ডিপফেক ভিডিও শনাক্তের সফটওয়্যার সন্ধান
১৫ জুন ২০২১আজকাল শুধু একটা ফটোর সাহায্যেই অত্যন্ত দ্রুত ফেক ভিডিও তৈরি করা যায়৷ সত্যি বিস্ময়কর সেই প্রক্রিয়া৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তিন মিনিটেরও কম সময়ে যে কোনো ফটোকে জীবন্ত করে তুলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব৷ কয়েকটি টাটকা উদাহরণের মাধ্যমে এই প্রযুক্তির ক্ষমতা টের পাওয়া যায়৷
মাল্টি সিগন্যাল প্রসেসিং গ্রুপের তুরাজ এব্রাহিমির বিশেষজ্ঞ টিম এমন ‘ডিপ ফেক' ভিডিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে৷ ভবিষ্যতে এমন প্রযুক্তির প্রয়োজন অনেক বাড়বে৷ এব্রাহিমি বলেন, ‘‘ডিপ ফেক ডিটেক্টর নিখুঁত না হলেও সেগুলি ছড়ানোর আগেই বেশিরভাগ নকল ভিডিও শনাক্ত করতে পারবে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটা হলেই যথেষ্ট৷ তবে সেই সমাধানসূত্র এমন হতে হবে, যাতে সেগুলি ডিপ ফেক প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও সতর্ক হয়ে উঠতে পারে৷''
অর্থনীতি জগতেও ডিপ ফেক নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷ বিমার ক্ষেত্রে প্রতারণার মতো ঘটনা ঘটলে ভুল ছবি শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি৷ গ্রাফিক বিশেষজ্ঞরা ছবির মধ্যে এমন সব সূচক নির্ণয় করার চেষ্টা করছেন, যাতে ডিপ ফেক শনাক্ত করা যায়৷ ইন্টেলিজেন্ট রেকগনিশন সফটওয়্যারে অসংখ্য নকল ছবি ও ভিডিও ঢুকিয়ে অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যগুলি শেখানো হচ্ছে৷ স্পষ্ট ফেক-মার্কার শনাক্ত হলেই লাল চিহ্ন ফুটে ওঠে৷ বোঝা যায়, ছবিতে হেরফের করা হয়েছে৷ এব্রাহিমি বলেন, ‘‘ছয় মাস আগের ডিপ ফেক প্রযুক্তির দিকে ফিরে তাকালে খেয়াল হবে, যে অনেক ভিডিও সহজেই শনাক্ত করা যেত৷ খালি চোখেই গোলমাল ধরা পড়তো৷ আর আজ সেগুলি অনেক বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে৷ কোনো ভিডিও আসল না নকল, তা ধরা কঠিন হয়ে পড়ছে৷ তিন থেকে নয় মাসের মধ্যে ৯৯.৯ শতাংশ মানুষ ফেক ভিডিও দেখলে পার্থক্য বুঝতে পারবেন না৷''
অর্থাৎ তথ্য-পরীক্ষকদের সামনে কঠিন সময় আসছে৷ মিমিকামা নামের এমন এক কোম্পানির জন্য সৌভাগ্যবশত ডিপ ফেক এখনো দৈনন্দিন কাজের অংশ হয়ে ওঠে নি৷ তবে নতুন রেকগনিশন টুল ছাড়া ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে উঠতে পারে৷ মিমিকামার বিশেষজ্ঞ আন্দ্রে ভল্ফ বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও সহজ ও আরও উন্নত হলে আমাদের টুলগুলিও আরও সহজে সেগুলি শনাক্ত করতে পারবে বলে আমার আশা৷''
বিশেষ করে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে এত দ্রুত ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যে ইউজারদের ফ্যাক্ট-চেকারদের নিয়ম জানা জরুরি হয়ে পড়ছে৷ আন্দ্রে ভল্ফ বলেন, ‘‘সবার আগে নিজেকে এবং মিডিয়ার ক্ষেত্রে নিজের অভ্যাস ও আচরণ চেনা জরুরি৷ কারণ যে সব বিষয় মানুষকে নাড়া দেয়, সংবাদের যে সব উৎসের প্রতি যথেষ্ট আস্থা রয়েছে, সেই পরিচিত বলয়ে অঘটন ঘটলে বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়তে পারে৷ তারপর উৎস ভালো করে যাচাই করতে হবে৷ সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে৷ সেটি কীভাবে কাজ করে, ফলাফলের মধ্যে কীভাবে তুলনা করতে হয়, সে সবও জানতে হবে৷ সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ছবি সন্ধান করে যাচাইয়ের পদ্ধতিও রপ্ত করা চাই৷ কোনো কিছুর মাত্রা অস্বাভাবিক মনে হলে সে বিষয়ে অবগত মানুষের মতামত জেনে নিলে ভালো হয়৷''
তবে এভাবে শুধু সতর্ক থাকলেই চলবে না৷ একইসঙ্গে ভুয়া তথ্য সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে৷ ভল্ফ মনে করেন, ‘‘স্কুলেও সেই লক্ষ্যে কিছু হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি৷ তবে একদিকে সেই প্রয়োজনীয়তার কথা বলে অন্যদিকে ফেসবুকে অতিরিক্ত ফেক নিউজ সম্পর্কে অভিযোগ করলে চলবে না৷ কারণ কিশোর-কিশোরীরা মোটেই ফেসবুকে তেমন সক্রিয় নয়৷ ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সিরাই প্রধানত সেটি ব্যবহার করেন৷ অর্থাৎ সমস্যা হলো, প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষা দেবার ক্ষেত্রে যথেষ্ট কাজ হচ্ছে না৷''
অঘটন ঘটে গেলে তবেই এমন ভুল চোখে পড়ে৷
ক্রিস্টিয়ান বাখমান