ঢাকায় বিহারি ক্যাম্পে হামলা
১৪ জুন ২০১৪নিহতদের মধ্যে দু'টি শিশুও রয়েছে৷ পুলিশ হতাহতের কথা স্বীকার করলেও নিহতের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেনি৷ কারণ স্বজনদের বাধার কারণে পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে পারছে না৷
বিহারি ক্যাম্পের অধিবাসী মো. ইয়াসিনের দাবি, আগুনে তাঁর পরিবারের সাতজন সদস্য নিহত হয়েছেন৷ একজন নিখোঁজ ও আরেকজন আহত হয়েছেন৷ ইয়াসিন জানান তিনি গুলশান ক্লাবে সেলুনে চাকরি করেন৷
নিহতরা হলেন ইয়াসিনের স্ত্রী বেবী (৪০), তিন মেয়ে শাহানা (২৬), আফসানা (১৯) ও রোকসানা (১৬), যমজ দুই ছেলে লালু (১৪) ও ভুলু (১৪) এবং শাহানার ছেলে মারুফ (২)৷
সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ মো. আজাদ (৩৫) নামের একজন বিহারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন৷ নিহত বাকি দুজনের নাম বাবুল ও আশিক বলে জানা গেছে৷
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নয়জনের লাশ বিহারি ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থিত আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ক্যাম্প কার্যালয়ে রাখা হয়েছে৷
মিরপুর জোনের পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদের দাবি, ‘‘বিহারিদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে সংঘর্ষ হয়েছে৷ শবে বরাত উপলক্ষ্যে এক পক্ষ অন্য পক্ষের বাসার সামনে গিয়ে আতশবাজি পোড়ায়৷ একে কেন্দ্র করেই দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷'' তিনি প্রাণহানির কথা স্বীকার করলেও সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি৷ ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘দুই পরিবারের কয়েকজন মারা গেছেন৷ লাশ এখনো উদ্ধার করা যায়নি৷ বিহারিরা লাশ দিতে চাইছে না৷ পুলিশকে অসহযোগিতা করছে৷''
তবে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সাত থেকে ১০ জন নিহত হয়েছেন৷
সংঘর্ষের কারণ নিয়ে পুলিশ ও স্থানীয়দের কথার গড়মিল রয়েছে৷ প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকার লোকজনের ভাষ্য, শবে বরাত উপলক্ষ্যে আতশবাজি পোড়ানোকে কেন্দ্র করে শনিবার ফজরের নামাজের পর বিহারিদের সঙ্গে স্থানীয় বাঙালিদের সংঘর্ষ শুরু হয়৷ থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে৷ সংঘর্ষের এক পর্যায়ে কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পের বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন দেয়া হয়৷
হারিস ও আবু হোসেন নামের দুজন বিহারির দাবি, স্থানীয় বাঙালিদের বাড়িতে বিদ্যুতের লাইন নেয়া নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে৷ পুলিশের উপস্থিতিতে ভোরে স্থানীয় বাঙালিরা প্রথমে বিহারি ক্যাম্পে হামলা করে৷
এদিকে, এ ঘটনায় মো. আসলাম (৫০), বদর উদ্দিন (৪৫), আরজু (১৬) নামে গুলিবিদ্ধ তিন ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি করা হয়েছে৷
এছাড়া ফারজানা নামে এক অগ্নিদগ্ধ নারীও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ তাঁর মুখ, শরীরসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ আগুনে পুড়ে গেছে৷ তিনি মিরপুর-১২'র কুর্মিটোলা ক্যাম্পে বসবাস করেন৷
ফারজানার প্রতিবেশী নুরুদ্দিন জানান, ফারজানার ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে৷ তাঁরা শুনেছেন, ফারজানার মা ও বড় বোনসহ পরিবারের চারজন ঘরে আটকা পড়ে মারা গেছেন৷
বিকেল পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত হয়নি৷ বিভিন্ন অলিগলিতে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ছে বিক্ষুব্ধরা৷ পুলিশও জবাব দিচ্ছে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে৷
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ তাঁরা চাইছেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালে নিয়ে যেতে৷ কিন্তু স্থানীয়রা কিছুতেই প্রশাসনের লোকজনকে কাছে ভিড়তে দিচ্ছে না৷
লাশগুলো রাখা হয়েছে কালশীর মোনাপাড়া বিহারি ক্যাম্পের ভেতরের একটি ক্লাবে৷ শত শত নারী-পুরুষ লাশ ঘিরে রেখেছে৷
পুলিশ সেই ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য বিকেলে অভিযান শুরু করে৷ অভিযানের সময় ২০ জন বিহারি যুবককে আটকের খবর পাওয়া গেছে৷