জীর্ণ আদালতে দীর্ঘ বিচার
মামলার অনুপাতে বিচারক আর বিচারিক অবকাঠামোর সংকট বাংলাদেশের৷ এ কারণে বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা চরম৷ আদালত অবকাঠামোর জীর্ণ-শীর্ণ পরিস্থিতি দেখে নিন ছবিঘরে৷
বিচারের অপেক্ষা
আদালতের বারান্দায় মানুষের এমন দীর্ঘ সারিই প্রমাণ করে, কতোটা মামলাজট নিয়ে চলছে বাংলাদেশের বিচারিক কার্যক্রম৷ বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগে বিচারাধীন মামলা পাঁচ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪টি৷ আর নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলা ৩০ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৬টি৷ গত বছর চার লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৪টি মামলা দায়েরের বিপরীতে নিষ্পত্তি হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ১৩১টি৷
বিচারক সংকট
বিচারাধীন মামলার তুলনায় বিচারকের অপর্যাপ্ততার একটি চিত্র উঠে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের জুডিশিয়াল রিফর্ম কমিটি ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থা (জিআইজেড)-এর এক প্রতিবেদনে৷ তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি দশ লাখ লোককে মাত্র ১০ জন বিচারক বিচারিক সেবা দিচ্ছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা ১০৭, কানাডায় ৭৫, ব্রিটেনে ৫১, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১, ভারতে ১৮ জন৷
ফাইলের স্তুপ
মামলাজটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে নথিপত্রের স্তুপ৷ আর বছরের পর বছর চাপা পড়ে থাকে একেকটি ফাইল৷ আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় সেকেলে পদ্ধতিতে চলছে নথিপত্র সংরক্ষণ৷
জামিনে কারসাজি
মামলাজটের মধ্যে আদালতে জামিন কারসাজির বহু ঘটনা ঘটে৷ আইনজীবীদের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত এসবের সঙ্গে৷ ২০১৫ সালে বিচারকের জাল স্বাক্ষরে ভুয়া জামিননামা তৈরি করে শতাধিক দাগি আসামিকে আদালত থেকে ছাড়ানোর ঘটনা ঘটেছিল৷ তদন্তে নেমে দুদক জানতে পারে, এরসঙ্গে আদালতের পেশকার, উমেদার ও পিয়ন জড়িত ছিল৷
ঘুষের ছড়াছড়ি
আদালতে প্রাঙ্গণে ঘাটে ঘাটে পয়সা গুণতে হয় বিচারপ্রার্থীদের৷ মামলার নথি দেখা, হাজিরা দেওয়া, ওকালতনামায় সই করা, জামিননামা দেওয়া, জামিনের শুনানি করা, মামলার নকল তোলাসহ মামলাসংক্রান্ত যেকোনো সেবায় ‘বকশিশ বা খরচাপাতি’ ছাড়া চলে না৷ এক্ষেত্রে সহযোগী থাকেন আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীরা৷
প্রতারণার ফাঁদ
আদালতপাড়ায় অনেক সময় প্রতারণার ফাঁদ পাতে একদল প্রতারক৷ কখনো আইনজীবী, কখনো সাংবাদিক কিংবা মানবাধিকারকর্মীর ভুয়া পরিচয়ে বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয় তারা৷ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি না হলে মামলার ফাঁদে ফেলাসহ বিভিন্ন হয়রানি করে তারা৷
ঘিঞ্জি পরিবেশ
বেশিরভাগ আদালতে ঘিঞ্জি পরিবেশে কাজ করেন আইনজীবী এবং আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা৷ এমন আলোছায়ার কক্ষে কাজ চলে ঢাকার আদালতে৷
বিচারের আগেই শাস্তি!
কারাগার কিংবা থানা থেকে এসব প্রিজন ভ্যানে আসামি আনা হয় আদালতে৷ সংকীর্ণ এসব প্রিজন ভ্যানে বেশির ভাগ সময়ে গাদাগাদির কারণে বিচার শেষ হওয়ার আগেই যেন শাস্তি পেয়ে যান আসামিরা৷
অন্ধকারে রেকর্ড রুম
অন্ধকার ও ঘুপচি এই কক্ষই ঢাকা মহানগর ও দায়রা জর্জ আদালতের রেকর্ড রুম৷
নোংরা শৌচাগার
আদালত বিশৃঙ্খল অবস্থাই শুধু নয়, সেখানে আসলে নানা রকম প্রতিবন্ধকতার শিকার হন বিচার প্রার্থীরা৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভাবে শৌচাগারে এমন বেহাল অবস্থার চিত্র ঢাকা আদালতের৷
নথিপত্রের জায়গা সিঁড়ির তলা
নথিপত্র সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা নেই আদালত কর্তৃপক্ষের৷ এর মধ্যে ভেতরে জায়গা নাই৷ জীর্ণ আদালত ভবনের সিঁড়ির নীচে জায়গা পেয়েছে এসব নথিপত্র৷