তথ্যে, পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের অর্থনীতি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সম্প্রতি বলেছেন, অর্থনীতি রক্ষা করতে হলে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে৷ ছবিঘরে তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে৷
রিজার্ভ
বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার জানায়, রিজার্ভের পরিমাণ ২৫.০২ বিলিয়ন ডলার৷ তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, রিজার্ভের পরিমাণ ১৯.৪০ বিলিয়ন ডলার৷ এদিকে, প্রথম আলো মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের কম৷ তবে এই হিসাব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবাদ জানিয়েছে৷
মূল্যস্ফীতি
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস-এর হিসাবে, গত অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.০২ শতাংশ৷ চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সার্বিক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে ছিল৷ আর গত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর - এই তিন মাস ধরে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরে ছিল বলে জানিয়েছে বিবিএস৷ এর মধ্যে অক্টোবরে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ৷
ডলার সংকট
দেশে ডলার-সংকট চলছে৷ যেসব নিত্যপণ্য আমদানি করতে হয়, সেগুলোর ঋণপত্র খুলতে অনেক ব্যবসায়ী নির্ধারিত দামে ডলার কিনতে পারছেন না৷ দিতে হচ্ছে বাড়তি দাম৷ এর প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্যের বাজারে৷ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম মোটামুটি কমে এসেছে৷ কিন্তু ডলারের বাড়তি দামের কারণে খুচরা বাজারে বেড়েছে আমদানি করা নিত্যপণ্যের দাম৷
প্রবাসী আয়
নভেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসীরা ১১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন৷ গত বছর একই সময়ে তারা পাঠিয়েছিলেন ৯২ কোটি ডলার৷ অর্থাৎ ২৩ শতাংশ বেড়েছে৷ তবে তার আগের চার মাসই (জুলাই-অক্টোবর) প্রবাসী আয় গতবছরের তুলনায় কমেছে৷ এ বছর ঐ চার মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৮৭ কোটি ডলার৷ গতবছর সংখ্যাটি ছিল ৭১৮ কোটি ডলার৷
রপ্তানি আয়
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো গত ২ নভেম্বর রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে৷ এতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে ১ হাজার ৭৪৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩.৫২ শতাংশ বেশি৷
খেলাপি ঋণ
২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা৷ আর ১ অক্টোবর প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, জুন মাস শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা৷ অর্থাৎ গত ১৪ বছরে খেলাপি ঋণ প্রায় ৭ গুণ বেড়েছে৷ বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংক খাতে বিতরণ করা ঋণের ১০ ভাগের ১ ভাগই খেলাপি হয়ে গেছে৷ এই হার দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বলে জানা গেছে৷
বিদেশি ঋণ
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে৷ এর মধ্যে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ ৭৯ বিলিয়ন ডলার৷ বাকি ২১ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ নিয়েছে বেসরকারি খাত৷ বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে নেওয়া ঋণের প্রায় ৮৪ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি৷ বাকি ১৬ শতাংশ বা ১৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ স্বল্পমেয়াদি৷
ঋণ পরিশোধ
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণের আসল বাবদ পরিশোধ করেছে ১.৭৩ বিলিয়ন ডলার৷ আগামী অর্থবছরে আসল পরিশোধ করতে হবে ২.৯ বিলিয়ন ডলার, যা পরের অর্থবছর বেড়ে হবে ৩.৩১ বিলিয়ন ডলার৷ এরপর ২০২৭ সাল থেকে রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঋণ ও মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ঋণের আসল পরিশোধ শুরু হবে৷ তখন বার্ষিক আসল পরিশোধ ৪.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার হয়ে যাবে৷