীতিবিদরা৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক সফরে তার পার্টনার মিখায়েল ম্রোনৎসকে নিয়ে যেতেন৷ এখন এমনকি সমকামিতার বিরুদ্ধে কথা বলে এমন কট্টর ডানপন্থি দল এএফডির এক নেত্রী অ্যালিস ভাইডেলও এক নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন৷
সরকারে সমকামী মন্ত্রী
জার্মানির বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান নিজেকে সমকামী ঘোষণা দেয়া প্রথম মন্ত্রী ৷ দলের অন্যতম উদীয়মান রাজনীতিবিদ বলে বিবেচনা করা হয় স্পানকে৷ করোনা মহামারিতে নিজের দেশকে দারুণভাবে সামাল দেয়ায় দল ও দেশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি৷ ম্যার্কেলের পর সিডিইউয়ের প্রধান হওয়ার লড়াইয়েও অনেক এগিয়ে আছেন স্পান৷ জিতে গেলে তিনি হতে পারেন প্রথম সমকামী জার্মান চ্যান্সেলর৷
এখনো রয়েছে বৈষম্য
রাজনীতিবিদ তো বটেই, জার্মান জনগণের মধ্যেও ধীরে ধীরে সমকামীভীতি দূর হচ্ছে৷ কিন্তু এখনো অনেক ক্ষেত্রেই বৈষম্যের স্বীকার হন তারা৷ সম্প্রতি জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক রিসার্চ এবং বিলেফেল্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিজেদের এলজিবিটিকিউ ঘোষণা দেয়া ৩০ শতাংশ কর্মীই কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন৷ জরিপে অংশ নেয়া এক তৃতীয়াংশই জানিয়েছেন, তারা সহকর্মীদের এ বিষয়ে জানাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না৷