সিরিয়ায় ‘জার্মান জিহাদি’
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪অবশ্য সিরিয়ায় শুধু তথাকথিত ‘‘জার্মানরাই'' নয়, ৭৪টি দেশ থেকে আগত মোট বারো হাজার বিদেশি ‘‘সংগ্রামে'' সংশ্লিষ্ট৷ তাঁদের অধিকাংশই আরব বংশোদ্ভূত; বিদেশি যোদ্ধাদের মধ্যে হাজার আড়াই এসেছে পশ্চিমি দেশগুলো থেকে; আর জার্মানি থেকে আগত জিহাদিদের সংখ্যা চারশো – যদিও সেটাও আনুমানিক৷
বাস্তব সত্য হলো: জার্মানিতে তরুণ ইসলামি জঙ্গিদের একটা মহল শুধু গড়েই ওঠেনি, ক্রমাগত বেড়েও চলেছে৷ অপরদিকে জার্মানিতে চল্লিশ লাখ মুসলিমের বাস, কিন্তু সালাফিদের সংখ্যা পাঁচ থেকে দশ হাজারের বেশি নয় – যদিও তারা মানুষ তথা মিডিয়ার নজর কাড়তে জানে: কখনো বাজারে পবিত্র কোরান বিলি করে, কখনো কোনো মসজিদের কাছে জনসভা করে৷ এমনকি সমাজকর্মীদের মতো পথে পথে ঘুরে যুব-কিশোরদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে তাদের রংরুট বানানোর প্রচেষ্টাও করে থাকে এই সালাফিরা৷ তাদের সর্বাধুনিক ‘প্রচার' অভিযান সারা জার্মানিতে চাঞ্চল্য ও উষ্মার সৃষ্টি করেছে: ভুপার্টাল শহরে তাদের কয়েকজনকে ‘শরিয়া পুলিশ' লেখা প্লাস্টিকের উর্দি পরে ডিস্কো কিংবা বার-এর সামনে তরুণ-তরুণীদের ‘অনাচার' থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাতে দেখা গেছে৷
জিহাদিদের আকর্ষণ
এক পর্যায় যুব-কিশোরের কাছে সালাফি মতবাদ একটি স্পষ্ট কাঠামো ও স্পষ্ট ধ্যানধারণা এনে দেয় – বিশেষ করে সেই যুব-কিশোরের যদি নিজের জীবনকে অর্থহীন বলে মনে হয়, কিংবা সেই জীবনে অন্য কোনো ধরনের বাস্তব অথবা কাল্পনিক সংকট দেখা দিয়ে থাকে৷ সালাফিরা ঠিক সেই মুহূর্তে এসে তাঁকে সঙ্গ দেয়, সান্ত্বনা দেয়, ফিরিয়ে দেয় তাঁর আত্মসম্মান৷ অপরদিকে সালাফিদের কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো – সিরিয়া৷
সিরিয়া এবং ইরাক থেকে ইন্টারনেট প্রচারণার একটা স্রোত ভেসে আসছে জার্মানি অভিমুখে৷ ইসলামিক স্টেট-এর মিডিয়া বিভাগ সিরিয়া ও ইরাকে আইসিস বা আইএস-এর গতিবিধিকে দেখায় ঠিক অ্যাকশন ফিল্মের মতো – পেশাদারদের তৈরি করা অ্যাকশন ফিল্ম৷ সেই ফিল্ম দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে যদি কোনো হবু জিহাদি জার্মানি থেকে সিরিয়া যেতে চায়, তবে সে পথও অতি সোজা: তিন ঘণ্টা বিমানযাত্রার পর তুরস্ক; সেখান থেকে ‘সবুজ সীমান্ত' পার হয়ে সিরিয়ায় ঢুকলেই হলো৷
জার্মান জিহাদি
ইরাক কিংবা সিরিয়ার যুদ্ধে জার্মান জিহাদিদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ তার মূল কারণ এই যে, জার্মান জিহাদিরা স্থানীয় আরব সংস্কৃতির সঙ্গে বিশেষ পরিচিত নয়; ফলে তাদের আচার-আচরণে নানা ভুলভ্রান্তি ঘটে থাকে৷ এছাড়া তারা যুদ্ধেও বিশেষ দড় নয়, কেননা জার্মান জিহাদিদের অধিকাংশ বাধ্যতামূলক সামরিক সেবায় পর্যন্ত অংশ নেয়নি৷ সেই কারণেই হয়ত জার্মান জিহাদিদের বারংবার আত্মঘাতী বোমারুর ভূমিকায় দেখা যায়৷
মাত্র এক মাস আগে জার্মানির ডিন্সলাকেন থেকে আসা ফিলিপ ব্যার্গনার মোসুল শহরের কাছে নিজেকে উড়িয়ে দেয় এবং সেই বোমায় আরো বিশজন মানুষের প্রাণ নেয় – ফিলিপ জাতে জার্মান, পরে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করেছিল৷ এ যাবৎ পাঁচজন জার্মান জিহাদি ইরাকে আত্মঘাতী বোমা আক্রমণ চালিয়েছে বলে জানা গেছে – তবে তাদের বাস্তবিক সংখ্যা সম্ভবত আরো অনেক বেশি৷
রোখার পন্থা
জার্মান জিহাদিরাও জার্মানির নাগরিক – এবং অনেক ক্ষেত্রে জার্মান নাগরিকদের সন্তান৷ তাদের এভাবে ইসলামিক স্টেট-এর হাতে তুলে দেওয়া যায় না, মরতে দেওয়া যায় না৷ আবার তারা যখন ‘যুদ্ধের' অভিজ্ঞতা নিয়ে জার্মানিতে ফেরে, তখন তারা তাদের স্বদেশের পক্ষেও বিপদ সৃষ্টি করতে পারে৷ কিন্তু তাদের সিরিয়া কিংবা ইরাক যাওয়া, অথবা জার্মানিতে ফেরা, দু'টোর কোনোটাই সংবিধানসম্মত উপায়ে রোখা সম্ভব নয় – অন্তত আপাতত নয়৷
ওদিকে জার্মানি উত্তর ইরাকের কুর্দ বা কুর্দিদের অস্ত্র দিতে চলেছে – যার অর্থ, জার্মানিতে প্রতিশোধমূলক আক্রমণের সম্ভাবনা বাড়বে৷ এবং সেই আক্রমণে যে সিরিয়া থেকে প্রত্যাবর্তিত কোনো ‘জার্মান জিহাদি' জড়িত থাকবে না, তা-ই বা কে বলবে?