তথ্য জানার অধিকার
৫ জুন ২০১৩রাজনৈতিক দলগুলিকে তথ্য জানার অধিকার আইনের (আরটিএ) আওতায় এনে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন (সিআইসি) সম্প্রতি যে রায় দিয়েছে, তাতে রাজনৈতিক দলগুলির কপালে ভাঁজ৷ বেড়েছে তাদের অস্বস্তি বিশেষ করে বড় বড় দলগুলির৷ বর্তমানে দুর্নীতি ইস্যুতে গোটা দেশ যেভাবে উত্তপ্ত তাতে রাজনৈতিক দলগুলি এই রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি বিষোদগার করতে ভয় পাচ্ছে৷ তবে দলের অন্দরে আইনের ফাঁক-ফোকর নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়ে গেছে৷
ভারতের রাজনৈতিক সিস্টেমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি যেভাবে বাসা বেধেঁছে, এই রায় কী সেটার মোকাবিলা করতে পারবে? এই প্রশ্নে পর্যবেক্ষক মহলে রয়ে গেছে সংশয়৷ রাজনৈতিক দলগুলি যেন তেন প্রকারেণ এই রায়কে পাশ কাটাতে উঠে পড়ে লাগবে৷ রাজনৈতিক অর্থ সাহায্য বা চাঁদা দেয়া একটা অন্ধকার জায়গা৷ সেখানে একটা গ্রহণযোগ্য স্বচ্ছতা আনতে রায়ে বলা হয়েছে, কোন দল কত চাঁদা পায়, কাদের কাছ থেকে পায়, কত দেয়, যারা দেয় তাদের নামধাম জানাতে হবে৷
রাজনৈতিক দলগুলি মনে করে আজকের দিনে নির্বাচনী ব্যের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয় সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন৷ তারপর দলের আয়ব্যয়ের হিসেব পরীক্ষার কোনো যুক্তি নেই৷ তথ্য কমিশন রায় হলো, বড় বড় ছয়টি রাজনৈতিক দল সরকারি অর্থসাহায্যপুষ্ট সংগঠন৷ এছাড়াও সরকার থেকে তারা পায় নামিদামি জমি ও বাড়িঘর এবং আয়করের সুবিধা৷ পায় রেড়িও টিভিতে নিখরচায় নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ৷ কাজেই রাজনৈতিক দলগুলি যেহেতু সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, সেহেতু জনসাধারণের প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য তারা৷ জনসাধারণের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা থেকে যায়, যেহেতু জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজই করে থাকে দলগুলি৷
উল্লেখ্য, জনলোকপাল বিলে এই বিষয়টির ওপর জোর দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলির স্বার্থ যেহেতু অভিন্ন, সেহেতু রাজনৈতিক দলগুলি একে অপরের পিঠ চুলকে এই রাজনৈতিক সংস্কার কার্যকর হতে দেয়নি৷ রাজনৈতিক দলগুলি যেভাবে অলিখিতভাবে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে থাকে বড় বড় করেপোরেট সেক্টর থেকে সেখানেও স্বচ্ছতা আনার কথা বলা হয়েছে রায়ে৷ কর্পোরেট সেক্টর বিনা কারণে রাজনৈতিক দলগুলিকে টাকা দেয়না৷ ক্ষমতায় এলে বাণিজ্যক সংস্থাগুলি তা সুদে আসলে যে উশুল করে নেয়, সেটাও কারো অজানা নয়৷ আর্থিক কেলেঙ্কারি শুরু হয় সেখান থেকেই যা নিয়ে গোটা দেশ আজ জেরবার৷ এখানেই থেমে নেই, এই হিসেব বহির্ভূত অর্থ শেষে কালো টাকা হয়ে বাজারে আসে যার প্রভাব পড়ে দেশের অর্থ ব্যবস্থার ওপর৷