বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে চিড়?
১০ নভেম্বর ২০১৬তবে মঙ্গলবারই ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছিলেন, ‘‘বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কোনো পরিবর্তন হবে না৷ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের গভীরতা, ব্যাপ্তি বা গুরুত্ব এত বেশি নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশের নীতির প্রতি নিজেকেই নজর দিতে হবে৷''
সিদ্ধান্ত জানতে আরও সময় লাগবে
সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিক মোহাম্মদ জমির মনে করেন, ‘‘ট্রাম্প অভিবাসীদের ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেন তা বুঝতে আরো সময় লাগবে৷ কারণ তিনি দায়িত্ব নেবেন জানুয়ারিতে৷ তাঁকে প্রধান সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে মেক্সিকোকে নিয়ে৷ সেখান থেকেই অবৈধ অভিবাসী, বিশেষ করে রাজনৈতিক অভিবাসী বেশি এসেছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘ট্রাম্প দেশের উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ সে কারণে তাদের উন্নয়ন ব্যাহত হয় এমন কোনো কাজে সায় দেবেন না বলেছেন৷ এখন কপ-২২ চলছে৷ তিনি জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থ প্রত্যাহারের কথা বলেছেন৷ কিন্তু আমাদের দাবি থাকবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কমানো এবং অভিযোজন খাতে তিনি যেন আরো অর্থ বরাদ্দ করেন৷''
মোহাম্মদ জমির মনে করেন, ‘‘ট্রাম্প যা যা বলেছেন তা করা সব যে সহজ হবে তা নয়৷ কারণ সেখানে সিনেট আছে, হাউজ আছে৷ আর কী হয় তা দেখতে আমাদের আরো কিছুদিন ধৈর্য্য ধরতে হবে৷''
যত গর্জে তত বর্ষে না
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘ট্রাম্প অভিবাসীদের ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত নেন তা নিয়ে বাংলাদেশের আলাদা করে ভাবার কিছু নেই৷ সবার ব্যাপারে যা হবে বাংলাদেশের ব্যাপারেও তাই হবে৷ তিনি ভোটের আগে যে মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রেখেছেন সেটা হয়ত আলাদাভাবে প্রতিফলিত হবেনা৷ তিনি অভিবাসী ইস্যুর সঙ্গেই এটাকে এক করে ফেলবেন৷ আর অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর এই অবস্থানে মার্কিন বেকার বা চাকরি প্রার্থীদের সমর্থন আছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘তবে যত গর্জে তত বর্ষে না৷ এটা রাজনীতির একটা কৌশল, যা আমাদের এই উপমহাদেশেও আছে৷ ভোট টানার জন্য অনেক কথা বলতে হয়, ভোটের পরে তা আর থাকেনা বা কার্যকর করার মতো পরিস্থিতি থাকে না৷''
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক মনে করেন, ‘‘পরিস্থিতিও বদলাচ্ছে৷ ইউরোপ যেমন ব্রেক্সিট এড়াতে পারে না৷ যুক্তরাষ্ট্রেরও অনেক বাস্তবতা এড়ানো সম্ভব নয়৷ বেকারত্ব, মন্দা এখন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক হিসেব পাল্টে দিচ্ছে৷''
মোহাম্মদ জমির ও শান্তনু মজুমদার দুজনেই মনে করেন, মাকিন পররাষ্ট্রনীতি হঠাৎ করে বদলায় না৷ ধারাবাহিকতা থাকে৷ আর ট্রাম্পও সেই ধারাবাহিকতার বাইরে যাবে না৷
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রাম্পকে তাঁর জয়ে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেনে৷ ট্রাম্পকে সস্ত্রীক বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন তিনি৷
হিলারির স্মৃতি এখনও জীবন্ত
বাংলাদেশে প্রথম সফরে হিলারি ক্লিন্টন মার্কিন ফার্স্ট লেডি হিসেবে ১৯৯৫ সালের ৩ এপ্রিল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে মহিষাহাটি গ্রামে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম দেখতে গিয়েছিলেন৷ তারপর থেকেই ওই এলাকার নামকরণ করা হয় ‘হিলারি আদর্শপাড়া'৷ হিলারির সেই সফরের কথা আজও মনে আছে হিলারি আদর্শপাড়ার শেফালী রানীর৷ হিলারি ক্লিন্টন যে এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সে খবর ছিলো তাঁদের কাছে৷ কিন্তু হেরে যাওয়ার খবর পান ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধির কাছে৷ শেফালী রানী ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে বলেন, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম তিনি জিতবেন, জিতলে আবার তিনি আসতেন৷ তিনি না জেতায় খুব খারাপ লাগছে৷'' শেফালী বলেন, ‘‘হিলারী যখন এসেছিলে তখন আমার সঙ্গে কথা বলেছেন, আমার বাচ্চাদের আদর করেছেন৷ তাঁর সঙ্গে আমাদের ছবিও আছে৷ তিনি অনেক ভালো মানুষ৷'' ঐ গ্রামের আরো অনেকের কাছে হিলারির স্মৃতি এখনো জীবন্ত৷ তাঁরা সবাই হিলারির জয়ের আশা করেছিলেন৷ আর জয়ী না হওয়ায় আশাহত হয়েছেন৷
এরপর ২০০০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের আমন্ত্রণে ও ২০১২ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন তিনি৷
বন্ধুদের মিষ্টিমুখ
ঢাকার সাংবাদিক ফাতেমা আবেদীন নাজলা ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের খবরে তাঁর বন্ধুদের মিষ্টিমুখ করিয়েছেন৷ ফাতেমা বলেন, ‘‘আমি ট্রাম্পের সমর্থক নই বা তাঁর জয়ে আনন্দিত হয়ে বন্ধুদের মিষ্টিমুখ করিয়েছি তা নয়, আসলে আমি বলেছিলাম ট্রাম্প জিতবে, তাই হয়েছে৷ এ কারণেই বন্ধুদের রসগোল্লা খাইয়েছি৷'' কেন তিনি ধারণা করেছিলেন যে ট্রাম্প জিতবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়েছে উগ্র জাতীয়তাবাদের যে উত্থান হচ্ছে সেই বিষয়টি ট্রাম্প শুরু থেকেই কাজে লাগিয়েছেন৷ আর তিনি ফল পেয়েছেন৷''
দুই দেশের সম্পর্কের তথ্য
বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ়৷ একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোষাক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে৷ বাংলাদেশ গত বছর মোট ২ হাজার ৬৬০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে৷ এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ২০ শতাংশ বা ৫৪০ কোটি ডলারের পোশাক৷ বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য এবং সন্ত্রাস দমন সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি আছে৷ এই নির্বাচনের আগে আগস্টে ঢাকা সফর করে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি৷ সেই সফর ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করেছে৷
বন্ধু, আপনার কী মনে হয়? ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক কি খারাপ হবে? লিখুন নীচের ঘরে৷