জার্মানির সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি চান চীনা প্রেসিডেন্ট
৪ নভেম্বর ২০২২শুক্রবার বেইজিং-এ জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সঙ্গে সাক্ষাতের পর চীনের প্রেসিডেন্ট জিনপিং বলেছেন, ‘পরিবর্তন ও অশান্তি'-র এই সময়ে চীন ও জার্মানির মধ্যে আরও বেশি সহযোগিতার প্রয়োজন৷ প্রভাবশালী দুই বড় দেশ হিসেবে বিশ্ব শান্তির স্বার্থে এমন সহযোগিতার পক্ষে সওয়াল করেন চীনের প্রেসিডেন্ট৷ পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে মতপার্থক্য সরিয়ে রেখে সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা উচিত বলে মনে করেন প্রেসিডেন্ট জিনপিং৷
শলৎস ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার উল্লেখ করে বলেন, এর ফলে নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক কাঠামোর জন্য সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে৷ এমন পরিস্থিতিতে দুই নেতার সরাসরি সাক্ষাতের প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মনে করেন৷ শলৎস ইউরোপ ও চীনের সম্পর্ক, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও চীন ও জার্মানির মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিকাশের মতো বিষয়ও তুলে ধরছেন৷ যে সব বিষয়ে দুই দেশের মনোভাব ভিন্ন, সেগুলিও আলোচনাসূচি থেকে বাদ যাচ্ছে না বলে জার্মান চ্যান্সেলর আশ্বাস দিয়েছেন৷ অর্থাৎ তাইওয়ান পরিস্থিতি, শিনচিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু মুসলিম উইগুর সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়নের মতো স্পর্শকাতর বিষয় এড়িয়ে যেতে চান না তিনি৷ শলৎস বিদায়ী চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেশিয়াং-এর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করছেন৷
উল্লেখ্য, গত তিন বছরে এই প্রথম জি-সেভেন গোষ্ঠীর কোনো শীর্ষ নেতা চীনে এসেছেন৷ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে চীনের বেড়ে চলা উত্তেজনার কারণে জার্মান চ্যান্সেলরের ১১ ঘণ্টার বেইজিং সফরকে ঘিরে চরম বিতর্ক দেখা যাচ্ছে৷ কড়া করোনা বিধির মাঝে শলৎস ও তার প্রতিনিধিদলের সফরসূচি অত্যন্ত সীমিত রাখতে হচ্ছে৷ শুক্রবার সকালে তাদের বিমান বেইজিং-এ নামার পর বিমানের মধ্যেই চীনা চিকিৎসাকর্মীরা সব যাত্রীর করোনা টেস্ট করেছেন বলে সফরসঙ্গী রয়টার্সের এক রিপোর্টার জানিয়েছেন৷ তারপর লাল গালিচার উপর সরকারি অভ্যর্থনা ও গার্ড অফ অনার সংবর্ধনার পর তাদের এক সরকারি অতিথিশালায় নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে পৌঁছে জানা যায়, শলৎসের করোনা টেস্টের ফল নেগেটিভ৷ কড়া নিরাপত্তার কারণে সফর সংক্রান্ত সংবাদের জন্যও চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ও সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের বয়ানের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে৷
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সদ্য সমাপ্ত ২০তম কংগ্রেসে শি জিনপিং শীর্ষ নেতা ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তৃতীয় কার্যকাল শুরু করার পর চীনা নেতৃত্ব বিদেশি নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির উপর জোর দিচ্ছে৷ সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন নেতা বেইজিং সফর করেছেন৷ প্রেসিডেন্ট জিনপিং-ও সবে বিদেশ সফর শুরু করেছেন৷
অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি ও মন্দার আশঙ্কার মাঝে জার্মান চ্যান্সেলর শলৎসও চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত করার উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ এমনকি নিজের সরকারি জোটের শরিকদের প্রকাশ্য বিরোধিতা এবং ইউরোপীয় স্তরে অস্বস্তি সত্ত্বেও তিনি বেইজিং সফর বাতিল করেননি৷ প্রবল প্রতিরোধ সত্ত্বেও তিনি হামবুর্গ শহরের বন্দর টার্মিনালে চীনা কোম্পানির অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত করেছেন৷ রাশিয়ার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কুফল থেকে শিক্ষা না নিয়ে শলৎস চীনের উপর নির্ভরতা বাড়ানোর পথে এগোচ্ছেন বলে দেশে-বিদেশে অভিযোগ উঠছে৷
এসবি/জেডএইচ (রয়টার্স, এপি)