ব্রিকস সম্মেলনে ভারত
৩১ মার্চ ২০১৩দ্বিতীয় লাভ চীনের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন বোঝাপড়ার একটা রোডম্যাপ তৈরি করা৷
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা এই পাঁচটি দেশ নিয়ে গঠিত জোট ব্রিকস-এর সদ্য সমাপ্ত পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং ভারত এই জোট থেকে কতটা লাভ ওঠাতে পেরেছে, সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং নিজে যেটা বলেছেন, তাহলো গত বছর দিল্লিতে ব্রিকস-এর শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিকস উন্নয়ন ব্যাংক গঠনের যে প্রস্তাব ভারত দিয়েছিল, তা বাস্তবায়িত হতে চলেছে৷ এটা ভারতের ভূমিকার একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক৷
বিশ্বব্যাংকের মতো একটা পাল্টা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিকাশমুখী দেশগুলির আর্থিক ঋণ পেতে সহায়ক হবে৷ পশ্চিমা দেশের মদৎপুষ্ট বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবার সুবাদে উন্নত দেশগুলির অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার দিকেই বেশি মনোযোগী৷ সেজন্য ঋণগ্রহীতা দেশগুলির ওপর কিছু শর্ত চাপিয়ে দেয়া হয়৷
স্বার্থ বলতে উন্নত দেশগুলির পণ্য আমদানিতে ঋণ গ্রহীতা দেশগুলির বাধ্যবাধকতা৷ এছাড়া অনগ্রসর দেশগুলির প্রাকৃতিক সম্পদ ভাণ্ডার নিয়ন্ত্রণেরও একটা প্রবণতা থাকে পশ্চিমের উন্নত দেশগুলির৷ মোটকথা উন্নয়নশীল দেশগুলির আশা-আকাঙ্খা পূরণে এবং আর্থিক সংস্কারে ব্যর্থ বিশ্বব্যাংক৷ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ব্যবস্থাপনায় বিকাশমুখী দেশগুলির কোনো ভূমিকা নেই, যেটা চিন্তার কারণ৷
ব্রিকস উন্নয়ন ব্যাংক স্থাপিত হলে উন্নয়নশীল দেশগুলি একটি বিকল্প আর্থিক ব্যবস্থার সুযোগ পাবে৷ ব্রিকসভুক্ত দেশগুলি এই ব্যাংকের সাহায্যে বাণিজ্যিক লেনদেনে ডলার বা ইউরো মতো মুদ্রার আধিপত্য কমিয়ে নিজ নিজ দেশের মুদ্রাকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে৷ কারণ বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বাস করে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলিতে৷ বিশ্বের মোট অভ্যন্তরিণ উৎপাদন, অর্থাৎ মোট জিডিপি-র ২৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় এই দেশগুলিতে৷ চীন ও ভারতের পারস্পরিক বাণিজ্যে রয়েছে সেই বৃদ্ধিরই প্রতিফলন৷ ফলে বিশ্ব ব্যাংকের সমান্তরাল স্তরে উঠে আসবে ব্রিকস উন্নয়ন ব্যাংক যার প্রাথমিক মূলধন হবে দশ হাজার কোটি ডলার৷
ভারতের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় সদর্থক দিক হলো, চীনের নতুন প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং-এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর প্রথম মোলাকাত৷ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চড়াই উতরাই পার করে সুসম্পর্কের একটা রোডম্যাপ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের উদ্বেগের কথা সরাসরি তুলে ধরার সুযোগ হাতছাড়া করেননি তিনি৷ যেমন সম্পর্কের সামগ্রিক অগ্রগতি ছাড়াও সীমান্ত বিরোধ, তিব্বতে ব্রক্ষপুত্রের ওপর বাঁধ প্রকল্প, সামরিক সহযোগিতা ইত্যাদি৷ প্রতিটি বক্তব্যে চীনা প্রেসিডেন্টের উত্তর ইতিবাচক৷ শি চিনপিং ভারত সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে চীন ও ইরানের সঙ্গে ভারতের বেশি মাখামাখি সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনঃপুত নয়৷ কিন্তু ভারত মনে করে এই জোট কোনো আলাদা অক্ষ নয়৷ ভারত সবসময়ই একটা ভারসাম্যের কূটনীতি বজায় রেখে চলে৷ তাই যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি চীনকেও কোনো দেশ অস্বীকার করতে পারে না৷