জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্য প্রজাপতি মেলা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শুক্রবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রজাপতি মেলা-২০২১৷ করোনা ভাইরাসের কারণে গতবছর এ মেলা না হলেও চলতি বছর বসলো মেলার ১১তম আসর৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
আলোকচিত্র প্রদর্শনী
বিশ্বিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের ভিতরে এবং বাইরের বাগানে মেলার দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন আলোকচিত্রীর তোলা প্রজাপতির ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়৷ দর্শনার্থীদের বেশ আগ্রহ নিয়ে প্রজাপতির ছবি দেখতে দেখা যায়৷
প্রজাপতির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখা এ মেলার আয়োজক৷ মেলার আহবায়ক ড. মনোয়ার হোসেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘প্রজাপতি প্রকৃতির সুস্থতার নিদর্শন বহন করে৷ আগে জাবিতে প্রায় ১২০ প্রজাতির প্রজাপতির দেখা মিললেও এখন মাত্র ৬০ প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া যায়৷ এ থেকে স্পষ্ট যে, আমাদের প্রকৃতিকে আমরা বিনষ্ট করে ফেলছি৷’’
স্লোগান
২০১০ সাল থেকে ব্যতিক্রমী এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে৷ চলতি বছরে বসেছে এ মেলার ১১তম আসর৷ প্রজাপতি মেলার এবারের স্লোগান, ‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি৷’
অভিভাবকদের সচেতনতা
জিরানিবাজার থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে প্রজাপতি মেলায় এসেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আমেনা বেগম৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো ছোটবেলায় গ্রামে প্রজাপতি অনেক দেখেছি, বাক্সে বন্দি করে খেলেছি৷ কিন্তু আমাদের সন্তানেরা শহরে বড় হওয়ার কারণে প্রকৃতি থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে৷ প্রজাপতি দেখলে বাচ্চারা খুশি হবে এবং তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলিও বাড়বে, তাই তাদেরকে আজএ মেলায় নিয়ে এসেছি৷’’
প্রথমবারের আনন্দ
সাভারের ডেইরি ফার্ম এলাকা থেকে লিসা আক্তার তার ছোট দুই ভাই-বোনকে প্রজাপতি মেলায় নিয়ে এসেছেন৷ তিনি জানান, এর আগে তিনি এ মেলায় বহুবার এলেও তার ভাই-বোনেরা এবারই প্রথম এসেছে৷ এখানে এসে তার যেমন ভালো লাগছে, তেমনি তার ছোট-ভাইবোনেরাও খুব খুশি৷ পরেরবার আবার এ মেলায় আসার ইচ্ছার কথা জানান তারা৷
শিক্ষাসফর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রায় ৮০ জনের একটি দল শিক্ষাসফরের অংশ হিসেবে প্রজাপতি মেলায় এসেছেন৷ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জিয়াবুল হক বলেন, ‘‘আমরা নিজেরা শুধু ভালো থাকলে চলবে না, পাশাপাশি প্রকৃতি এবং এর উপাদানকেও ভালো রাখতে হবে৷ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতির আনুষঙ্গিক উপকরণগুলোর প্রতি আমাদের যত্নশীল হতে হবে’’
প্রজাপতি নিয়ে বই
প্রজাপতি মেলার একটি স্টলে প্রজাপতির পরিচিতিমূলক বই দেখা গেল৷ লেখক মনোয়ার হোসেন এবং খালেদ হোসাইন৷ বইগুলোতে হিমেলকুচি, কাওয়া, লাঠিয়াল, কেশবতী, খাগড়া, তুতচিল, মিঞ্জি, ধুলকাপাশ, অমরাবতী, লোপামুদ্রা ও বিন্তিসহ প্রায় ৪১ প্রজাতির প্রজাপতির ছবি এবং জীবনবৃত্তান্ত লেখা রয়েছে৷
বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি
১১তম এ মেলায় প্রজাপতি বিষয়ক গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য আলহাজ্ব ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক হাসমত আলীকে বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড-২০২১ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমানকে বাটারফ্লাই ইয়াং অ্যানথুজিয়াস্ট-২০২১ পুরস্কার দেওয়া হয়৷
শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ড. রাশেদা আক্তার বলেন, ‘‘এখানে বিভিন্ন বয়সি শিশুদের হাসিখুশি মুখ এবং স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, শিশুরা প্রকৃতিকে ভালোবাসে৷ আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে প্রকৃতির ব্যাপারে আরো উৎসাহী করা এবং প্রকৃতি রক্ষার কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা৷’’
অন্যান্য পণ্যের স্টল
মেলায় প্রজাপতির প্রদর্শনীর পাশাপাশি প্রজাপতির স্টিকার, বিভিন্ন প্রসাধনী, হাতের চুড়ি, গলার মালা ইত্যাদি পণ্যের ৯টি স্টল দেখা গেছে৷ আয়োজকেরা জানান, প্রতিবছরই তারা এমন নানান পণ্য নিয়ে মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন৷
শেষের আকর্ষণ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত প্রজাপতি মেলায় আলোকচিত্র, বিতর্ক, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড়ানো, কুইজসহ শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে দিনব্যাপী এ ব্যতিক্রমী মেলা৷
আমাদের স্বার্থেই প্রজাপতি প্রয়োজন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও মেলার আহবায়ক ড. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের তাগিদেই প্রজাপতি রক্ষায় সকলকে সচেতন হতে হবে৷ এ মেলার উদ্দেশ্যই মূলত সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করা এবং এটা অনুধাবন করানো যে, আমরা প্রকৃতি ছাড়া এক মুহূর্তও টিকতে পারবো না৷’’