1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রমা কেয়ার সত্ত্বেও অঙ্গদানে ভাটা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৯ অক্টোবর ২০১৯

অঙ্গদানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে ধর্মীয় ও সামাজিক কারণ৷ তাই রাজ্যের সবচেয়ে বড় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম-এর ট্রমা কেয়ার সেন্টারে অঙ্গদান হয়নি বললেই চলে৷ তিন মাসে মাত্র একজন রোগীর পরিবার অঙ্গদানে রাজি হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3RZTp
Indien Kalkutta | Trauma center
ছবি: DW/P. Samanta

অঙ্গদান আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গে গতি পেয়েছে গত কয়েক বছরে৷ ক্যাডাভার ট্রান্সপ্লান্ট অর্থাৎ মরণোত্তর অঙ্গদানের সংখ্যা বাড়ছে৷ যদিও ব্রেনডেথ বা মস্তিষ্কের মৃত্যু হওয়া রোগীর ক্ষেত্রে অঙ্গদানের প্রবণতা কম৷ ১৫ জুলাই কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ১২০ শয্যার ট্রমা কেয়ার ইউনিট খোলা হয়েছিল৷ এই ইউনিট খোলার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ব্রেনডেথ হওয়া রোগীর অঙ্গদান৷ কিন্তু, এই উদ্দেশ্য একেবারেই পূরণ হয়নি৷ তিন মাসে মাত্র একজন রোগীর পরিবার তাদের প্রিয়জনের মস্তিষ্কের মৃত্যু হওয়ার পর অঙ্গদানে রাজি হয়েছেন৷ এর মধ্যে তিনজন রোগীর মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়৷ দুটি পরিবারকে চিকিৎসকরা চেষ্টা করেও অঙ্গদানে রাজি করাতে পারেননি৷ যে পরিবার অঙ্গদানে রাজি হয়, তারা আবার হৃদযন্ত্র দিতে রাজি হয়নি৷ গত ২৮ সেপ্টেম্বর এক তরুণের ব্রেন ডেথ ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা৷ তাঁর পরিবার কিডনি ও লিভার দিতে চাইলেও হৃদযন্ত্র দিতে রাজি হয়নি৷ অন্য দুটি পরিবার কোনো অঙ্গদানেই ইচ্ছুক ছিল না৷ অঙ্গ না দেওয়ার ক্ষেত্রে কেউ সামাজিক কারণ দেখিয়েছেন৷ কেউবা ধর্মীয় বিশ্বাসের কথা বলেছেন৷ এর ফলে ট্রমা কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্যটি সাফল্য পায়নি৷

ডাঃ মাখনলাল সাহা

এই ইউনিটে অঙ্গদানের আধুনিক পরিকাঠামো থাকলেও কী কারণে অঙ্গদানে এগিয়ে আসছে না ব্রেন ডেথ হওয়া রোগীর পরিবার? ট্রমা কেয়ার সেন্টারের চিকিৎসক মাখনলাল সাহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রোগীর পরিবারকে সচেতন করতে না পারলে উদ্দেশ্য সফল হওয়া সম্ভব নয়৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘রোগীর ব্রেন ডেথ হওয়ার পর তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়৷ শ্বাসপ্রশ্বাস চলতে থাকে৷ রোগীর পরিবারের আশা থাকে, তাঁদের প্রিয় ৭-১০ দিন পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবেন৷ তাই আমরা ব্রেনডেথ ঘোষণা করলাম, আর পরিবার অঙ্গ দিয়ে দিল, ব্যাপারটা এত সোজা নয়৷'' ডাঃ সাহা এমন একাধিক উদাহরণ তুলে ধরেন যেখানে সামাজিক রীতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসের দরুণ রোগীর পরিবার অঙ্গদানে রাজি হয়নি৷ একই সুরে কথা বললেন জেলা হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকও৷ বীরভূম জেলার দুবরাজপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক শুভজিৎ রায় বলেন, ‘‘গ্রামীণ এলাকায় সাধারণ মানুষ স্যানিটারি ন্যাপকিন, পরিচ্ছন্ন শৌচাগার সম্পর্কে ঠিকঠাক ধারণা রাখে না৷ তাদের মরণোত্তর অঙ্গদান নিয়ে কোনো ধারণা নেই৷ যেকোনো আঘাত পেলেই তারা টিটেনাস ইনজেকশন দিতে বলে৷ এগুলি নিয়েই তাদের বোঝাতে বেগ পেতে হয়৷ সেখানে অঙ্গদান অনেক দূরের ব্যাপার৷''

ডাঃ ফুয়াদ হালিম

অর্থাৎ সরকারি চিকিৎসকের মতে, বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে মানসিকতা৷ পরিকাঠামো থাকলেও মানসিকতার বদল না হলে পরিস্থিতি বদল হওয়া মুশকিল৷ এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বামনেতা, চিকিৎসক ফুওয়াদ হালিম৷ তিনি সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘পরিবারকে যদি এটা বলা হয় যে, রোগীর ব্রেন ডেথ হয়েছে, সেটা তারা নিশ্চয়ই বুঝবে৷ সাধারণ মানুষের যুক্তি ও বোধের এতটা অভাব আছে বলে আমার মনে হয় না৷ আসলে সরকারের তরফে আন্তরিক চেষ্টার অভাব রয়েছে৷ আমি রোগীর আত্মীয়দের বোঝাতে অক্ষম, সেই অক্ষমতা ঢাকতে ওদের উপর দোষ চাপাচ্ছি৷''

মরণোত্তর দেহদান নিয়ে ডাঃ হালিমের অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সরকার এখনো পুরো প্রক্রিয়া মসৃণ করতে পারেনি৷ অ্যানাটমি বিভাগে দেহ দিলে ডেথ সার্টিফিকেট দেয় না৷ সেটা পুরসভা থেকে জোগাড় করতে হয়রান হতে হয় রোগীর পরিবারকে৷ আবার বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে অঙ্গ সংগ্রহের খরচও মৃতের পরিবারের দেওয়ার কথা৷ এটাতেও এক ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়৷''

তবে হাল ছাড়তে রাজি নন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা৷ মাখনলাল সাহা বলেন, ‘‘আমাদের অনেক দূর যেতে হবে৷ রোগীর পরিবারকে উৎসাহিত করতে হবে৷ সচেতনতা বাড়ানোই একমাত্র পথ৷'' শুভজিৎ রায় বলেন, ‘‘শুকনো প্রচারে কিছু হবে না৷ দরকার আন্তরিক প্রচার৷ তবেই এগোবে অঙ্গদান আন্দোলন৷''     

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান