ডিসিসি নির্বাচন: দক্ষিণে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস
২৯ ডিসেম্বর ২০১৯কোন দল কেমন প্রার্থী দিল, কোন প্রার্থীর চেয়ে কোন প্রার্থী এগিয়ে তা নিয়েই চলছে পর্যালোচনা৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তরের চেয়ে দক্ষিণেই এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বেশি৷
কেন দক্ষিণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হওয়ার আভাস? জবাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার কাছে মনে হয়েছে, দক্ষিণে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে৷ এ এলাকার দু'জনই ভালো ইমেজের প্রার্থী। দু'জনেরই পারিবারিক রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। ইশরাক যেহেতু রাজনীতিতে নতুন তাই তার কোন কলঙ্ক কারো জানা নেই৷ থাকারও কথা না৷ তাছাড়া তার বাবা ছিলেন পুরান ঢাকার একজন জনপ্রিয় মানুষ৷ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন৷ একত্রিত সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন৷ সেটা তার ভোটের মাঠে দারুণভাবে কাজে লাগবে৷ অন্যদিকে আওয়ামী লীগের তাপস তো তিনবারের সংসদ সদস্য৷ তারও খুব একটা দুর্নাম শোনা যায়নি৷ শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে তিনি৷ প্রধানমন্ত্রীর স্বজন৷ ফলে এই ইমেজ কাজে লাগবে৷ তবে আওয়ামী লীগের যে নেগেটিভ দিক সেটা তার উপর পড়বে৷ কারণ এটা দলীয় ভোট৷ আবার বিএনপিকে কতোটা একত্রিতভাবে মাঠে নামাতে পারেন ইশরাক সেটাও দেখার বিষয়৷''
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে দুই দলই আগের প্রার্থী বহাল রেখেছে৷ তবে পরিবর্তন এসেছে দক্ষিণে৷ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন তিনবারের সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন। ইশরাক রাজনীতিতে নতুন মুখ হলেও পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা তিনি৷ আর তাপস দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতির মাঠে আছেন৷
এদিকে উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম৷ আনিসুল হকের মৃত্যুর পর গত এক বছর আগে উপ-নির্বাচনে তিনি মেয়র হন৷ আর বিএনপির প্রার্থী ২০১৫ সালে আনিসুল হকের কাছে হেরে যাওয়া তাবিথ আউয়াল৷ তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ি আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে৷
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি তো মনে করি, দুই দল থেকে যে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে তা খুব একটা খারাপ না৷ দক্ষিণে দুই দল থেকেই অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ও তরুণ নেতৃত্ব এসেছে৷ সেখানে যেই জিতুক তিনি ভালো করার যোগত্যা রাখেন৷ এখন সরকার ও কাউন্সিলররা কতটা সহযোগিতা করবেন তার উপর মেয়রের সাফল্য, ব্যর্থতা নির্ভর করবে৷ কিন্তু এখানে কাউন্সিলররা খুব একটা সক্রিয় নন৷ তারা কর্পোরেশনে আসার চেয়ে নিজের এলাকায় রাজা হয়ে বসে থাকতে বেশি পছন্দ করেন৷ গত এক বছরে দক্ষিণের ৮ জন কাউন্সিলর একবারও নগর ভবনে কোন মিটিংয়ে আসেননি৷ তাই যারা মেয়র হবেন তাদের বলব, কাউন্সিলরদের সক্রিয় করতে হবে৷ তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷''
দক্ষিণে কেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরিবর্তন করল, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কদের বলেছেন, ‘‘নির্বাচনে প্রার্থী ঠিক করতে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে৷ জনগণের কাছে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে৷ কোন প্রার্থী নির্বাচনে জেতার উপযোগী, সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে৷ মনোনয়ন বোর্ডে যারা ছিলেন, তারা প্রার্থীর জনপ্রিয়তার বিষয়টি দেখেছেন৷ প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতার দিক বিবেচনায় নিয়েছেন৷ এটা নিয়ে বাড়তি কিছু বলার নেই৷''
বিএনপির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, দক্ষিনে প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে চায় তারা৷ বিদেশে পড়াশোনা করা ইশরাক পুরান ঢাকার ছেলে। এই এলাকার মানুষের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা আছে। তাছাড়া সাদেক হোসেন খোকাকে ভালবাসা থেকেও তারা ইশরাক ভোট দেবেন৷