‘তরুণ লেখক প্রকল্প ফের চালুর ইচ্ছা নেই’
১৬ এপ্রিল ২০২১ডয়চে ভেলে: এবার এই করোনার মধ্যেও বই মেলা করে কী লাভ হলো?
হাবীবুল্লাহ সিরাজী: আমরা শুরু থেকেই ভার্চুয়াল করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রকাশকরা বললেন মাঠে মেলা হলে তাদের কিছু আয় হবে। করোনা কমে আসায় আমরা মার্চ-এপ্রিল মিলিয়ে করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করোনা বেড়ে যাওয়ায় ঠিকমতো করা যায়নি। মেলার সাথে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী যোগ করেছিলাম।
তবে লোকসানের দিক হলো এই মেলা চালাতে গিয়ে আমার অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী এখন করোনায় আক্রান্ত। আমাদের সাভাপতিও ( শামসুজ্জামান খান) বই মেলার কারণে নিয়মিত অফিস করতেন। তিনিও করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। আমাদের আরেক সহকর্মী আবু জাফরও করোনায় মারা গেছেন।
আমরা আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। প্রকাশকরাও লাভবান হতে পারেননি। আমরা স্টলের ভাড়ায় শতকরা ৫০ ভাগ ভর্তুকি দিয়েছি।
তারপরও আমরা এই করোনার মধ্যে বই মেলা করতে পেরেছি- এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
এবার নতুন বই কেমন এসেছে?
নতুন বই তেমন আসেনি। গত বছর চার হাজারের বেশি বই এসেছিল। এবার তার অর্ধেক। তবে এই বইগুলো সারাবছর অনলাইনে বিক্রি হবে। এটা একটা ভালো দিক। আর অনলাইনে বিক্রি বাড়ছে। গত বছর বিক্রির শীর্ষে ছিল একটা অনলাইন প্রতিষ্ঠান।
সৃজনশীল বই কম প্রকাশ হয় কেন?
সেটা নির্ভর করে প্রকাশকদের ওপর। তাদের রুচির ওপর। কিছু প্রকাশক আছে, তারা সৃজনশীল বইয়ের বাইরেও শিক্ষামূলক বই, বিনোদনমূল বই প্রকাশ করেন চাহিদার জন্য। তবে সৃজনশীল বইয়েরও চাহিদা আছে। ভালো ব্যবসাও হয়।
ভালো লেখক নেই, ভালো পাঠক নেই- এমন বক্তব্যের জবাবে আপনি কী বলবেন?
আমি এটা মনে করি না। ভালোরও একটা মানদণ্ড আছে। আমাদের মননশীলতার দিক, চর্চার দিকে কিন্তু কমতি নেই। গত এক বছর করোনার কারণে সবকিছুই কিন্তু অন্ধকার। সেখানে শুধু প্রকাশনা শিল্প সচল খাকবে সেটা বলা যায় না।
তরুণ লেখক প্রকল্প কি আবার সচল হবে?
তরুণ লেখক প্রকল্প সচল করার ব্যাপারে আমাদের আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। কিন্তু তরুণদের মেধা ও মননকে কাজে লাগানোর জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা অনুবাদ, ফোকলোর এসব বিষয়ে তরুণদের কাজে লাগাচ্ছি। আর ভাষা সাহিত্য নিয়ে গবেষণার জন্য তরুণদের বৃত্তি দিচ্ছি। বিজ্ঞান বিষয়ক কাজ দেয়া হচ্ছে তাদের। আমি মনে করি, প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহিত্যিক তৈরি সম্ভব নয়। এটা ঠিকও নয়। তবে তাদের বাংলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টা করছি।
সৃজনশীল লেখক-পাঠক কি কমে গেছে?
কিছু পাঠক আছেন বিনোদনের জন্য পাঠ করেন। কিছু পাঠক আছেন অ্যাকাডেমিক কারণে পাঠ করেন। আর কিছু পাঠক আছেন সত্যিকারের জ্ঞান অর্জনের জন্য পাঠ করেন। ওই জ্ঞান অর্জনের অংশটুকু ক্রমান্বয়ে কমে গেছে, কারণ, কর্পোরেট বিশ্বে মানুষ অর্থের পিছনে ছুটছে।
এটা কি লেখকদের জন্যও সত্য?
হ্যাঁ। এটা লেখক- প্রকাশক সবার জন্যই সত্য। বিজ্ঞান চেতনা ও দর্শনের শিক্ষার অভাব আছে আমাদের। তার ফলে এরকম হচেছ। দর্শন আর বিজ্ঞান চেতনার দিকে আমাদের যেতে হবে। বিজ্ঞান ও সাহিত্য একসাথে চলে। তবে এটা একটা নতুন দেশ। ৫০ বছর হয়েছে। আমরা যদি চেষ্টা করি তাহলে সৃজনশীল লেখক, পাঠক তৈরি হবে। তরুণরা এগিয়ে আসবেন। অবস্থার পরিবর্তন হবে।