ডায়াপার ছাড়া বাচ্চা পালন!
১১ আগস্ট ২০১৩সাধারণত নিয়ন্ত্রিতভাবে পেচ্ছাপ বা হিসি করা শেখার আগ পর্যন্ত অধিকাংশ শিশুর গড়ে দুই থেকে তিন হাজার ডায়াপার ব্যবহার করতে হয়৷ তবে জার্মানির কিছু অভিভাবক ডায়াপার ছাড়াই শিশুকে বড় করার চেষ্টা করছেন৷ আশার কথা হচ্ছে, ডায়পার ছাড়াও তাঁদের সন্তানরা কিন্তু পেচ্ছাপ করে বিছানা ভেজাচ্ছে না৷
১৫ মাস বয়সি আলিসার কথাই ধরা যাক৷ তাঁর মা ফ্রেয়ার ডোনারের বয়স ৩০ বছর৷ প্রতিদিন সকালে আলিসাকে বাথরুমের টয়লেটের উপরে নিয়ে যান ডোনার৷ এরপর মুখ দিয়ে ‘লু লু' শব্দ করতে থাকলে হিসি করতে শুরু করে বাচ্চাটা৷
শুধু তাই নয়, ছোট বা বড় ‘প্রাকৃতিক কর্ম' সারার প্রয়োজন পড়লে বিভিন্ন সংকেতও দেয় আলিসা৷ এভাবেই ডায়পার ছাড়াই প্রথম সন্তান পালন করছেন ডোনার এবং তাঁর স্বামী৷ মজার বিষয় হচ্ছে, এমনটা শুধু তাঁরাই করছেন না৷ ফিনল্যান্ড থেকে শুরু করে ইটালি অবধি ইউরোপের অনেক দেশের অভিভাবকরাই এভাবে সন্তান পালন শুরু করেছেন৷
ফ্রেয়ার ডোনারের কাছে অবশ্য শিশুকে ডায়পার না পরানোটা মুখ্য বিষয় ছিল না৷ তিনি চিন্তিত ছিলেন তাঁর সন্তানের কান্না নিয়ে৷ ডোনার বলেন, ‘‘আলিসা খুব কাঁদতো৷ তাই তা নিয়ে ডায়পার ছাড়া শিশু পালন বিষয়ক এক বইয়ের লেখকের সঙ্গে কথা বলি আমি৷ তিনি জানান, শিশুরা কাঁদার মাধ্যমেই (অভিভাবকের সঙ্গে) যোগাযোগের চেষ্টা করে৷''
তিনি বলেন, ‘‘ডায়পার না পরানোর দিন থেকে আলিসা কান্না অনেক কমিয়ে দিয়েছে৷ মনে হচ্ছে, সে এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট৷ আমরা খুব দ্রুত ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছি৷''
নির্দেশ মতো হিসি করা
ডোনার শুধু নিজের বাচ্চাকে ডায়পার না পরিয়েই ক্ষান্ত হননি৷ তিনি অন্য অভিভাবকদেরও এই বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন৷ ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘বেবিস উইদাআউট ডায়াপার্স' নামক একটি সংগঠনের মাধ্যমে এই কাজ করেন ডোনার৷ বার্লিনে সংগঠনটির প্রশিক্ষণেও অংশ নিয়েছেন তিনি৷
অনলাইনে একটি ফোরামের মাধ্যমে ড. হাইনরিশ রাটৎস-এর সঙ্গে পরিচিত হন ডোনার৷ এই চিকিৎসক ২০ বছর ধরে শিশুদের চিকিৎসা করছেন৷ ডায়পারের কারণে শিশুদের শরীরে সৃষ্ট ফুসকুড়ি প্রায় প্রতিদিনই দেখেন তিনি৷ গত চার বছর ধরে শিশুদের ডায়পার না পরাতে অভিভাবকদের উৎসাহিত করছেন এই চিকিৎসক৷
ডয়চে ভেলেকে ড. রাটৎস বলেন, ‘‘ইংরেজিভাষী বিশ্বে এটাকে ‘এলিমিনেশন কমিউনিকেশন' বা ইসি বলা হয়৷ মূলধারার চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বটে, কিন্তু অনেক চিকিৎসক এখন এতে আগ্রহী৷''
ছাত্রজীবনেই ড. রাটৎস জেনেছিলেন যে, পেচ্ছাপের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় একটি শিশুর ২৪ মাসের মতো সময় লাগে৷ কিন্তু ২০০৯ সালে এক শিশু দেখে বিস্মিত হন তিনি৷ ডায়পার পরায় সে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল৷ চিকিৎসক তখন তাকে ডায়পার না পরানোর জন্য তার বাবা-মাকে পরামর্শ দেন৷
ড. রাটৎস বলেন, ‘‘ক্লিনিক থেকে শিশুটির বাড়ির দূরত্ব ছিল গাড়িতে প্রায় এক ঘণ্টার পথ৷ তাই আমি শিশুটির মাকে বলেছিলাম, ক্লিনিক ত্যাগের আগে শিশুটিকে পেচ্ছাপ করানোর চেষ্টা করতে৷ শিশুটি মায়ের নির্দেশে হিসি করেছিল৷''
তবে প্রশ্ন থেকে যায়
জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু ক্লিনিকের পরিচালক ড. রাইনার গানশ্যাও অবশ্য মনে করেন, শিশুদের ডায়পার ব্যবহার না করানোর নেতিবাচক দিকও আছে৷ বিশেষ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকটি এভাবে নিশ্চিত করা কঠিন৷
তিনি বলেন, ‘‘আমি শিশুদের পুরোপুরি বা আংশিক ডায়পার না পরানোটা সমর্থন করলেও মনে করি যে ইসি নিয়ে আমাদের আরো গবেষণা দরকার৷ অধিকাংশ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞই এই পন্থা সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না৷ তাঁদের অভিজ্ঞতারও ঘাটতি রয়েছে৷''
ডোনার এবং তাঁর সন্তান আলিসার মধ্যকার যোগাযোগ কিন্তু চমৎকার৷ আলিসা ডায়পার না পরেই রাতে তার মায়ের পাশে ঘুমায়৷ রাতে হিসি করার প্রয়োজন হলে ঘুম থেকে উঠে বিছানার নীচে থাকা ছোট্ট পাত্রটি বের করে নেয় সে৷ অন্ধকার থাকায় ডোনার তখন তাঁর মেয়েকে সহায়তা করেন৷
ডায়পার ছাড়া শিশুদের বড় করতে জার্মানিতে জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন ডোনার৷ অনেক অভিভাবক এখনো এতে আগ্রহী না হলেও তিনি আশাবাদী৷ ডোনারের কথা হচ্ছে, অভিভাবকদের অন্তত একবার হলেও চেষ্টা করা উচিত৷ এতে ক্ষতি তো কিছু হবে না!